এশিয়ান বাংলা, ডেস্ক : রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৫ জন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আবদুল্লাহপুর-মোহাম্মদপুর রুটে চলাচলকারী জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের রেষারেষিতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দুই শিক্ষার্থী হলেন- শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজিব ও একই কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম।
সহপাঠীদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে এসে সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। ঘটনার পর প্রায় দুই ঘণ্টা ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
দুর্ঘটনায় আহত ১৫ শিক্ষার্থী হলেন- জয়ন্তী, রুবাইয়া, শুভ, তিশা দাস, মেহেরাব অপু, আরাফাত, আলামিন, ইমন চৌধুরী, ইশরাত, শরিফ, সজিব, মেহেদি হাসান, সোহেল রানা, মাসুদ রানা ও জুম্মান। আহতদের বেশিরভাগ প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরে গেছেন। আহত ৪ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক সগির মিয়া। তবে তিনি ওই শিক্ষার্থীর নাম জানাতে পারেননি।
নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানম ওরফে মিমের বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম। তিনি পেশায় গাড়িচালক। মা রোকসানা গৃহিণী। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে মিম মেজো। তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের পিরোজপুরের পুনিয়া গ্রামে। পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর মহাখালী দক্ষিণপাড়ায় থাকতেন মিম। নিহত অপর শিক্ষার্থী আবদুল করিমের বাবা মৃত নূর ইসলাম ও মা মহিমা বেগম। তাদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ায়। উত্তরা আশকোনা এলাকায় মামার বাসায় থেকে পড়াশোনা করতেন করিম।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দুর্ঘটনা ঘটানো বাসের যাত্রীরা জানান, শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী হোটেল র্যাডিসন ব্লু’র বিপরীত পাশে ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে যে বাসস্ট্যান্ড সেখানে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস সেখানে আসে। কিছুক্ষণ পর একই পরিবহনের আরেকটি বাস দ্রুতগতিতে এসে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটিকে ওভারটেক করতে গিয়ে টার্ন নেয় এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। নিমেষে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর উঠে যায় বাসটি। কেউ চাকার নিচে পিষ্ট হয়, কেউ ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে। আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে করিম ও মিমকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
দুর্ঘটনা ঘটানো বাসের যাত্রী আরিফুল ইসলাম বলেন, ২০-২৫ সেকেন্ডের মধ্যেই ঘটনা ঘটে। দুই বাসের পাল্লাপাল্লির কারণে দুটি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। সব যেন দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে। কী থেকে কী হয়ে গেল।
দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই ছিলেন এক সেনা কর্মকর্তা। তিনি যুগান্তরকে বলেন, চোখের পলকে দুর্ঘটনাটি ঘটে গেল। একটি বাস আরেকটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের উপরে উঠে গেল। বাসটির চালক ও হেলপার চাইলেই এ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। কিন্তু তারা দ্রুত গতিতে ওভারটেক করতে গিয়েই দুর্ঘটনাটি ঘটল।
নিহত শিক্ষার্থী আবদুল করিমের সহপাঠী মো. বশির যুগান্তরকে বলেন, কলেজ ছুটি হওয়ার পর আমরা একসঙ্গেই বাসস্ট্যান্ডে আসি। ওদের রেখে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে বিপরীত পাশে যাই। রাস্তা পার হয়ে অপর পাশে যেতেই ঘটে এ দুর্ঘটনা। ঘটনাস্থলেই দু’জন মারা যান। তিনি বলেন, আমরা সহপাঠী হত্যার বিচার চাই। দ্রুত বাসচালককে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।
এদিকে দুর্ঘটনার পর রাস্তা অবরোধ করে এ রোডে চলাচলরত তানজিল, বিআরটিসি, ভুইয়া, অছিম পরিবহনের বাস ও প্রাইভেট কারসহ অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাংচুর করেন বিক্ষুব্ধ জনতা ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় কয়েকটি বাসে আগুনও ধরিয়ে দেয়া হয়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। পরে বিকাল সাড়ে ৩টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ডিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) প্রবীর কুমার দাস বলেন, সহপাঠী নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ ও ভাংচুর করেন। এ সময় মহাখালী থেকে উত্তরা পর্যন্ত সড়কের দু’দিকেই যানজট লেগে যায়। বিকাল সাড়ে ৩টা নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ক্যান্টনমেন্ট জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার তাপস কুমার যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার পরই লোকজনের সহায়তায় একজনকে আটক করেছি। তার পরিচয় জানা যায়নি। সে ওই বাসের চালক বা হেলপার হতে পারে।
ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি কাজী শাহান হক বলেন, বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আরেকজনের অবস্থা গুরুতর। নিহত হওয়ার পরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাস ভাংচুর করেন, যানবাহন থামিয়ে দেন এবং সড়ক অবরোধ করেন। এতে সড়কে প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি হয়।