এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : বিপুল নির্বাহী ক্ষমতা নিয়ে আরও পাঁচ বছরের জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নতুন মেয়াদ শুরু করেছেন রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সোমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এরদোয়ান নিজের জামাতা বেরাক আলবাইরাককে তুরস্কের অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
তুরস্কের পার্লামেন্ট দপ্তরে শপথ নেওয়ার পর রাজধানী আঙ্কারায় প্রেসিডেন্টের বাসভবনে উপস্থিত আন্তর্জাতিক নেতা ও কয়েক হাজার অতিথিদের সামনে ভাষণ দেন এরদোয়ান।
ভাষণে ৬৪ বছর বয়সী এ নেতা বলেন, “আমরা, তুর্কি হিসেবে ও তুরস্কের লোক হিসেবে আজ থেকে নতুনভাবে শুরু করছি। আমরা ওই পদ্ধতিকে পেছনে ফেলে আসছি যা অতীতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে আমাদের দেশের অনেক ক্ষতি করেছে।”
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোয়ানের জয়ের মধ্য দিয়ে তুরস্কের ক্ষমতার ভারসাম্যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
পার্লামেন্ট পদ্ধতির শাসনব্যস্থা থেকে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর বিলুপ্ত করা হয়েছে।
এক বছর আগে বিতর্কিত একটি গণভোটের মাধ্যমে এ পরিবর্তনের অনুমোদন আগেই নিয়ে রাখা হয়েছিল। ৯৫ বছর আগে অটোমান সাম্রাজের পতনের পর তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের শুরু থেকে যে শাসনব্যবস্থা অনুসরণ করা হয়েছে এর মাধ্যমে তার অবসান হল।
এখন থেকে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান, উভয় দায়িত্বই পালন করবেন প্রেসিডেন্ট। তিনি পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়াই মন্ত্রিসভা গঠন করবেন, মন্ত্রণালয়গুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের পরিবর্তন করতে পারবেন।
এরদোয়ান বলেন, অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য, ২০১৬ সালের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে সিরিয়া ও ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধ থেকে তুরস্ককে রক্ষার জন্য নির্বাহী ক্ষমতার দিক দিয়ে প্রেসিডেন্টের অনেক বেশি ক্ষমতাশালী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বলে। ভাষণে তিনি ‘শক্তিশালী সরকার ও শক্তিশালী তুরস্ক’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
এরদোয়ান যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করা তার্কিশ এয়ারলাইন্সের সাবেক নির্বাহী ফোয়াত ওকতাইকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হুলুসে আকাসকে নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কভুসগলু অপরিবর্তিত আছেন।
মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী মেহমেত সিমসেক, তাকে এরদোয়ানের আগের সরকারের সবচেয়ে ‘মার্কেট-ফ্রেন্ডলি’ মন্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তাকে বাদ দিয়ে জামাতা আলবাইরাককে নতুন অর্থমন্ত্রী করার পরই তুরস্কের অর্থবাজারে একটি ধাক্কা লেগেছে, নেমে গেছে তুর্কি মুদ্রা লিরার মান।
এরদোয়ানের সমর্থকরা তুরস্কের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তনকে এমন এক নেতার জন্য উপহার হিসেবে বিবেচনা করছেন, যিনি জনজীবনে ইসলামি মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়েছেন, ধর্মভীরু শ্রমজীবী শ্রেণীর পাশে থেকেছেন এবং ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
অপরদিকে এসব পরিবর্তন তুরস্ককে স্বৈরাচারি শাসনের দিকে নিয়ে যাবে বলে সতর্ক করেছে বিরোধীরা। আধুনিক তুরস্কের জনক মুস্তাফা কামাল আতাতুর্কের প্রতিষ্ঠিত ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি করার জন্য এবং এগুলোকে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও বাকস্বাধীনতার মতো বিষয়গুলো থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এরদোয়ানকে অভিযুক্ত করেছেন।