এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে না। তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে পুনরায় গঠন করতে হবে। একই সঙ্গে সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তবেই নির্বাচনের পরিবেশ হবে। পরিবেশ সৃষ্টি হলেই দেশে নির্বাচন হবে; অন্যথায় কোনো নির্বাচন হবে না।
সোমবার রাজধানীর গুলিস্তানে ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চের সামনে সাত ঘণ্টার প্রতীকী অনশন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। উচ্চ আদালতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতের প্রতিবাদে এবং তার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করে দলটি। রাজধানী ছাড়াও সারা দেশে জেলা সদরে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রতীকী অনশনের এ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়। বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ঢাকায় অনশনে অংশ নেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। এছাড়াও একাত্মতা প্রকাশ করে ২০ দলীয় জোটের নেতারা বক্তৃতা দেন। এদিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদসহ অফিসকর্মীরা বসে অনশনে অংশ নেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর পর বিএনপির এটি দ্বিতীয় প্রতীকী অনশন। এর আগে ১৪ ফেব্র“য়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতীকী অনশনের কর্মসূচি পালন করে দলটি। রাজধানীতে কর্মসূচি উপলক্ষে সকাল ৮টা থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে মহানগর নাট্যমঞ্চের সামনে জড়ো হন। সকাল ৯টার আগেই নাট্যমঞ্চের সামনে মাদুর বিছিয়ে বসে পড়েন হাজার হাজার নেতাকর্মী। ৯টায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতীকী অনশন শুরু হয়। কর্মসূচির পুরো সময়ই খালেদা জিয়াকে ‘গণতন্ত্রের মা’ উল্লেখ করে অবিলম্বে তার মুক্তি চেয়ে স্লোগান দিতে শোনা গেছে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে অনশন কর্মসূচিতে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। কর্মসূচি চলাকালে দু’দফা বৃষ্টি হলেও নেতাকর্মীরা তা উপেক্ষা করে বসে ছিলেন। এ সময় তাদের মাথার ওপর মিছিল নিয়ে আসা ব্যানার, ছাতা ও কলাপাতা ধরে রাখতে দেখা যায়। কর্মসূচি উপলক্ষে সকাল থেকেই মহানগর নাট্যমঞ্চের চারপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুরো সময় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিও লক্ষ করা গেছে।
সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। তার ন্যূনতম প্রাপ্যও তাকে দেয়া হচ্ছে না। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য একটাই। সেটা হচ্ছে- তাকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা, বিএনপিকে নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া।
রাজনৈতিক দলের নেতা ও পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি বা বিএনপি নির্বাচন যাওয়ার জন্য নয়। দেশের ১৬ কোটি মানুষের মুক্তির জন্য, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে স্বৈরাচার সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের ফলের রস পান করিয়ে অনশন ভাঙান। এর আগে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, অনশনে খালেদা জিয়া জয়ী হয়েছেন। সরকার বাধ্য হয়ে বিএনপিকে ছোট একটি মিটিং করার অনুমতি দিয়েছে। এটা শুরু। আপনাদের (বিএনপির) বিরাট জয়ের শুরু।
তিন সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি আশা করি, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয় নেতারা আগামী কয়েকটা দিন এই তিন শহরে কাটাবেন। তবে কোনো চক্রান্তই আপনাদের বিজয় ছিনিয়ে নিতে পারবে না। একই সঙ্গে বলতে চাই, ২০ দলে যারা আছেন তারা অন্যের প্ররোচনায় পড়বেন না। একক প্রার্থী মনোনয়ন দিন; জয় আপনাদের।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার একটাই ষড়যন্ত্র করছে। তারা দেশনেত্রীকে ছাড়া, বিএনপিকে ছাড়া, ২০ দলকে ছাড়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি করতে চায়। ২০১৪ সালের সেই ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের জনগণ আরেকবার বাস্তবায়ন হতে দেবে না। এই স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলনের বিকল্প নেই। তাই রাস্তায় আন্দোলন করেই গণতন্ত্রের মাতাকে মুক্ত করতে হবে। মুক্ত দেশনেত্রীকে নিয়েই আমরা নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করে নির্বাচনে যাব।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, নিু আদালত সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে। এ কারণে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে। তবে আমি এটুকু বলতে পারি, তারা যত কৌশলের আশ্রয় নিক, তাকে আটকে রাখা সম্ভব হবে না। একদিন তাদের কৌশল ও ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়ে যাবে। কোনো একপর্যায়ে গিয়ে তারা দেশনেত্রীকে জামিন না দিয়ে আর পারবে না। আমি আশাবাদী, তিনি আমাদের মধ্যে মুক্ত হয়ে ফিরে আসবেন; খুব শিগগিরই আসবেন। তিনি বলেন, যদি আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি না হয়, তবে একমাত্র বিকল্প হল রাজপথ। এবার প্রস্তুতি নিন কর্মসূচি দেয়া হবে। সেই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। ইনশাল্লাহ আমরা জয়যুক্ত হব।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, পৃথিবীর বহু রাষ্ট্রনায়কের এরকম জেল হয়েছে। আবার মুক্ত হয়েছেন। অনেকে সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্ত হয়েছেন। আজ দেশনেত্রীকে তিলে তিলে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে আমি মনে করি।
অনশনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আমানউল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, জয়নুল আবদিন ফারুক, কবির মুরাদ, আতাউর রহসান ঢালী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শিরিন সুলতানা, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, আমিরুল ইসলাম আলীম, ঢাকা মহানগরের কাজী আবুল বাশার, আহসানউল্লাহ হাসান, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আফরোজা আব্বাস, মোরতাজুল করীম বাদরু, নুরুল ইসলাম নয়ন, আবদুল কাদের ভুঁইয়া, সাদেক আহমেদ খান, হাফেজ এমএ মালেক, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান প্রমুখ।
একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক মজিবুর রহমান, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ ও শাহাদাত হোসেন সেলিম, খেলাফত মজলিশের মাওলানা সৈয়দ মজিবুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করীম, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক আখতার হোসেন খান, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী।