asianbangla.com

    Subscribe to Updates

    Get the latest creative news from FooBar about art, design and business.

    What's Hot

    রফিকুল টাওয়ার হ্যামলেটসের পাবলিক গভর্নর হিসেবে পুনঃনির্বাচিত

    October 18, 2024

    দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার প্রতিবাদে লন্ডনে ইআরআইয়ের মানববন্ধন

    October 1, 2024

    আইসিটি মন্ত্রণালয়ের বিসিসি এবং এটুআইসহ দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ করে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিল শিক্ষার্থীরা

    August 20, 2024
    Facebook Twitter Instagram
    Trending
    • রফিকুল টাওয়ার হ্যামলেটসের পাবলিক গভর্নর হিসেবে পুনঃনির্বাচিত
    • দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার প্রতিবাদে লন্ডনে ইআরআইয়ের মানববন্ধন
    • আইসিটি মন্ত্রণালয়ের বিসিসি এবং এটুআইসহ দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ করে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিল শিক্ষার্থীরা
    • করিডোর চুক্তি বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে ইআরআইয়ের বিক্ষোভ সমাবেশ
    • ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করতে প্রয়োজন দেশপ্রেমিকদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই : ফাইট ফর রাইট ইন্টারন্যাশনাল 
    • লন্ডনে রাইটস অফ দ্যা পিপলস এর ভারতীয় হাইকিমশন ঘেরাও কর্মসূচি
    • লণ্ডনে জিবিএএইচআর এর ইন্ডিয়ান হাইকমিশন ঘেরাও ও বিক্ষোভ সমাবেশ
    • বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গণমানুষকে সোচ্চার হতে হবে
    Facebook Twitter Instagram
    asianbangla.comasianbangla.com
    Demo
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • বিশ্ব
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • কূটনীতি
    • খেলা
    • প্রযুক্তি
    • সংস্কৃতি
    • উচ্চশিক্ষা
    • প্রবাস
    • মানবাধিকার
    • মতামত
    • সারা বাংলা
      • ঢাকা
      • চট্টগ্রাম
      • রাজশাহী
      • খুলনা
      • বরিশাল
      • ময়মনসিংহ
      • রংপুর
      • সিলেট
    asianbangla.com
    Home»জাতীয়»সাদাসিধে কথা : আমাদের গণিত অলিম্পিয়াড
    জাতীয়

    সাদাসিধে কথা : আমাদের গণিত অলিম্পিয়াড

    By এশিয়ান বাংলাJuly 20, 2018No Comments0 Views
    Facebook Twitter Pinterest LinkedIn WhatsApp Reddit Tumblr Email
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Pinterest Email

    ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল : যদি কাউকে জিজ্ঞেস করা হয় যে দুটি সংখ্যা যোগ করলে হয় দশ, গুণ করলে হয় পঁচিশ সংখ্যা দুটি কত? যে একটুখানি যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ করতে পারে, সেই এক মিনিটের ভেতর সংখ্যা দুটি বের করে ফেলতে পারবে। এখন আমি যদি জিজ্ঞেস করি, দুটি সংখ্যা যোগ করলে হয় দশ কিন্তু গুণ করলে হয় একশ পঁচিশ- সেই সংখ্যা দুটি কত? আমার ধারণা, তাহলে অনেকেই মাথা চুলকে বলবে- এরকম দুটি সংখ্যা সম্ভব না। যারা একটুখানি এলজেবরা শিখেছে, ছোটখাটো সমীকরণ সমাধান করতে পারে; তারা কিন্তু কাগজ-কলম নিয়ে সংখ্যা দুটো বের করে ফেলতে পারবে! শুধু তাই নয়, হয়তো অবাক বিস্ময়ে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের এ সংখ্যা দুটির দিকে তাকিয়ে থাকবে।

    গণিতের ভেতর একটু পরে পরে এরকম একটা কিছু বের হয়ে আসে, যেটার দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। অথচ আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের সারাজীবন বলা হয়েছে- গণিত হচ্ছে রসকষহীন কাঠখোট্টা একটা বিষয়! এটা মুখস্থ করে ফেলতে হয় এবং পরীক্ষায় উগড়ে দিয়ে আসতে হয়।

    গণিতের শিক্ষক যেভাবে শিখিয়ে এসেছেন, হুবহু সেভাবে পরীক্ষার খাতায় লিখে আসতে হবে; নিজের নিয়মে করা যাবে না। কেউ যদি নিজের নিয়মে করতে চায়, তার জন্য রয়েছে বড় বড় গোল্লা। আমরা সেগুলো দেখতাম, শুনতাম এবং বড় বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলতাম। আমাদের দেশে গণিত অলিম্পিয়াড নামে বিশাল দজ্ঞযজ্ঞ শুরু হওয়ার পর আমাদের দুঃখ একটু কমেছে।

    দেশের সব ছেলেমেয়েকে গণিতের এ আনন্দময় জগৎটি আমরা এখনও দেখাতে পারিনি, কিন্তু যারা গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে এসেছে; তারা অন্তত এ রহস্যময় জগৎটির ভেতর উঁকি দিতে পেরেছে।

    এ বছর আমরা প্রথমবার আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড স্বর্ণপদক পেয়েছি; কেউ অস্বীকার করতে পারবে না, এটি আমাদের দেশের জন্য অনেক বড় একটা অর্জন। তাই বলে কেউ যেন মনে না করে, আমরা বুঝি শুধু পদকের জন্য জীবনপাত করি। এটি মোটেও সত্যি নয়। তাহলে আমরা মোটেও একেবারে ক্লাস থ্রি-র ‘গেন্দা গেন্দা’ বাচ্চাদের নিয়ে গণিত অলিম্পিয়াড করতাম না; তাহলে আমরা শুধু কলেজের সত্যিকার প্রতিযোগীদের অল্প কয়েকজনকে ট্রেনিংয়ের পর ট্রেনিং দিয়ে অলিম্পিয়াডে পাঠাতাম। আমরা আসলে পুরো দেশের ছেলেমেয়েদের গণিতকে ভালোবাসতে শেখাই, যেন তারা দেশটাকে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে এগিয়ে নিতে পারে। এর মাঝে যদি মাঝে মাঝে পদক পেয়ে যাই, সেটি বাড়তি পাওয়া।

    এই বছর প্রথমবার স্বর্ণপদক পাওয়ার পর আমাদের সবার এক ধরনের আনন্দ হচ্ছে, ঘুরেফিরে এ আন্দোলনটি কীভাবে গড়ে তোলা হয়েছে, সেটি আমার মনে পড়ছে। চুরানব্বই সালে আমি মাত্র দেশে ফিরে এসেছি, তখন প্রফেসর মোহাম্মদ কায়কোবাদ আমার বাসায় এসেছেন। দুই-চারটি কথা বলার পরই তিনি বললেন, ‘বুঝলেন জাফর ভাই, পৃথিবীর সব দেশের ছেলেমেয়েরা ইন্টারন্যাশনাল ম্যাথ অলিম্পিয়াডে যায়, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা যেতে পারে না। আমাদেরও যেতে হবে!’

    সেই থেকে শুরু। একটা দেশ থেকে আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে কীভাবে টিম পাঠাতে হয়, সেই টিম কীভাবে তৈরি করতে হয়; আমরা তার কিছুই জানি না! প্রথমে চেষ্টা করা হল, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগকে দিয়ে। সেখানকার প্রফেসর গৌরাঙ্গ দেব রায় আমার খুবই বন্ধু মানুষ। তাকে নিয়ে নানা জায়গায় চিঠিপত্র লেখা হল, যোগাযোগ করা হল; কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই করা গেল না। এভাবে বেশ কয়েক বছর কেটে গেছে।

    তখন একদিন প্রফেসর কায়কোবাদ এবং আমি ভাবলাম, সত্যিকারের গণিত অলিম্পিয়াড যদি শুরু করতে নাও পারি; এদেশের ছেলেমেয়েদের গণিতে উৎসাহী করতে শুরু করে দিলে কেমন হয়? আমরা ঠিক করলাম, কোনো একটা পত্রিকায় আমরা প্রতি সপ্তাহে পাঁচটা করে গণিতের সমস্যা দেব- ছেলেমেয়েরা সেগুলো করবে, গণিতকে ভালোবাসবে।

    পরিকল্পনা করে আমরা আর দেরি করলাম না, দু’জনে মিলে তখন-তখনই প্রথম আলো অফিসে হাজির হয়ে সম্পাদক মতিউর রহমানকে বললাম, আপনারা পত্রিকায় বিনোদনের জন্য খেলাধুলার জন্য কতকিছু করেন! গণিতের জন্য একটা কিছু করবেন? সপ্তাহে একদিন পত্রিকার এক কোনায় ছোট একটু জায়গা দেবেন, সেখানে আমরা পাঁচটা করে সমস্যা দেব! সেটাই হবে আমাদের গণিত অলিম্পিয়াড।

    প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলেন এবং সেটাই ছিল গণিত অলিম্পিয়াডের শুরু! আমরা এর নাম দিলাম নিউরনে অনুরণন এবং প্রথম সমস্যাটি ছিল এরকম- একজন লোক তার বাড়ি থেকে উত্তরদিকে দশ মাইল গিয়ে একটা ভালুকের মুখে পড়ল। অনেক কষ্ট করে ভালুকের কবল থেক মুক্তি পেয়ে প্রথমে দশ মাইল দক্ষিণদিকে, তারপর আবার পূর্বদিকে দশ মাইল গিয়ে তার বাড়িতে ফিরে এলো। ভালুকের গায়ের রং কী? নো, এটি তামাশা না, এটি সত্যিকারের একটি সমস্যা।

    আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা নিশ্চয়ই গণিতকে অনেক ভালোবাসে; কারণ আমরা লক্ষ্য করলাম, অনেক ছেলেমেয়ে নিউরনে অনুরণন নামে এ সাপ্তাহিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে শুরু করেছে। তখন গণিত অলিম্পিয়াডের ইতিহাসের দ্বিতীয় এবং সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটল। একদিন আমার বাসায় একজন তরুণ হাজির হয়ে বলল, সে এ গণিত অলিম্পিয়াডটি নিয়ে কাজ করতে চায়। তরুণটির নাম মুনির হাসান।

    এতদিন ধরে আমরা বয়স্ক মানুষরা শুধু কথাবার্তা বলেছি, আলোচনা করেছি, শলা-পরামর্শ করেছি, পরিকল্পনা করেছি; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করতে পারিনি। মুনির হাসান এসেই কাজ শুরু করে দিল। সে ঠিক করল, ছেলেমেয়েদের নিয়ে সে একটা সত্যিকারের গণিত অলিম্পিয়াড করে ফেলবে। কিন্তু সেখানে আসবে কে? মুনির হাসান বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাবা-মায়েদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তাদের বাচ্চা-বাচ্চা ছেলেমেয়েদের ধার নিয়ে এলো, বড় একটা হলঘরে বসিয়ে তাদের নিয়ে সত্যি সত্যি একদিন ছোটখাটো গণিত অলিম্পিয়াড হয়ে গেল। অলিম্পিয়াড শেষে মুনির হাসান আবার বাচ্চাকাচ্চাদের তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে এলো!

