এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ইকুয়েডর অচিরেই জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে দেওয়া রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাহার করতে পারে বলে আভাস দিয়েছে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত সে দেশের দূতাবাসে অবস্থানরত উইকিলিকস-এর প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জকে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে ইকুয়েডর ও যুক্তরাজ্যের সমঝোতার খবর দিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইন্টারসেপ্ট। চলতি সপ্তাহেই অ্যাসাঞ্জ গ্রেফতার হতে পারেন বলে আভাস দিয়েছে তারা। স্থানীয় ব্রিটিশ পত্রিকার বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইউএসএ টুডে জানিয়েছে, গত সপ্তাহে একজন ব্রিটিশ মন্ত্রী আর সে দেশের কর্মকর্তারা অ্যসাঞ্জের ভাগ্য নির্ধারণী বৈঠক করেছেন। রাষ্ট্রীয় রাশিয়ান টেলিভিশন আরটির পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, কয়েকদিনের মধ্যে অ্যাসাঞ্জকে ব্রিটিশ সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে। আর একজন ব্রিটিশ মন্ত্রী শনিবার বলেছেন, দূতাবাস থেকে বের হলেই অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতার করবে পুলিশ।
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ
সুইডেনে দুই নারীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠার পর ২০১২ সালের জুন থেকে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসের আশ্রয়ে আছেন অ্যাসাঞ্জ। তবে ধর্ষণের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন তিনি। অ্যাসাঞ্জের আশঙ্কা, তিনি সুইডেনে গেলে সুইডিশ সরকার তাকে গ্রেফতার করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে প্রত্যর্পণ করবে। আর যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বিচারের নামে মৃত্যুদণ্ড দেবে। ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে বের হলে সুইডেন বা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে প্রত্যর্পণ না করার নিশ্চয়তা চান অ্যাসাঞ্জ। গত বছর সুইডিশ প্রসিকিউটররা ওই অভিযোগের তদন্ত বন্ধ করে দেন। তবে জামিনের শর্ত ভঙ্গ করায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
চলতি বছর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে অ্যাসাঞ্জ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইকুয়েডরকে চাপ প্রয়োগের খবর মেলে। এই সপ্তাহে ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মরেনো’র লন্ডন সফরকে কেন্দ্র করে আবারও আলোচনায় উঠে আসে অ্যাসাঞ্জের নাম। ক্ষমতার আসার এক পর্যায়ে অ্যাসাঞ্জকে একজন হ্যাকার এবং উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সমস্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন লেনিন মরেনো। উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতার ব্যাপারে তার অস্বস্তি স্পষ্ট করেন তিনি। । সাড়া জাগানো মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইন্টারসেপ্ট বলছে, শুক্রবারে ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মরেনো’র লন্ডন সফরের দৃশ্যমান কারণ ছিল গ্লোবাল ডিসাবিলিটি সম্মেলনে অংশ নেওয়া। তবে তার সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে অ্যাসাঞ্জের রাজনৈতিক আশ্রয়ের সুরক্ষা প্রত্যাহার করা। পাশাপাশি তাকে ব্রিটিশ সরকারের হাতে তুলে দেওয়া।
ইকুয়েডর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রেসিডেন্ট দফতরের নির্ভরযো্গ্য সূত্রকে উদ্ধৃত করে ইন্টারসেপ্ট বলছে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অ্যাসাঞ্জকে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে ইকুয়েডর আর যুক্তরাজ্যের মধ্যে একটি সমঝোতা এখনও সম্পন্ন না হয়ে থাকলে অন্তত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানায়, কয়েকদিনের মধ্যেই ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে অ্যাসাঞ্জকে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত। সংবাদমাধ্যমটির প্রধান সম্পাদক এক টুইটে বলেন, ‘আমার সূত্ররা জানিয়েছে যে কয়েকদিনের মধ্যেই জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ব্রিটিশ সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আমি খুব চাইছি যে আমার সূত্র ভুল হোক।’
