এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : গুপ্তধনের খোঁজে রাজধানীর মিরপুর-১০ এর একটি বাড়ির মেঝেতে প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। কিন্তু কোনো গুপ্তধনের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ঘরের কাঠামো দুর্বল হওয়ায় খোঁড়াখুঁড়ির কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। শনিবার ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুজ্জামানের উপস্থিতিতে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। এদিকে বাড়িটি ঘিরে সকাল থেকে উৎসুক মানুষ ভিড় করে।
মিরপুর-১০ সি ব্লকের ১৬ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর একতলা বাড়িতে গুপ্তধন রয়েছে- এমন সন্দেহে ২০ জন শ্রমিক খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে। দুই কাঠা জমির ওপর নির্মিত টিনশেড বাড়ির সাতটি কক্ষের মধ্যে দুটি কক্ষে প্রায় চার ফুট গভীর খনন করেন তারা। এই দুই কক্ষে গুপ্তধন থাকার সন্দেহে তারা শাবল, কোদাল দিয়ে খনন করেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত খনন কাজ চলার পর সেখান থেকে গুপ্তধন বা মূল্যবান কোনো বস্তু পাওয়া যায়নি। সকাল থেকে মিরপুরে ওই বাড়ির দু’পাশের রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে জনসাধারণের চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এরপর পুলিশি পাহারায় খনন কাজ শুরু হয়।
বিকাল ৪টার দিকে খনন কাজ বন্ধ করে ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুজ্জামান বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে খননের ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বাড়ির অবকাঠামো বেশ দুর্বল। খনন কাজ করা হলে ঘরগুলো ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই খনন কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। বাড়ির মালিক মনিরুল আলম জানান, তার বাড়ি থেকে গুপ্তধন পাওয়া গেলে সেগুলোর প্রতি তার কোনো দাবি নেই। ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ২০১০ সালে সেলিম রেজা নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাড়িটি তিনি কিনেছেন। বাড়ি দেখাশোনার জন্য শফিকুল ইসলাম এবং সুমন নামে দুজন তত্ত্বাবধায়ক রেখেছেন। বাড়িটির কয়েকটি কক্ষ আগে ভাড়া দেয়া ছিল। তবে এটি ভেঙে নতুন করে বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ায় ভাড়াটিয়াদের উঠিয়ে দেয়া হয়। এরই মধ্যে ১২ জুলাই রাত ১১টার দিকে দুই ব্যক্তি বাড়িটিতে প্রবেশের চেষ্টা করে। এজন্য তারা তত্ত্বাবধায়কদের আর্থিক প্রলোভনও দেখায়। বাড়ির নিচে গুপ্তধন রয়েছে বলে তারা জানান। তাদের মধ্যে আবু তৈয়ব নামের এক ব্যক্তি ছিলেন।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাদন ফকির বলেন, মিরপুরের বাড়িটিতে গুপ্তধন রয়েছে জানিয়ে আবু তৈয়ব নামের এক ব্যক্তি ১০ জুলাই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর ১৪ জুলাই বাড়ির মালিক মনিরুল আলম থানায় আরেকটি জিডি করেন। বিষয়টি ঢাকা জেলা প্রশাসনকে জানানোর পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বাড়ির মাটি খনন কাজ চালানো হয়।
মনিরুল আলমের করা জিডিতে বলা হয়, তার বাসার মাটির নিচে গুপ্তধন রয়েছে বলে এলাকার লোকজনের মধ্যে জনশ্রুতি রয়েছে। এ কারণে বাড়িটির সামনে প্রতিদিন লোকজন ভিড় করছে। যে কোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। জনশ্রুতি অনুযায়ী বাড়ির মাটির নিচে গুপ্তধন রয়েছে। তাই তার বাড়িতে খননে তার কোনো আপত্তি নেই। খননের খরচও তিনি বহন করতে চান এবং গুপ্তধন পাওয়া গেলে তা বিধি মোতাবেক সরকারি কোষাগারে জমা দেবেন।
ডিজির পর এক সপ্তাহ ধরে মিরপুরে গুঞ্জন ছড়ায়- বাড়ির মাটির নিচে ‘গুপ্তধন’ থাকার কথা। বলা হয়, সেখানে স্বর্ণালঙ্কার ও দামি নানান জিনিসপত্র রয়েছে। পুলিশ বাড়িটিতে দিনরাত পাহারা দেয়া শুরু করলে এ গুঞ্জনের পালে হাওয়া লাগে। শেষ পর্যন্ত গুপ্তধনের রহস্য উন্মোচন করতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর ও আদালতের শরণাপন্ন হয় মিরপুর থানা পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দা তৌফিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি খুবই মজার মনে হয়েছে। এ জন্য নজর রাখছি সেখানে কী পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, মনে হয় বাড়িটির ওপর কোনো প্রভাবশালীর নজর পড়েছে। বাড়িটি দখলে নিতে পাঁয়তারা করা হচ্ছে।