এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১২ সালের হিসাবে (যা ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে) বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর শুধু নতুন ক্যানসার রোগীর সংখ্যাই প্রায় ১৪ মিলিয়ন । প্রায় ৯ মিলিয়ন মানুষ ক্যানসারে মারা যায় আর গড়ে ৩৩ মিলিয়ন মানুষ ক্যানসার রোগ নিয়ে বাস করছেন ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করছে যে ,মাত্র দুই দশকের হিসাবে শতকরা ৭৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ক্যানসারে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বছরে ১৪ মিলিয়ন থেকে ছাড়িয়ে ২২ মিলিয়ন হবে, যা বিশ্ব উন্নয়নের জন্যে এক বড় হুমকি ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা তথ্যে জানা যায়, পুরুষদের মধ্যে ক্যানসারের পাঁচটি রোগ বেশি হচ্ছে- ফুসফুস, প্রোস্টেট, মলদ্বার সম্পর্কিত, পাকস্থলী ও লিভার ক্যানসার আর মহিলাদের মধ্যে স্তন, জরায়ু, ফুসফুস, মলদ্বার সম্পর্কিত ও পাকস্থলীর ক্যানসার বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
তথ্য-প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞান এর সর্বাধিক সুযোগ নিতে তৎপর আছে । জাতিসংঘের ২০০৩ সালের জেনেভা ঘোষণাপত্রের আলোকে বিশ্বব্যাপী যে ১১টি অ্যাকশন লাইন দেশগুলো মেনে চলছে তার মধ্যে ৭নং-এ উল্লেখিত “জীবনের সকল স্তরে তথ্য-প্রযুক্তির সর্বাধিক ব্যবহার” শীর্ষক কর্মসূচির অন্যতম হলো “ই-হেলথ” কর্মসূচি। দূরসেবা কার্যক্রম নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রচুর গবেষণা করছে ও অনেক ক্ষেত্রেই সফল হয়েছে। দেশে দেশে ইন্টারনেট সম্প্রসারণের ফলে মেডিক্যাল সফটওয়্যার ব্যবহার ও দূরনিয়ন্ত্রিত চিকিৎসা যন্ত্রাংশ সমন্বিত হয়ে অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা করতে এখন সফল হচ্ছে।
বিশ্বের অনেক দেশেই এখন এরকম স্বাস্থ্য তথ্যের ব্যক্তিগত ভাণ্ডার তৈরি হয়েছে, যা চিকিৎসা সেবার জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব তথ্য এখন কেন্দ্রীয় সার্ভারে সুরক্ষিত থাকলেও মোবাইল ফোনের অ্যাপ ব্যবহার করে যেকোনও সময়ে প্রাথমিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পরিকল্পনা করতেও সহজ হয়। তাছাড়া এসব তথ্য থাকলে, বিশেষ করে ক্যানসারের ধারাবাহিক চিকিৎসার নানা ধাপের তথ্য থাকলে এর চিকিৎসাও সহজতর হয় ।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে “পয়েন্ট অব কেয়ার” বা চিকিৎসা সেবার ধাপগুলোর জন্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গাইডলাইন তৈরি করেছে । ক্যানসার আক্রান্ত হলেই কোনও মানুষ সাথে সাথে মারা যাবেন এমন ধারণা ভুল । আজকাল তথ্য-প্রযুক্তির সুবাদে প্রাথমিক শনাক্তকরণের পরে পরবর্তী চিকিৎসা ধাপে যেমন সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে যথাসম্ভব সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত হয়েছে। ক্যানসার টিউমার সার্জারিতে আজকাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেবলমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত অংশ অপসারণ করা হয়। এমনকি কেমোথেরাপিতে ওষুধের মাত্রা কতখানি হবে তা-ও ওই রোগীর স্বাস্থ্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই নির্ধারণ করা হয় । ক্ষতিগ্রস্ত কোষ যেন শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে তার জন্যে ক্যানসার রোগীকে এখন লাইনাক (লিনিয়র এক্সিলিটর) নামের যন্ত্রের মাধ্যমে রেডিওথেরাপি সেবা দেয়া হয় । আজকাল এসব যন্ত্রপাতি সম্পূর্ণভাবে সফটওয়্যার দিয়ে পরিচালিত হয়, যার সুবিধা হলো শুধুমাত্র যে অংশে এই থেরাপি দেয়া দরকার তা দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করেই নির্ধারণ করা যায় ।