এশিয়ান বাংলা, সিলেট : সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জোটের শরিকদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ বিএনপি। জোটের বৈঠকে বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে ১৯ দলের সমর্থনের সিদ্ধান্ত হলেও তা মানছে না বেশ কয়েকটি দল। জোটের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপির স্থানীয় নেতারা জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। বিষয়টি এরই মধ্যে এসব দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নজরে আনা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। বিএনপি নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের আচরণ জোটে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করবে।
এ ব্যাপারে লেবার পার্টির (একাংশ) কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ১৯ দল সিলেটে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে- এমনটাই জোটের সিদ্ধান্ত। তবে বাস্তবতা হল, সিলেটে শুধু লেবার পার্টি নয় আরও বেশ কয়েকটি শরিক দলও জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। এ নিয়ে লেবার পার্টির সিলেট জেলার এক নেতাকে শোকজও করা হয়েছে।
এনডিপির কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা বলেন, আমাদের দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে নেতাকর্মীরা কাজ করবেন। আমরা ধানের শীষকে সমর্থন দিয়েছি। দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যদি এনডিপির কোনো নেতা কাজ করেন, তাহলে তাকে বহিষ্কার করা হবে।
বিএনপির সিলেট নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিলেট সিটি নির্বাচনে ১৯ দল বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থন করেছে এবং তার প্রচারে অংশ নিবে, এটা জোটের সিদ্ধান্ত। এখন সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যদি জোটের কোনো দল জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে, তা দুঃখজনক।
বৃহস্পতিবার সিলেটে জামায়াত প্রার্থীর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে জোটের শরিক দলগুলোর স্থানীয় নেতাদের উপস্থিতি বিএনপি নেতাদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়েছে। জামায়াত প্রার্থী এহসানুল মাহবুবের ইশতেহার ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন লেবার পার্টির মহানগর সভাপতি মাহবুবুর রহমান খালেদ, বিজেপির (পার্থ) মহানগরের সদস্য সচিব নুরুল আম্বিয়া রিপন, ইসলামী ঐক্যজোটের মহানগরের সভাপতি জহুরুল ইসলাম, জাগপা মহানগরের সভাপতি শাহজাহান কবীর রিপন, এনডিপি জেলার সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান প্রমুখ। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপির দুইজন কেন্দ্রীয় নেতা সংশ্লিষ্ট শরিক দলের নেতাদের কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, কয়েকটি শরিক দল নিয়ে আগেই সন্দেহ ছিল। কেননা তারা জামায়াতঘেঁষা দল। তাদের সন্দেহ সত্যি হয় যখন ওই শরিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা সিলেটে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে যেতে অনীহা প্রকাশ করেন।
১৪ জুলাই গুলশান কার্যালয়ে জোটের সর্বশেষ বৈঠকে সিলেট সিটি নির্বাচনে জামায়াতের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে বেশ কয়েকটি শরিক দল প্রচার চালাচ্ছে- এমন অভিযোগ করেন শরিক দলেরই এক নেতা। এ নিয়ে ওই বৈঠকে বিএনপি নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের আচরণ জোটে ঐক্য থাকার ব্যাপারে বিঘ্ন ঘটাবে। জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্যও অনুরোধ জানান তারা। ওই বৈঠকে শরিক দলের কয়েকজন নেতা বিএনপি নেতাদের জানান, স্থানীয়ভাবে দলের নেতারা জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলেও তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না। কেন্দ্র থেকে তাদের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। পরে বৈঠকে শরিক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটসহ তিন সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। এমনকি জোটের ঐক্য অটুট রাখার বিষয়েও জোটের সব নেতা একমত পোষণ করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, জোটের সর্বশেষ বৈঠকের পর স্বাভাবিকভাবে আমরা ভেবেছিলাম সিলেটের বিষয়টি সমাধান হয়েছে। ১৭ জুলাই দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা সিলেট সফরে গিয়ে ফের কেন্দ্রকে জানান, সেখানে জোটের বেশ কয়েকটি দল এখনও জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে রয়েছেন। পরে এ নিয়ে জোটের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানসহ দলের আরও একজন নেতা ওইসব শরিক দলের সঙ্গে কথাও বলেন। কিন্তু শরিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের জানান, স্থানীয় নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য।
স্থায়ী কমিটির ওই সদস্য জানান, সিলেটে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির স্থানীয় নেতারাও শুরুতে জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন- এমন অভিযোগও তারা পেয়েছিলেন। পরে বিষয়টি দলটির সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদকে জানানো হলে তিনি বিষয়টি সুরাহা করেন। এমনকি তিনি নিজেও সিলেটে গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন।