এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : আগামী ৩০ জুলাইয়ের ভোট সামনে রেখে অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী এলাকা। মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের পারস্পরিক অভিযোগের পর কোথাও কোথাও উত্তেজনাও তৈরি হয়েছে। বরিশালে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতরে ১১টি, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে উভয় দলের পক্ষ থেকে পরস্পরবিরোধী ৮টি ও সিলেটে ৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যেও গণসংযোগ চলছে পুরোদমে।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে আরও আটটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে নৌকা ও ধানের শীষের পক্ষ থেকে। রোববার নৌকার পক্ষে সাতটি এবং ধানের শীষের পক্ষে একটি অভিযোগ দেয়া হয় রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর ও পুলিশ কমিশনারের কাছে। এতে পরস্পরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া আশ্বাস দিয়েছেন রাজশাহীর রিটার্নিং অফিসার। ধানের শীষ প্রার্থীর বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগের মধ্যে দুটি দিয়েছেন মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নিজেই। পুলিশ কমিশনারের কাছে দেয়া অভিযোগে লিটন বলেছেন, জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীরা সংঘবদ্ধভাবে নৌকার কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। এতে নৌকার কর্মীদের জীবননাশের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্য দিকে বাকি পাঁচটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে রিটার্নিং অফিসারের কাছে। এসব অভিযোগ দিয়েছেন লিটনের আইন সহায়তা উপ-কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মুসাব্বিরুল ইসলাম। রোববার সকালে এসব অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে মুসাব্বিরুল বলেছেন, শনিবার রাত ৮টার দিকে নগরীর বুধপাড়ায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী বুলবুলের পক্ষে বিএনপি ও জামায়াতের চিহ্নিত একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী ভোটারদের বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়ে বলেছেন, ধানের শীষে ভোট না দিলে পরিণতি খারাপ হবে।
১৪ জুলাই সকালে বিএনপি-জামায়াতের কিছু মহিলা কর্মী ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে এলাকাবাসীকে ভয়ভীতি দেখায় এবং নৌকায় ভোট দিলে বস্তি উচ্ছেদ করা হবে বলে হুমকি দেয়। তারা ভোটারদের প্রলোভন দেখায়।
অন্য দিকে নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ডাঁশমারি এলাকায় গত ১৪ জুলাই সকালে জামায়াত বিএনপির একদল নেতাকর্মী ভোটারদের হুমকি দিয়ে বলে যে ডাঁশমারি বিনোদপুরসহ আশপাশের এলাকা বিএনপি জামায়াতের ঘাঁটি। এসব এলাকার ভোটাররা যদি ধানের শীষে ভোট না দেয় তাহলে ভোটের পর ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।
এদিকে শনিবার রাত ৯টার দিকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তেলখাদিয়া ও ডাবতলা এলাকায় ভোটদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিএনপি-জামায়াতের দু’দল নেতাকর্মী বলেন, লিটন ইসলামের শক্র। তাকে ভোট দিলে গুনাহ হবে। এর মধ্য দিয়ে এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টসহ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করা হয়েছে অভিযোগে। এ ছাড়া নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে শনিবার রাতের আঁধারে নৌকা প্রতীকের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা ও এলাকাবাসীকে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে বিএনপির বুলবুল বলেছেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা বরং নৌকা প্রতীকের কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানোর কারণে ধানের শীষের কর্মীরা ঠিকমতো প্রচার চালাতে পারছে না। এসব অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করছি।
অন্য দিকে ধানের শীষের পক্ষে রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করেন দলীয় প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন তপু। অভিযোগে তিনি বলেছেন, শনিবার বিকেলে ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আমানা টাওয়ারের পাশে বোসপাড়া পুরাতন পুলিশ ফাঁড়ির মাঠসংলগ্ন ধানের শীষের নির্বাচনী কার্যালয়ের লাইট, ত্রিপল, বাঁশ ও তিনটি চেয়ার ভাঙচুর করে নৌকা প্রতীকের কর্মীরা। একই ওয়ার্ডে যুবদলের সভাপতি নান্নুর বাসায় গিয়ে তারা জীবননাশের হুমকি দিয়ে আসে। শনিবার রাত ১১টার দিকে হাদির মোড় খাদেমুল ইসলাম মসজিদের সামনে বিএনপির নির্বাচনী কার্যালয়ে গিয়ে ধানের শীষের সমর্থকদের হুমকি দেয় আওয়ামী লীগের লোকজন।
অভিযোগ বলা হয়েছে, ওই রাতেই আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর করে। ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ধানের শীষের প্রচার চালানোর সময় মহিলা কর্মীদের ভিডিও ধারণ ও লাঞ্ছিত করে। অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান বলেন, প্রমাণ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রচারে সরগরম ভোটের মাঠ : অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ থাকলেও নির্বাচনী গণসংযোগ চলছে জোরেশোরে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রোববার দিনভর মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে যান এবং তাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বেলা ১১টায় গণসংযোগে বের হন। বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল প্রায় একই সময়ে প্রচারে নামেন। লিটন দুপুর পর্যন্ত এক নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। বুলবুল নগরীর ৩, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। প্রচারে অংশ নিয়ে লিটন সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে পরাজয় বুঝতে পেরে বিএনপি মিথ্যাচারে নেমেছে। কেন্দ্রীয়ভাবে হয়তো তাদের শিখিয়ে দেয়া হয়েছে যে, প্রতিদিন নির্বাচন কমিশনে একের পর এক অভিযোগ দিতে হবে। বিএনপির অভিযোগ সঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওরা আমার অনেক পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে। কেটে ফেলা হয়েছে আমার বিলবোর্ড। এ ব্যাপারে আমি ইসিতে অভিযোগ দিয়েছি।
এদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আমার পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলছে, ভাংচুর করছে নির্বাচনী অফিস। একই সঙ্গে নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা ও তাদের অযাচিতভাবে গ্রেফতার করছে। এভাবে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছে। প্রচারে বাধাদান ও নারী কর্মীদের অসম্মান করার কথা উল্লেখ করে বুলবুল বলেন, নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। বুলবুলের সঙ্গে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী-৫ আসনের সাবেক এমপি নাদিম মোস্তাফা, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলনসহ অন্য নেতাকর্মীরা।
পুণ্যভূমি সিলেটে সুষ্ঠু ভোটের আশা প্রার্থীদের : সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের। রয়েছে হুমকি ধমকিও। গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মীদের মারধর, প্রচারে বাধা ও পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগও রয়েছে। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই ভোটের মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠলেও রাজনৈতিক সম্প্রীতি ও সিলেটের মতো পুণ্যভূমিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশায় মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা। শনিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতি উৎসাহী তৎপরতা বন্ধ করার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আহবান এবং প্রতিশ্রুতিতে আশার আলো দেখছেন প্রার্থীরা। বিএনপির মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, ৩০ জুলাই ভোটের আগ পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছুই বলা যাবে না। এখন পর্যন্ত পরিবেশ-পরিস্থিতি ভালো। তবে জনগণের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা আছে। আমরা শনিবার ইসিকে সব অবগত করেছি। ইসি কমিশনার সিলেটের পবিত্র মাঠিতে কথা দিয়ে গেছেন। আমাদের আশা তার কথা বাস্তবায়িত হবে, ভোটারদের শঙ্কাও দূর হবে।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেছেন, সুষ্ঠু ভোটের ব্যাপারে কোনো শঙ্কা আছে বলে আমার মনে হয় না। তবে প্রতীক বরাদ্দের পর বিএনপির মধ্যে দুটি মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, শুরু থেকেই পরিবেশ ভালো। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের হুমকি এবং কর্মী-সমর্থকদের বায়োডাটা সংগ্রহ করাসহ নানা অভিযোগ করা হয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। এ পর্যন্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতরে মেয়র প্রার্থীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ করেছেন। ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের তিনটি লিখিত অভিযোগ করেছেন নৌকার প্রার্থীরা। আর নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে দুটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষ থেকে। নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও মহানগর জামায়াতের আমীর অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। ১৩ জুলাই আরিফের পক্ষে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের অভিযোগ হচ্ছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে বিশাল আকারের তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। সেই তোরণের ওপর নৌকার বিশাল প্রতিকৃতি দাঁড় করা হয়েছে, যা আচরণবিধির পরিপন্থী। এ ছাড়া ১১ জুলাই রাত পৌনে ১১টার দিকে নগরীর হাসান মার্কেট এলাকায় ধানের শীষের পোস্টার সাঁটাতে বাধা দেয়া হয়েছে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা ও ধানের শীষের কর্মীদের মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। পরে ছেড়ে দেয়া হয়।
অন্যদিকে, বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পক্ষে ১৩ জুলাই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক দিবাকর ধর রাম। অভিযোগে বলা হয়েছে, বিধি অনুযায়ী একজন মেয়র প্রার্থী তার প্রচারে কেবল এক চোঙ্গার মাইক ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু বিএনপির প্রার্থী সিএনজি অটোরিকশায় দুটি মাইক ব্যবহার করেছেন। একই দিনে কামরানের ব্যক্তিগত সহকারী বদরুল ইসলাম পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগে পৃথক একটি অভিযোগ করেন। ১২ জুলাই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে কামরান ও আরিফের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন জামায়াতের এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের পক্ষে তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর ও ২০ দলীয় জোটের সদস্য সচিব হাফিজ আবদুল হাই হারুন। অভিযোগে বলা হয়েছে, নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীর লোকজন জুবায়েরের টেবিল ঘড়ির কর্মীদের প্রচারে বাধা দেয়া ও তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। জুবায়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে তার কর্মীদের তালিকা করে গ্রেফতারের হুমকি দেয়ার লিখিত অভিযোগ করলেও বিষয়টি মৌখিকভাবে জানান আরিফুল হক চৌধুরী। এসব অভিযোগের ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তার তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা প্রলয় কুমার সাহা বলেন, অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জামায়াত নেতা জুবায়ের যুগান্তরকে জানান, এখন পর্যন্ত পরিবেশ ভালো। শনিবার আমরা নির্বাচন কমিশনারকে সব অভিযোগ জানিয়েছি। কাউন্সিলরদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, কালো টাকার ছড়াছড়ি ছাড়াও ভোটারদের আইডি কার্ড নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমার কর্মীদের নাম-পরিচয় নিয়ে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। তিনি বলেন, সিলেটকে আমরা আধ্যাত্মিক রাজধানী বলে থাকি। অন্য জায়গায় যে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে, সেই ছায়া যেন সিলেটে না পড়ে। বিএনপির বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম বলেন, এখনও সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। তিনি বলেন, আশা করছি নির্বাচন কমিশন পুণ্যভূমির মানুষকে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেবে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মোখলেছুর রহমান কামরান বলেন, ইসিকে জানানোর পর আমার এলাকায় কালো টাকার ছড়াছড়ি বেড়ে গেছে। পুণ্যভূমিতে এর কখনো অন্যায় হয়নি, হবেও না জানিয়ে মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সুদিপ জ্যোতি এষ যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে হয়রানির উদ্দেশ্যেই শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলি ছোড়ে পুলিশ।
হুমকি-ধমকিতে উত্তপ্ত বরিশালের ভোটের মাঠ : হুমকি আর পাল্টা হুমকিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ভোটের মাঠ। গণসংযোগে নেমে বিএনপি মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন। দুই দলের পক্ষ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতরে ১১টি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। উভয় দলের হুমকি পাল্টা হুমকির অভিযোগকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মাঝে কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড এলাকায় গণসংযোগকালে বিএনপির মেয়র প্রার্থী সরোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিভিন্ন ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ধানের শীষের প্রচারে বাধা দেয়া ছাড়াও হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। তারা ১০নং ওয়ার্ডে বিএনপির নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর করেছে। প্রথম থেকেই তারা আচরণবিধির লঙ্ঘন করছে। সরকারি দল মিছিল করছে। বিরোধী দল মিছিল করলেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হচ্ছে। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কাউনিয়া ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ক্ষমতাসীন দল প্রচারে আমাদের বাধা দিয়েছে। প্রশাসন তো বাধা দিয়ে যাচ্ছে। আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই, প্রশাসনের সহায়তা চাই। আমাদের পক্ষে কাউকে ভয়ভীতি দেখানো সম্ভব নয়। কেননা আমরা বিরোধী দলে। তবে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আশাবাদী।’
নির্বাচনী প্রচারের ষষ্ঠ দিনে বিএনপি মেয়র প্রার্থী বেলা ১১টায় পোর্ট এলাকায় গণসংযোগে নামেন এবং তিনি হাটখোলা ও পলাশপুরে ভোট চান। সঙ্গে ছিলেন উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, মহানগর বিএনপি সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিনসহ নেতাকর্মীরা।
এদিকে বরিশাল নগরীর সদর রোডে নির্বাচনী গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে তাদের নেতাকর্মীদের হুমকি দেয়ার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি প্রার্থী সরোয়ারের স্ত্রী নাসিমা সরোয়ার বিভিন্ন জায়গায় গণসংযোগে গিয়ে সাধারণ মানুষ ও আ’লীগ নেতাকর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন। পুলিশের চেক পোস্ট সম্পর্কে সাদিক বলেন, ‘পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদেরও চেক করছেন। বিএনপির অভিযোগকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে সাদিক বলেন, পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছেন। বিএনপির প্রচারে কেউ বাধা দিচ্ছে না। তারা শুধু শুধুই অভিযোগ করে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করছে। বরিশাল নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘বরিশালে ইতিমধ্যেই একটি আইটি পার্ক করার উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে নগরীতে একটি জাদুঘর ও চিড়িয়াখানা করা হবে। প্রচারের সময় তার সঙ্গে ছিলেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু, সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীরসহ নেতাকর্র্মীরা। বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর গীর্জা মহল্লা থেকে গণসংযোগ শুরু করেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। তিনি চকবাজার, কাটপট্টিসহ আশপাশ এলাকায় প্রচার চালান।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক: রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে ৬টি এবং বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের পক্ষে ৫টি লিখিত অভিযোগ রয়েছে। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন খান এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, অভিযোগগুলো পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা যাচাই-বাছাই করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে জানাবেন, পরে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা আ’লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও মেয়র সুভাষ চন্দ্র শীল বলেন, বিএনপির মেয়র প্রার্থী সরোয়ারের অনুসারীরা নানাভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। শনিবারসহ কয়েক দিনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ৬টি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এদিকে রোববার সন্ধ্যায় এসব অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তুলে দেন বিএনপি প্রার্থীর আইন উপদেষ্টা ও মহানগর বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন মন্টু। ৫টি অভিযোগ হচ্ছে নির্বাচনী কাজে সার্কিট হাউস ব্যবহার করা, মন্ত্রী পদমর্যাদার ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশ, বিভিন্ন এলাকায় নৌকার বিলবোর্ড টানানো, রাত ৯টার পরও মাইকিং করা এবং নগরীর ১০নং ওয়ার্ডের নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর।