এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জাল ভোট, কেন্দ্র দখল আর নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে, এখন চলছে গণনা। সোমবার সকাল ৮ থেকে এই তিন সিটিতে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। সিটিগুলোর মেয়র পদে কাগজ-কলমে ১৯ প্রার্থীর নাম থাকলেও নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭ জন।
এছাড়া তিন সিটির ৮৭ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৮১ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৪৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে ভোট গ্রহণের পর থেকে নানা অনিয়মের অভিযোগ করে আসছেন বিএনপি প্রার্থীরা।
নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারসহ চার প্রার্থী। অন্য দুজন হলেন- ইসলামী আন্দোলনের মেয়রপ্রার্থী ওবাইদুর রহমান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) মেয়রপ্রার্থী মনীষা চক্রবর্তী ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির আবুল কালাম আজাদ।
এছাড়া বিএনপির মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট সিটি কর্পোরেশনে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে।
রাজশাহী সিটি নির্বাচনেও বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ভোট জালিয়াতির প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
সিলেট সিটি নির্বাচনে বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অন্তত ১৫টি ভোটকেন্দ্রের এক বা একাধিক বুথ দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুথ দখল করে জাল ভোট দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
রাজশাহী ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও কয়েকটি ভোটকেন্দ্র থেকে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে তিন সিটিতেই সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহল কবির রিজভী।
তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতেই বিএনপি অভিযোগ করছে।
এর আগে জল্পনা ছিল রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনে নগরপিতা কারা হচ্ছেন? রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে মেয়র পদে পরিবর্তন হবে, নাকি আবার ঘটবে প্রত্যাবর্তন। বরিশালে নবীন, নাকি প্রবীণ রাজনীতিকের জয় হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর আজ মিলবে ভোটারদের রায়ে। জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়ানো এ তিন সিটিতে আজ সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। সিটিগুলোর মেয়র পদে কাগজ-কলমে ১৯ প্রার্থীর নাম থাকলেও নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১৭ জন। তাদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হবেন আগামীর নগরপিতা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা ও বিএনপির ধানের শীষ প্রার্থীদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া গেছে। কাউন্সিলর পদেও এ দুই দল সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে মূল লড়াই হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তিন সিটির ৮৭ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৮১ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৪৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তিন সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন ঘিরে নিজ নিজ এলাকায় একদিকে যেমন উৎসবভাব আছে, অপরদিকে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন কিনা- তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে বিরাজ করছিল এক ধরনের শঙ্কা। যদিও সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিতে তিন সিটিতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মাঠে ছিল। এ নির্বাচন উপলক্ষে তিন সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয় যান চলাচলের ওপর। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১৫ জুন এ তিন সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনে সবক’টিতে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী জয়ী হন। এবারের নির্বাচনে রাজশাহী ও সিলেটে মেয়র পদে গত নির্বাচনের প্রার্থীদের আবারও মনোনয়ন দিয়েছে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বরিশাল সিটিতে দু’দলই নতুন প্রার্থী দিয়েছে। রাজশাহী সিটির সদ্য বিদায়ী মেয়র বিএনপির মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল লড়ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সদ্য বিদায়ী মেয়র বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। আর বরিশাল সিটিতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির প্রার্থী প্রবীণ রাজনীতিক মজিবর রহমান সরোয়ার ও আওয়ামী লীগের নবীন নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।