লেনিন মোরেনে ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরই পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে থাকে। অ্যাসাঞ্জ একটি ‘সমস্যার নাম’ আখ্যা দিয়ে বিগত কয়েকমাসে অ্যাসাঞ্জকে নিয়ে কয়েকবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ইকুয়েডর। মার্চ থেকে তার ইন্টারনেট ব্যবহারও বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বাইরের বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন তিনি। ইন্টারসেপ্ট-এর প্রতিবেদন বলছে, মাদ্রিদ সফরেও যাওয়ার কথা রয়েছে মোরেনের। সেখানে স্পেনের নেতৃত্বের সঙ্গে অ্যাসাঞ্জের ব্যাপারে আলাপ করবেন তিনি। মাস দুয়েক আগে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান খবর প্রকাশ করে, ক্যাটালেনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে অ্যাসাঞ্জ সেখানকার স্বাধীনতাপন্থী একজন ব্যবসায়ী ও প্রকাশক এবং একজন অনলাইন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেন। এতে স্পেন ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। স্পেনের সঙ্গে ইকুয়েডরের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যেন অবনতি না ঘটে, তা নিশ্চিতেই মোরেনে সেখানে যাবেন বলে আভাস দিয়েছে ইন্টারসেপ্ট।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইউএসএ টুডের এক প্রতিবেদনে টাইমস অব লন্ডন পত্রিকাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, সামনের সপ্তাহেই অ্যাসাঞ্জকে বের করে দেওয়া হতে পারে। সুইডেন সেই ধর্ষণ অভিযোগ তুলে নিলেও দূতাবাস ত্যাগ করেননি অ্যাসাঞ্জ। তার আশঙ্কা, বের হলেই ব্রিটিশ সরকার তাকে গ্রেফতার করে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিবে। ২০১২ সালের আগে থেকে গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন নথি ফাঁস করা ছাড়াও ২০১৬ সালে দেশটির নির্বাচনে রুশ সংযোগ নিয়েও কিছু নথি প্রকাশ করেছেন তিনি। ফলে সেই ইস্যু তদন্ত করা হোয়াইট হাউসের বিশেষ কাউন্সেল রবার্ট মুলারও অ্যাসাঞ্জের ব্যাপারে আগ্রহী।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট শুক্রবার বলেছেন, যুক্তরাজ্যের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেওয়া উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ দূতাবাসের দরজা থেকে বের হতে পারেন। তবে বের হওয়া মাত্রই পুলিশের কাছ থেকে ‘উষ্ণ অভ্যর্থনা’ পাবেন তিনি। তিনি বলেন, অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আমরা তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে চাই। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব লন্ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো,গত সপ্তাহে ব্রিটিশ মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র্র কর্মকর্তারা অ্যাসাঞ্জ ইস্যু নিয়ে আলোচানায় বসেছিলো।
কয়েক বছর ধরে যুক্তরাজ্যের ফেডারেল পুলিশ ইকুয়েডরের দূতাবাসের বাইরে সার্বক্ষণিক নজরদারি চালু রেখেছিল। ২০১৫ সালের জুনে পুলিশের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী মধ্য লন্ডনের ওই দূতাবাসে নজরদারি করতে তাদের খরচ হয় ১১ দশমিক ১ মিলিয়ন ইউরো। এর চার মাস বাদেই ২৪ ঘণ্টার নজরদারি তুলে নেওয়া হয়। চলতি বছরের জুন মাসে খবর প্রকাশিত হয়, ভয়াবহভাবে ‘ভেঙে পড়েছে’ তার স্বাস্থ্য। অ্যাসাঞ্জ সে সময় জানান, দূতাবাসে দীর্ঘদিন ধরে আশ্রিত অবস্থায় থাকার ফলে তার শারীরিক অবস্থার ওপর ‘ভয়াবহ প্রভাব’ পড়ছে। ফলে তিনি বিষয়টিতে হস্তক্ষেপের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অ্যাসাঞ্জকে মুক্তভাবে চলাফেরার সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মত দেয় জাতিসংঘের আইনি প্যানেল। সেই সঙ্গে এতোদিন ‘স্বাধীনতাবঞ্চিত’ করে রাখার কারণে তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও সুপারিশ করা হয়। আটক রাখার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে অ্যাসাঞ্জের আবেদনের প্রেক্ষিতে করা তদন্তের বিস্তারিত জানাতে গিয়ে এমন মত দেয় তারা।