    সবাই মিলে তখন ঠিক করা হল, সারা দেশের সবাইকে নিয়ে একটা ন্যাশনাল গণিত অলিম্পিয়াড করা হবে। আয়োজন করা হবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটার নাম কী হবে, সেটা নিয়ে নিজেদের ভেতর ছোটখাটো বিতর্ক হয়ে গেল। আমরা সবাই অঙ্ক বলে অভ্যস্ত, কথায় কথায় বলি অঙ্ক বই, অঙ্ক স্যার, অঙ্ক পরীক্ষা- সেই হিসেবে আমরা কী অঙ্ক অলিম্পিয়াড বলব? নাকি এর নাম হয়ে গণিত অলিম্পিয়াড।

    প্রফেসর গৌরাঙ্গ দেব রায় আমাদের বোঝালেন, বিষয়টির নাম হচ্ছে ‘গণিত’ সমস্যাগুলোকে বলি অঙ্ক। কাজেই এর সঠিক নাম হবে ‘গণিত অলিম্পিয়াড’। অঙ্কের মতো সহজ শব্দের বদল ভারিক্কি গণিত শব্দটি সবাই গ্রহণ করবে কিনা, সেটা নিয়ে আমার নিজের ভেতর একটু সন্দেহ ছিল। কিন্তু দেখা গেল, আমার সন্দেহ পুরোপুরি ভুল; গণিত অলিম্পিয়াড কথাটি সবাই খুব সহজেই মেনে নিয়েছে।

    আমার যতটুকু মনে পড়ে, ২০০২ সালে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডের ঘোষণা দেয়া হল। এই অলিম্পিয়াডে আমাদের সঙ্গে থাকবে প্রথম আলো, সেভাবেই আয়োজন চলছে। অলিম্পিয়াড যখন কাছাকাছি চলে এসেছে, তখন হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্র কারও কাছে টাকা চাওয়ার মতো গ্লানির ব্যাপার আর কী হতে পারে? নিজের জন্য চাইছি না, তারপরও নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। কিন্তু কিছু করার নেই, তাই লজ্জার মাথা খেয়ে ফোন করলাম, ফোনে কাজ হল না এবং তখন আমি খুব একটা নাটকীয় কাজ করে ফেললাম। রেগেমেগে ফোন রেখে দেয়ার আগে ঘোষণা করলাম, যেহেতু গণিত অলিম্পিয়াড করব বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে; আমরা সেটি করেই ছাড়ব। এজন্য টাকা জোগাড় করার জন্য দরকার হলে আমি জমিজমা বিক্রি করে ফেলব।

    আমার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলার সময় আমার স্ত্রী কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল। সে অবাক হয়ে বলল, ‘তুমি জমিজমা বিক্রি করে ফেলবে মানে? তোমার তো কোনো জমিই নেই!’ আমি গলার স্বর আরও উঁচু করে বললাম, ‘আমার জমি নেই তো কী হয়েছে? কায়কোবাদ সাহেবের জমি আছে, সেই জমি বিক্রি করে ফেলব।’

    তবে শেষ পর্যন্ত প্রফেসর কায়কোবাদের জমি বিক্রি করতে হয়নি, প্রথম আলো তাদের দুই লাখ টাকা দিতে রাজি হল এবং আবার প্রথম জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডের কাজ শুরু হল। (আমার স্ত্রী ঠিক করে রেখেছিল, যেদিন আমরা প্রথম স্বর্ণপদক পাব, সেদিন সে সবাইকে আমার নির্বুদ্ধিতার এ গল্পটি শোনাবে! সে যেহেতু নিজের মুখে গল্পটি শোনানোর সুযোগ পায়নি, তার পক্ষ থেকে আমিই গল্পটি শুনিয়ে দিলাম)