তবে প্রার্থী যারাই হোন না কেন, তিন সিটি নির্বাচন স্থানীয় গণ্ডি ছাড়িয়ে জাতীয় রাজনীতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে অনুষ্ঠিত তিন সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন ঘিরে নিজ নিজ এলাকায় একদিকে যেমন উৎসবভাব রয়েছে, অপরদিকে চরম শঙ্কা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। যদিও ভোটের নিরাপত্তায় তিন সিটিতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মাঠে রয়েছেন। পাশাপাশি ১২৭ জন জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষে করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবুও ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা রয়েছে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও দলটির নেতাকর্মীদের। নির্বাচন প্রচারণার শুরু থেকে রোববার পর্যন্ত দলটির শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার এবং তিন সিটিতে স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ সদস্যরা বাড়াবাড়ি করছেন বলে রোববার নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করছে দলটি। এসব ঘটনায় দায়ী কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানিয়েছে বিএনপি। অপরদিকে অনেকটাই নির্ভার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের (আরডিসি) এক জরিপে তিন সিটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা উঠে এসেছে। এ নির্বাচনে তিন সিটিতে বড় ব্যবধানে আওয়ামী লীগ জয়ী হবে বলেও মনে করছে দলটি।
এ নির্বাচনে ফলাফল যাই হোক না কেন সবার দৃষ্টি তিন সিটি কর্পোরেশনের ভোট গ্রহণের পরিবেশ-পরিস্থিতির দিকে। নির্বাচনী পরিবেশ ও ফল দেখার অপেক্ষায় আছেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, এমনকি প্রবাসী বাংলাদেশিরাও। বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডসসহ কয়েকটি রাষ্ট্রের কূটনীতিক তিন সিটিতে সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচনে জনগণের নেতা নির্বাচন দেখতে চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সিটি কর্পোরেশনে ভোট গ্রহণের পরিবেশ কেমন থাকে তা জাতীয় নির্বাচনের আগে আলোচনার খোরাক জোগাবে। পাশাপাশি জনগণের কাছে প্রধান দুটি দলের জনপ্রিয়তা কোন পর্যায়ে আছে তা বেরিয়ে আসবে এ নির্বাচনের মাধ্যমে। এ নির্বাচনে যারা জয়ী হবে, তারা রাজনীতি ও ভোটের মাঠে বড় স্কোরে এগিয়ে যাবে। নৌকা প্রতীক জয়ী হলে সরকারি দল এটিকে বেঞ্চমার্ক ধরে নিয়ে বলবে জনগণের কাছে তাদের জনপ্রিয়তা বেশি। বিপরীতে ধানের শীষ জয়ী হলে বিএনপি ভোট ও মাঠের রাজনীতিতে অনেকখানি এগিয়ে যেতে পারবে। সারা দেশে তাদের যেসব নেতাকর্মী ও সমর্থক রয়েছেন তারা জেগে ওঠার প্রেরণা পাবেন। দুই প্রধান দলের এ ধরনের হিসাব-নিকাশের চ্যালেঞ্জের মুখে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আজ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তিন সিটিতে ভোট সুষ্ঠু করতে মাঠ প্রশাসনকে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিয়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। রোববারও তিন সিটির ভোট নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন কমিশন কর্মকর্তারা। তিন সিটির ভোট পর্যবেক্ষণে তিনজন নির্বাচন কমিশনার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। এছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে একটি মনিটরিং সেলও খোলা হয়েছে।
তিন সিটি নির্বাচন ইসির জন্য অগ্নিপরীক্ষা বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের খবরে মনে হচ্ছে নির্বাচনী এলাকায় ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করতে পারেনি ইসি। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, ভোট গ্রহণের পরিবেশ কেমন থাকে। গাজীপুর ও খুলনা সিটির মতো তিন সিটিতে ভোট হলে সহজেই অনুমেয় এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা খুব কঠিন হবে। এ কারণে এ তিন সিটি নির্বাচন ইসির আস্থা অর্জনের শেষ সুযোগ বলেও মনে করেন তিনি।
সুষ্ঠু ভোটের প্রত্যাশা সবার : রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন এমনটিই প্রত্যাশা তিন সিটির বাসিন্দাদের। একই ধরনের প্রত্যাশা রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার। বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, সবাই প্রত্যাশা করেন তিন সিটিতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণের আশা প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলেছে, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হবে বলে আশা করি। নির্বাচনে অংশীজনরা অবাধে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে নেতা নির্বাচন করবেন। ঢাকার নেদারল্যান্ডস দূতাবাস বলেছে, অনেক প্রত্যাশিত তিন সিটি নির্বাচন। দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন জোরদারে সব পর্যায়ের অংশগ্রহণমূলক প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠান দরকার। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যে কোনো বিশ্বাসযোগ্য গণতন্ত্রের প্রাথমিক শর্ত বলেও মনে করে দেশটি। ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো এক বার্তায় বলেন, সিটি কর্পোরেশনে জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের নেতা নির্বাচন করবেন- সেই আশা প্রকাশ করছি।
তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা : রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভোট গ্রহণের দায়িত্বে রয়েছেন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার সদস্য। সিলেট সিটি কর্পোরেশনে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার, রাজশাহীতে প্রায় ছয় হাজার এবং বরিশাল সিটিতে পাঁচ হাজারের বেশি সদস্য মাঠে রয়েছেন। প্রতিটি সিটিতে সাধারণ ভোট কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসারের ২২ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ভোট কেন্দ্রের বাইরে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সও থাকছে।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, এপিবিএন ও আনসারের ৩০টি মোবাইল টিম ও ১০টি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে রয়েছে। এছাড়া র্যাবের ৩০টি টিম ও ১৫ প্লাটুন বিজিবি টহল দিচ্ছে। এছাড়া ৪ প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে। এ সিটির ১৩৮টি ভোট কেন্দ্র ও ১ হাজার ২৬টি ভোটকক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে ১১৪টি ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১২৩টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১১২টিই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ৫৫টি ভোট কেন্দ্র অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ সিটির ভোটের নিরাপত্তায় পুলিশ, এপিবিএন ও আনসারের ৩০টি মোবাইল টিম ও ১০টি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে রয়েছে। এছাড়া র্যাবের ৩০টি টিম ও ১৫ প্লাটুন বিজিবি টহল দিচ্ছে। এর বাইরে ৪ প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে।
সিলেট সিটিতে ১৩৪টি ভোট কেন্দ্র ও ৯২৬টি ভোটকক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে ৮০টি ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ সিটির ভোটের নিরাপত্তায় পুলিশ, এপিবিএন ও আনসারের ২৭টি মোবাইল টিম ও ১০টি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে রয়েছে। এছাড়া র্যাবের ২৭টি টিম ও ১৪ প্লাটুন বিজিবি টহল দিচ্ছে। এর বাইরে ৩ প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে।
প্রার্থী ও ভোটার সংখ্যা : রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৫, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬০ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৫২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ সিটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এর বাইরে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ সিটিতে আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও বিএনপির মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের মধ্যে মূল লড়াই হবে বলে জানা গেছে। ৩০টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন; যার মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ ও নারী ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে ৭ মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে বশিরুল হক ঝুনু নামের স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। বাকি ছয় মেয়র প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। বরিশাল সিটিতে সাধারণ ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩টিতে ও একটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৯১ জন ও ৯টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ সিটিতে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬, যার মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ ও নারী ভোটার ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন।
সিলেট সিটি নির্বাচনে ৭ মেয়র প্রার্থী হলেও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মো. বদরুজ্জামান সেলিম নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। বাকি ৬ মেয়র প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী। এছাড়া জামায়াত প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের প্রথমবার প্রার্থী হয়ে আলোচনায় আছেন। এ সিটিতে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন। ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সিলেট সিটিতে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১২৭ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
১৫ ভোট কেন্দ্রে ইভিএম : তিন সিটির ১৫ ভোট কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে ১১টি কেন্দ্র এবং রাজশাহী ও সিলেট সিটির দুটি করে কেন্দ্রে এ মেশিন ব্যবহার করে ভোট গ্রহণ করা হবে। এছাড়া বরিশালের ২৫টি ভোট কেন্দ্রে ট্যাব ব্যবহার ভোট গ্রহণের তথ্য সংগ্রহ করবে নির্বাচন কমিশন। পরীক্ষামূলক এ পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে ওই ২৫ কেন্দ্রের তথ্য জানতে পারবে কমিশন।