এশিয়ান বাংলা, ঢাকা: বিএনপিকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা ব্যক্তিস্বার্থে রাজনীতি করেন, ইতিহাস তাদের কখনও ক্ষমা করে না। বিএনপির দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ব্যক্তিস্বার্থে রাজনীতি করা হলে সেই রাজনীতি দেশকে কিছুই দিতে পারে না। তিনি বলেন, এসব কারণে বিএনপির প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সরকারি বাসভবন গণভবনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাওসার বক্তব্য দেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। ১৯৯৪ সালের ২৭ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন- জনস্বার্থ, জনকল্যাণ ও জনগণের মঙ্গলের জন্য রাজনীতি হলে দেশকে কিছু দেয়া যায় এবং আমরা তাই করছি। কিন্তু ব্যক্তিস্বার্থের রাজনীতি কখনও জনগণ ও দেশকে কিছু দিতে পারে না। তিনি বলেন, বিএনপির শাসনামলে (২০০১-০৬ সাল) সীমাহীন দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড এবং মানুষ হত্যা করা হয়েছে। এ কারণে বিএনপির প্রতি জনগণের কোনো আস্থা ও বিশ্বাস নেই এটা প্রমাণিত।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, যারা অতীতে লুটপাট করেছে, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে আবারও তারা লুটেপুটে খাবে এবং শুধু নিজেদের ভাগ্য গড়বে। বিএনপির ২০০১-০৬ সালের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, বাড়িঘরে লুটপাট করা হয়েছে। ২০১৩ সালে সন্ত্রাস ও জ্বালাও-পোড়াও এবং নির্বাচন প্রতিহত করার নামে প্রিসাইডিং ও সরকারি প্রিসাইডিং অফিসার, বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২৭ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের সাফল্য ও অর্জনগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরে আগামী সাধারণ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি শেখ হাসিনা আহ্বান জানান। দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি জনগণের সামনে সরকারের করা উন্নয়নের কথাগুলো বারবার বলার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায় থেকে আরও সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে হবে। এজন্য নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার সঙ্গে কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে বিএনপি এত টাকা বানিয়েছিল যে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর একজন অফিসারকে কিনে ফেলল জয়কে অপহরণ ও হত্যা করার জন্য। আবার ধরা পড়ল সেই এফবিআইর হাতে। আবার বিএনপির যে নেতা এ কাজ করেছিলেন তিনি ধরা পড়ার পর তার বিচার হল ও শাস্তিও হল। তিনি বলেন, সেই মামলার রায়ে বেরিয়েছে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শফিক রেহমান এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। অর্থ ও পরামর্শ দেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান ও শফিক রেহমানের উদ্দেশ্যেই ছিল জয়কে অপহরণ করে হত্যা করার। তাদের প্রকৃত চেহারা এবং তারা যে কত টাকার মালিক সেটা দেশের জনগণ এখনও বুঝতে পারেনি। খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ১০ বছরেরও বেশি সময় আদালতে মামলা চলেছে। খালেদা জিয়া অর্থ আত্মসাৎ করেননি এটা প্রমাণে বিএনপির বাঘা বাঘা আইনজীবী ব্যর্থ হয়েছেন। তাকে জেল দিয়েছেন আদালত। কাজেই আমাদের কাছে এখন মুক্তির দাবি করে লাভ কি। আমরা কিছুই করতে পারব না। সে রকম হলে তো ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপির সন্ত্রাস ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হতো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এতিমের অর্থের লোভ সামলাতে পারেন না তারা কিভাবে দেশ চালাবেন।
উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকাও গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি। বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৭ দশমিক ৭৮ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দারিদ্র্যের হার কমিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছে বলেই সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ বিশ্বে বাংলাদেশের হারানো সম্মান ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, আজকে কারও কাছে হাত পেতে আমাদের চলতে হয় না। আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির শতকরা ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়ন থেকে বাস্তবায়নের সক্ষমতা অর্জন করেছি। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে প্রতিটি গ্রাম হবে শহর। গ্রামের জনগণ নগরের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে। যেখানে জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। দিনটি প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সন্তান এবং তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন হওয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীরা করতালি ও স্লোগানের মাধ্যমে জয়কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে কেক কাটেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই ধানমণ্ডির একটি বাড়িতে সপরিবারে বন্দি থাকার সময় জয় জন্মগ্রহণ করেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২৭ জুলাই দিনটি আমার জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সঙ্গে জয়ের জন্মদিন এক হয়ে গেছে। তাই সবার জন্য আমার দোয়া ও আশীর্বাদ রইল।