এশিয়ান বাংলা, সিলেট : কয়লার অভাবে বন্ধ হতে চলেছে দেশের উত্তরাঞ্চলের একমাত্র কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। তিনটি ইউনিটে ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার অভাবে ইতিমধ্যে দুটি ইউনিট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর একটি ইউনিট থেকে ২৭৫ মেগাওয়াটের স্থলে উৎপন্ন হচ্ছে মাত্র ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কয়লার অভাবে এটিও যে কোনো মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সংকটের বিষয়টি শনিবার স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও। তিনি বলেছেন, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের ‘শিফট পরিবর্তন’ হওয়ার কারণে আগামী কয়েক মাস উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা হতে পারে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো) মিলনায়তনে শনিবার বাপবিবোর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মহাব্যবস্থাপক সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান জানান, তিনটি ইউনিট চালু রাখতে দৈনিক ৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন। কিন্তু বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি চলতি জুলাই মাস থেকে সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় বন্ধ হয়ে যায় ১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ইউনিট। একই কারণে আগেই বন্ধ হয়ে যায় ১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন আরেকটি ইউনিট। ২৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন তৃতীয় ইউনিটটি কোনোরকমে চালু রাখা হয়। তিনি জানান, বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দৈনিক কয়লা সরবরাহ করছে মাত্র ৫শ’ থেকে ৬শ’ টন কয়লা। এতে তৃতীয় ইউনিটটিও চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ইউনিট থেকে এখন উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। যে কোনো মুহূর্তে এটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অথচ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালাতে দৈনিক ৫ হাজার ২০০ টন কয়লা দরকার।
জানা গেছে, একটি স্টোপ থেকে নতুন স্টোপে যন্ত্রপাতি স্থানান্তরের জন্য ১৬ জুন থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। পুনরায় কয়লা উত্তোলন শুরু হবে আগামী মাসের শেষের দিকে। ২০ জুন খনি কর্তৃপক্ষ পিডিবিকে নিশ্চিত করে, খনির কোল ইয়ার্ডে ১ লাখ ৮০ হাজার টন কয়লা মজুদ রয়েছে। ওই কয়লা দিয়ে আগস্ট মাস বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সচল রাখা যাবে। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকেই হঠাৎ কয়লার সরবরাহ কমিয়ে দেয় খনি কর্তৃপক্ষ।
কয়লাখনি সূত্রে জানা যায়, খনির কোল ইয়ার্ডে বর্তমানে দেড় লাখ টন কয়লা মজুদ থাকার কথা। কিন্তু শনিবার খনির কোল ইয়ার্ডে দেখা যায় কয়লা মজুদ রয়েছে মাত্র ৪-৫ হাজার টন কয়লা। বাকি ১ লাখ ৪০ হাজার টন কয়লার কোনো হদিস নেই। কয়লার অভাবে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়ায় পেট্রোবাংলা ও খনি কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। এ ঘটনায় ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় পেট্রোবাংলা এক অফিস আদেশে খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপমহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমদকে অপসারণ করে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দফতরে সংযুক্ত করা হয়। মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কোম্পানি সচিব) আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড সিরাজগঞ্জে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়। বড়পুকুরিয়া খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার পরিচালক আইয়ুব খানকে।
মজুদের কথা না ভেবেই বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির বর্তমান প্রশাসন কিছু ব্যবসায়ীর কাছে অস্বাভাবিক হারে কয়লা বিক্রি করে। এ নিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীরা ক্ষোভও প্রকাশ করে। কয়লা বিক্রিতে খনি কর্তৃপক্ষের অনিয়-দুর্নীতি নিয়ে পত্রিকায় খবরও প্রকাশিত হয়।