    নির্দিষ্ট দিনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক উৎসাহ নিয়ে প্রথম গণিত অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হল। সারা দেশ থেকে ছেলেমেয়েরা এসেছে, ক্যাম্পাসে তাদের র‌্যালির আয়োজন করা হল। বিকালে আমাদের অডিটোরিয়ামে প্রশ্নোত্তর পর্ব। সেখানে গণিত নিয়ে ছেলেমেয়েদের নানা ধরনের প্রশ্ন। একজন জিজ্ঞেস করল, ‘স্যার, তৈলাক্ত বাঁশের একটা অঙ্ক আছে; যেখানে একটা বানর তিন ফুট উপরে উঠে দুই ফুট পিছলে যায়। সেই বাঁশটাতে তেল মাখিয়েছে কে?’ (উত্তর : তোমার মতোই একজন দুষ্টু ছেলে)

    সন্ধ্যাবেলা গণিত অলিম্পিয়াডের ছেলেমেয়েদের জন্য চমৎকার একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল। অতিথিরা বুঝতে পারেনি, কিন্তু আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তখন জামায়াত-বিএনপি সরকার, নাচ-গানকে ভালো চোখে দেখা হয় না। এখন যে রকম ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্যে সবার জীবন দুর্বিষহ, তখন ছাত্রদল-শিবিরের সে রকম দৌরাত্ম্য।

    অনুষ্ঠানের মাঝখানে উদ্ধত ছাত্রনেতারা ঠেলে-ঠুলে ঢুকে সামনে গ্যাট হয়ে বসে গেল। ভাইস চ্যান্সেলরকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে, তার বিন্দুমাত্র সহযোগিতা নেই। গণিতের ওপর বক্তৃতা দিতে হবে- মনে হয়, সেই ভয়ে অনুষ্ঠানেও এলেন না। ভালোয় ভালোয় অনুষ্ঠান হয়ে গেল, আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমরা যারা হাজির ছিলাম, তখন তারা সবাই মিলে আমাদের জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে সভাপতি করে একটা কমিটি করে ফেললাম। যারা প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করেছে, তারা সবাই জানে- তিনি কোনো কমিটির সভাপতি থাকলে কাউকে আর কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হয় না! আমরাও আর চিন্তা করি না।

    কিছুদিনের ভেতরেই ডাচ-বাংলা ব্যাংক আমাদের টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করতে রাজি হল। প্রফেসর কায়কোবাদের জমি বিক্রি করার আর প্রয়োজন নেই। সবাই মিলে তখন পুরো দেশ নিয়ে গণিত অলিম্পিয়াড করার পরিকল্পনা করা হল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আয়োজন করা হলে ছাত্র-মাস্তানরা উৎপাত করতে পারে বলে ভবিষ্যতে শুধু স্কুলগুলোয় আয়োজন করা হবে বলে ঠিক করা হল। তবে আমি মনে করি, আমরা আরও একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিলাম- যেটি মনে হয়, সারা পৃথিবীর আর কোথাও নেই!

    আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে পারে শুধু কলেজের কিংবা স্কুলের বড় ক্লাসের ছেলেমেয়েরা; কিন্তু আমরা আমাদের এই অলিম্পিয়াডটি করব একেবারে ক্লাস থ্রিয়ের বাচ্চা থেকে শুরু করে। যখন কোথাও গণিত অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়, তখন এই ছোট ছোট বাচ্চারা যখন গম্ভীর মুখে হাতে একটা রুলার বা জ্যামিতি বক্স নিয়ে হাজির হয়, সেই দৃশ্য থেকে সুন্দর দৃশ্য পৃথিবীতে আর কিছু হতে পারে না।

    এই বিশাল দজ্ঞযজ্ঞ চালিয়ে নেয়ার জন্য আরও মানুষ দরকার। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, ছোটখাটো কাজ মানুষকে বেতন দিয়ে করিয়ে নেয়া যায়। কিন্তু যদি অনেক বড় কোনো কাজ করতে হয়, তাহলে দরকার ভলান্টিয়ার- যারা কাজ করবে নিজের আনন্দে, নিজের উৎসাহে; একজন তখন দশজনের কাজ করে ফেলবে। আমরা খুব সহজে ভলান্টিয়ার পেয়ে গেলাম। প্রথম আলোর বন্ধুসভার ভলান্টিয়ার এবং গণিত অলিম্পিয়াডের ভলান্টিয়ার- প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরী যাদের নাম দিয়েছেন ‘সুভার্স’।

    এখন দেশব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড শুরু হয়ে গেল। প্রথম প্রথম কেউ ব্যাপারটি জানে না, তাই এটাকে পরিচিত করার জন্য আমরা এক শহর থেকে অন্য শহরে ঘুরে বেড়াই। আমাদের মাঝে প্রফেসর গৌরাঙ্গ দেব রায় সবচেয়ে ঘুমকাতুরে! যখন গভীর রাতে ফিরে আসছি, তখন তিনি মাইক্রোবাসের পেছনের সিটে শুয়ে ঘুমিয়ে যাচ্ছেন। অল্প বয়সে ক্যান্সারে মারা গেছেন; তার অভাবটি খুব অনুভব করি। তাকে অনেক বলে কয়ে গণিতের ওপর একটি বই লিখিয়েছিলাম। বইটার নাম ‘একটুখানি গণিত’ (সময় প্রকাশনী)। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর যদি কোনো ছাত্রছাত্রী দেখে, তার জ্ঞানের ঘাটতি আছে; তখন এই বইটা খুব কাজে লাগে।

    সারা দেশ ঘুরে ঘুরে গণিত অলিম্পিয়াড করে করে এক সময় আবিষ্কার করেছি যে, দেশের মানুষ মোটামুটিভাবে গণিত অলিম্পিয়াডের নাম জেনে গেছে। মুনির হাসান সঞ্চালন করেছে- এরকম একটি গণিত অলিম্পিয়াডে যে ছেলে বা মেয়েটি অংশ নিয়েছে; আমার ধারণা, সে সারাজীবন সেটি মনে রেখেছে। আমরা শুধু যে গণিতের কথা বলেছি, তা নয়; আমরা সেখানে দেশের কথা বলেছি, দেশের মানুষের কথা বলেছি, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলেছি। সব সময় লক্ষ রেখেছি- এ অনুষ্ঠানে আসছে কম বয়সী ছেলেমেয়েরা, তাই তারা যে ধরনের অনুষ্ঠান দেখতে চায়; সেটি উপহার দেয়ার চেষ্ট করা হয়েছে। অনুষ্ঠান শেষে গণ্যমান্য লোকজনদের দাওয়াত দেয়া হতো, বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ পেলে তারা লম্বা লম্বা বক্তৃতা দিয়ে ছোট বাচ্চাদের জীবন অতিষ্ঠ করে ফেলার আশঙ্কা ছিল, কিন্তু সেটি কখনও হয়নি। একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ যখন বক্তৃতা দেয়ার জন্য মাইক্রোফোন নিয়ে দাঁড়াত, তখন মুনির হাসান বাচ্চাদের জিজ্ঞেস করত, ‘ইনি কতক্ষণ বক্তৃতা দেবেন?’ বাচ্চারা উচ্চস্বরে চিৎকার করে বলত, ‘এক মিনিট।’ আমি ঘড়ি ধরে দেখেছি, বাচ্চাদের বেঁধে দেয়া সময়ের আগেই সবাই বক্তৃতা শেষ করে ফেলছেন। কী মজা!

