এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : বেলজিয়ামকে ১-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্স। ফ্রান্সের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন স্যামুয়েল উমতিতি। তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল ফ্রান্স।
এর আগে একবারই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছিল বেলজিয়াম। সেটা ১৯৮৬ সালে। সেবার আর্জেন্টিনার কাছে হেরে ফাইনালের স্বপ্ন অধরা রয়ে যায় বেলজিয়ামের। এরপর আর সেমিফাইনালে ওঠার সুযোগ হয়নি। এবার ২০১৮তে এসে ইউরোপের দলটি সেমিতে উঠেছে। বিশ্বকাপজুড়ে বেলজিয়াম দলের সবাই যেভাবে খেলেছে ফাইনালে ওঠার অসাধারণ সুযোগ ছিল তাদের সামনে। কে জানে ইংল্যান্ড কিংবা ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে হয়তো শিরোপাটাও জিতে নিতে পারত বেলজিয়াম! এসবের কিছুই সম্ভব হয়নি ফ্রান্সের স্যামুয়েল উমতিতি আর দেশমের কারণে! বেলজিয়াম-ফ্রান্স সেমিফাইনালে দেশম ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা সাজিয়েছেন। দাবার ঘুটির মতো খেলোয়াড়দের দিয়ে চাল দিয়েছেন। সেটা কাজেও এসেছে উমতিতির হাত ধরে। এই বার্সা ডিফেন্ডারের একমাত্র গোলেই খুন হয়েছে বেলজিয়াম। বেলজিয়ামকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স। হার কী জিনিস সেটা ভুলতেই বসেছিল বেলজিয়াম। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে স্পেনের সঙ্গে এক প্রীতি ম্যাচে হেরেছিল। এরপর আর পরাজয়ের স্বাদ নিতে হয়নি বেলজিয়ানদের। এমন এক ম্যাচে এসে হেরে গেল যে ম্যাচে জয়টা দরকার ছিল খুব করে।
শুরু থেকে প্রথমার্ধের ২৫ মিনিট পর্যন্ত আক্রমণের পসরা সাজিয়ে বসেছিল বেলজিয়াম। একের পর এক আক্রমণে ফ্রান্সের রক্ষণকে মনে হচ্ছিল পথ হারানো নাবিক। রক্ষণ সামলাতে ব্যস্ত দেশমের শিষ্যরা যেন আক্রমণে ওঠার সময়ই (পড়ুন সুযোগ) পাচ্ছিল না। এই সময়ের মধ্যে হাতে গোনা দু একবার বেলিজায়ামের ডিফেন্স ভাঙার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে ফ্রান্স। ১৮ মিনিটে এসে গোলমুখে প্রথম শট নেয় ফ্রান্সের ব্লাইস মাতুইদি। ফ্রান্স খেলায় ফিরে আসে রয়ে-সয়ে। দেশমের পরিকল্পনাটাই ছিল এমন। আক্রমণ ঠিক রেখে পাল্টা আক্রমণে প্রতিপক্ষকে খুন করা। ৪-২-৩-১ ফরমেশনটা সেটাই তো বলছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন ফ্রান্সের খেলোয়াড়েরা।
ষষ্ঠ মিনিটেই ফ্রান্সের ডি-বক্সে হানা দেয় বেলজিয়াম। হ্যাজার্ডের নিচু শট কর্নারের বিনিময়ে ক্লিয়ার করেন উমতিতি। ফ্রান্সকে এক রকম চেপেই ধরেছিল ডি ব্রুইনি ও হ্যাজার্ডের সমন্বিত আক্রমণ। তবে বজ্রপাতের মতো পাল্টা আক্রমণে ফ্রান্সের পগবা ও এমবাপ্পেকেও ভয়ঙ্কর লাগছিল। ১৩ মিনিটে ফ্রান্সের দুই তরুণ ফরোয়ার্ড উসমান ডেম্বেলে ও কিলিয়ান এমবাপ্পের গতিময় আক্রমণের হাত থেকে বেলজিয়ামকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। এগিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলের দখল নেন কোর্তোয়া। পরের মিনিটেই প্রতি আক্রমণে উঠে আসে বেলজিয়াম। এবারও হ্যাজার্ডের মিস। এবার গোলপোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে হ্যাজার্ডের নিচু শটটি চলে গেলে রক্ষা পায় ফ্রান্স। ততক্ষণ পর্যন্ত বেলজিয়ামের গোলমুখে একটাও শট না নেওয়া ফ্রান্সের মাতুইদি ১৮ মিনিটে যে শটটি নিল সেটা কোর্তায়ার গ্লাভসে সহজেই আটকে যায়। পরের মিনিট পাঁচেক কয়েকটি ভালো সুযোগ পায় বেলজিয়াম। সেগুলোর কিছু ফ্রান্সের রক্ষণে আটকে যায় তো কিছু গোলরক্ষক হুগো লরিস আটকে দেন। ছন্দে ফিরে আসতে থাকা ফ্রান্সকেই তখন বেশ রঙিন মনে হচ্ছিল। বেলজিয়ামের গোলের দায়িত্বে থাকা লুকাকু নিজের ছায়া হয়েই থেকেছেন এই ম্যাচে। যার খেসারত দিয়েছে তাঁর দল। একজন ফিনিশার, একটা গোলের জন্য ছিল হাহাকার। তবে ২১ মিনিটে টবি অলডারভেইল্ডের শট ফ্রান্সের গোলরক্ষক লরিস দুর্দান্তভাবে আটকে না দিলে তখনই গোল পেত বেলজিয়াম। প্রথমার্ধে যোগ হওয়া সময়ে ডি ব্রুইনের ক্রস থেকে লুকাকুর অমন মিস বেলজিয়াম সমর্থকদের হৃদয়ে সত্যি রক্ত ঝরিয়েছে।
৫১ মিনিটে এসে বার্সেলোনার ডিফেন্ডার স্যামুয়েল উমতিতির হেডে গোল পায় ফ্রান্স। পুরো খেলায় গ্রিজমান ছিলেন ছন্নছাড়া। প্রথমার্ধে তাঁর এলোমেলো শট, ভুল পাস ভালোই ভুগিয়েছিল ফ্রান্সকে। সেই গ্রিজমানের দুর্দান্ত ক্রস থেকেই হেডে গোল করেন উমতিতি। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে খেলায় গতি পায় ফ্রান্স। ভালো সুযোগ তৈরি করে বেলজিয়ামও। তবে গোল পরিশোধের আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন লুকাকুরা। ফ্রান্সের রক্ষণে বেশ কয়েকবার ভয় ধরিয়ে দিয়েও গোলের দেখা পায়নি বেলজিয়াম।
একজন ফিনিশারের অভাব হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে রেড ডেভিলসরা। ১৯৮৬ সালের পর আরও একবার সেমিফাইনালে উঠে সুযোগ হাতছাড়া করল রবার্তো মার্টিনেজের শিষ্যরা। সেমিফাইনালে বেলজিয়ামকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেল ১৯৯৮’র চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। কে হবে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ, ইংল্যান্ড নাকি ক্রোয়েশিয়া? ঘড়ির কাঁটা কয়েক ঘণ্টা ঘুরলেই সেটা জানা সম্ভব। আপাতত অপেক্ষা…।