এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : পাকিস্তানের বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী হয়েছে ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পাওয়ায় জোট সরকার গঠনের পথে ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক ইমরান খান। বিজয়ী নির্দলীয় প্রার্থী ও মিত্র দলগুলোর সঙ্গে চলছে আলাপ-আলোচনা, দরকষাকষি। ইতিমধ্যে ছোট কিছু দল ইমরানের নেতৃত্বাধীন সরকারে কাজ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। পাকিস্তান সংবিধান অনুসারে, জোট গঠনের জন্য ইমরানের হাতে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় রয়েছে।
জাতীয় পরিষদের ম্যাজিক ফিগার ১৩৭ আসনের জয় না পাওয়ায় জোট গঠনে বেগ পেতে হবে ইমরানকে। এদিকে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে পাঞ্জাব নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করেছে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএন-এন) ও পিটিআই। খবর ডন ও এএফপির।
নির্বাচনের দু’দিন পর শুক্রবার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন। বুধবার জাতীয় পরিষদের ২৭২টি আসনের মধ্যে ২৭০টিতে ভোট গ্রহণ করা হয়। বাকি দুটি আসনে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। সরকারি ফলাফলে দেখা গেছে, ইমরানের দল পিটিআই ১১৭ আসনে জয়ী হয়েছে। পিএমএন-এন ৬৩ ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) ঝুলিতে এসেছে ৪৩ আসন।
এ ছাড়া মুত্তাহিদা মজলিসে আমল (এমএমএ) ১১, মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) ৬ ও গ্যান্ড ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (জিডিএ) পার্টি ২ ও নির্দলীয় প্রার্থী ১৪ আসনে জয় পেয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ১৩৭ আসনে জয় প্রয়োজন। ইমরান খানের জোট গঠনে দরকার আরও ২০ আসন। দরকষাকষি শেষে নির্দলীয় প্রার্থীদের ১৪ আসন জোটাতে পারলেও নিশ্চিন্ত হতে পারবেন না ইমরান। এ ছাড়া এমকিউএম পার্টি ইমরানের নেতৃত্বে জোট সরকারে থাকার আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে তার সামনেও সময় খুব বেশি নেই।
পাকিস্তানের সংবিধান ৯১(২) ধারা অনুসারে, নির্বাচনের পর থেকে ২১ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীসহ জাতীয় পরিষদের সদস্যদের শপথ এবং নতুন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের কাজ সম্পন্ন করবেন। এ ক্ষেত্রে ভোট গণনা করতেই দু’দিন পার হয়ে গেছে। আগামী ১৫ আগস্টের মধ্যে সরকার গঠনে প্রেসিডেন্টের কাছে পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের আস্থা দেখাতে হবে ইমরানকে।
শুক্রবার পিটিআই মুখপাত্র ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, জোট সরকার গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মিত্র ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। কয়েকদিন সময় লাগবে বলেও জানান তিনি। নির্বাচনের দিন থেকেই ঘুরেফিরে আলোচনায় এসেছে ব্যাপক বিলম্ব ও কারচুপির অভিযোগ। শুরুতে ফল প্রত্যাখ্যান করলেও বৃহস্পতিবার পিএমএল-এনের নির্বাহী কমিটি বৈঠক করে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
দলের নেতা শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়- পিএমএল-এন ‘শক্ত বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা পালন করবে’। শাহবাজ শরিফ জানান, তারা বিজয়ী প্রার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি পাঠাবেন। আর পরাজিত প্রার্থীদের কাছে পাঠানো হবে উৎসাহমূলক চিঠি। পিএমএল-এন সভাপতি শাহবাজ আরও জানান, ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন তারা। দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে কারচুপির প্রমাণ সরবরাহ করা হবে বলেও জানান তিনি। বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপিসহ শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলো ভোট চুরির অভিযোগ এনে ফল প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেয়।
নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদ থেকে ‘প্রেসিডেন্ট স্টাইলের’ ভাষণ দেন পিটিআই প্রধান ইমরান খান। সেখানে তার অর্থ, সরকার ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তানের অন্যতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার সম্পর্ক বিরাজমান। সন্ত্রাসবাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় প্রশ্নে আফগানিস্তানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব। কাশ্মীর সংকট নিয়ে ভারতের সঙ্গে অচলাবস্থা। পাক পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে এসব চ্যালেঞ্জই মোকাবেলা করতে হবে ইমরানকে। বৃহস্পতিবারের টেলিভিশন ভাষণে ইমরান ভারতের সঙ্গে বরফ গলা সম্পর্ক গড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ঝালাই করে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইমরান বলেন, ‘কাশ্মীরই দু’দেশের মধ্যে সব চেয়ে বড় সমস্যা।
গত ৩০ বছর ধরে কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। পাকিস্তানি ও ভারতীয় নেতৃত্বের এক টেবিলে বসে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা উচিত। কাশ্মীর সমস্যা মেটানোর লক্ষ্যে ভারত এক পা এগোলে আমরা দু’পা এগোতে রাজি।’ পাকিস্তানের মতো একটি বিশৃঙ্খল দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান কোনো পরিবর্তন আনতে পারবেন কিনা- প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ডানিয়েল মার্কি বলেন, ‘ইমরান একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকারের আগের সেই পুরনো লোকবলের সঙ্গেই কাজ করতে হবে। এ ছাড়া তাকে ছায়া দিচ্ছে সেনাবাহিনী- এমন অভিযোগও রয়েছে। ফলে নতুন কিছু দেখাতে পারবেন বলে মনে হয় না।’
পাঞ্জাব নিয়ে কাড়াকাড়ি : পাঞ্জাবকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ঘাঁটি বলা হয়। প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলির মোট আসনের অর্ধেকের বেশি এখানে। দেশটির সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত পাঞ্জাব সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের জন্মস্থান। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তার দল পিএমএল-এন পাঞ্জাব শাসন করছে। এবারের নির্বাচনে প্রদেশটিতে নওয়াজ দলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে ইমরানের পিটিআই।
পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদে পিএমএল-এন পেয়েছে ১২৭টি। পিটিআই পেয়েছে ১২৩টি। পরিষদের ৩৭১ আসনের মধ্যে ২৯৭টিতে সরাসরি নির্বাচন হয়েছে। বাকি ৭৪ আসন নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত। পিএমএল-এন নেতা হামজা শাহবাজ শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পাঞ্জাবে আমরাই সরকার গঠন করব। পিটিআই নেতা মঈন মাহমুদুর রশিদ বলেন, পিএমএল-এন ও পিপিপিকে বাদ রেখে বাকি দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে স্বাগত জানিয়েছে পিটিআই।