    আমাদের গণিত অলিম্পিয়াড টিমে এক সময় মাহবুব মজুমদার এসে যোগ দিয়েছে। অসাধারণ মেধাবী এ ছেলেটিকে আমি শিশু হিসেবে আমেরিকার সিয়াটল শহরে দেখেছি। বহুকাল পরে তার বাবা যখন আমাকে অনুরোধ করলেন, দেশের কোথাও তাকে সময় কাটানোর ব্যবস্থা করে দিতে; আমি তাকে গণিত অলিম্পিয়াড টিমের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। সেই থেকে সে আমাদের সঙ্গে আছে, সে গণিত অলিম্পিয়াড টিমের কোচ। এ রকম অসাধারণ একজন কোচ আছে বলেই আমরা এত দ্রুত এতগুলো মেডেল পেয়ে যাচ্ছি। আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি- গণিত অলিম্পিয়াডের এই টিমটির কত বড় সৌভাগ্য, ঠিক যখন যে মানুষটির প্রয়োজন; কীভাবে কীভাবে জানি সেই মানুষটি চলে আসছে!

    কয়দিন থেকে খুব ফুরফুরে মেজাজে আছি! বলা যেতে পারে, বাংলাদেশ প্রথমবার সত্যিকারের একটা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ পুরস্কারটি ঘরে এনেছে। অন্য অনেক দেশের সঙ্গে প্রথমবার বাংলাদেশের পতাকাটি সর্বোচ্চ পুরস্কারের সম্মানটি নিয়ে এসেছে এবং সেটি এনেছে একটি কিশোর! আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরীকে অভিনন্দন আমাদের দেশটিকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ আসনে অন্যদের পাশে বসিয়ে দেয়ার জন্য। তার সঙ্গে অন্য যারা ছিল, তাদেরও অভিনন্দন।

    এখন সবার বিশ্বাস হয়েছে তো, আমরা যেটা চাই; সেটাই করতে পারি?

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল : লেখক; অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Telegram Email
    এশিয়ান বাংলা

    Related Posts

    করিডোর চুক্তি বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে ইআরআইয়ের বিক্ষোভ সমাবেশ

    July 9, 2024

    লন্ডনে রাইটস অফ দ্যা পিপলস এর ভারতীয় হাইকিমশন ঘেরাও কর্মসূচি

    May 8, 2024

    লণ্ডনে জিবিএএইচআর এর ইন্ডিয়ান হাইকমিশন ঘেরাও ও বিক্ষোভ সমাবেশ

    April 23, 2024

    Comments are closed.

    Demo
    Top Posts

    আইসিটি মন্ত্রণালয়ের বিসিসি এবং এটুআইসহ দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ করে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিল শিক্ষার্থীরা

    August 20, 202493

    সেনা হত্যার মাধ্যমে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে শেখ হাসিনা

    March 1, 202466

    দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার প্রতিবাদে লন্ডনে ইআরআইয়ের মানববন্ধন

    October 1, 202441

    বাংলাদেশ নতুন নির্বাচনের দাবীতে লন্ডনে ইআরআইয়ের মানব বন্ধন

    February 19, 202437
    Don't Miss

    রফিকুল টাওয়ার হ্যামলেটসের পাবলিক গভর্নর হিসেবে পুনঃনির্বাচিত

    By এশিয়ান বাংলাOctober 18, 20242

    স্টাফ রিপোর্টার  টাওয়ার হ্যামলেটসের জন্য ইস্ট লন্ডন ফাউন্ডেশন ট্রাস্টে (ইএলএফটি) তাদের পাবলিক গভর্নর হিসেবে রফিকুল…

    দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার প্রতিবাদে লন্ডনে ইআরআইয়ের মানববন্ধন

    October 1, 2024

    আইসিটি মন্ত্রণালয়ের বিসিসি এবং এটুআইসহ দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ করে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিল শিক্ষার্থীরা

    August 20, 2024

    করিডোর চুক্তি বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে ইআরআইয়ের বিক্ষোভ সমাবেশ

    July 9, 2024
    Stay In Touch
    • Facebook
    • Twitter
    • Pinterest
    • Instagram
    • YouTube
    • Vimeo

    Subscribe to Updates

    Get the latest creative news from SmartMag about art & design.

    Demo
    Facebook Twitter Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp TikTok
    © 2025 AsianBangla. Designed by AsianBangla.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Go to mobile version