এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : অথৈ জলে পড়লেন আসামের ৪০ লাখেরও বেশি বাঙালি। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে আসামে বসবাস করলেও তাদের নাম উঠল না জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকার খসড়ায়। তারা ভারতীয় নন, এ দেশে থাকার তাদের কোনো অধিকার নেই- বিজেপি শাসিত কেন্দ্রের তরফে কার্যত এমনই বার্তা দেয়া হল তাদের। নাম বাদ পড়া বাঙালিদের একটা অংশ পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাক সেনার অত্যাচারে দেশ ছেড়ে আসামে আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে দাবি আসামের বর্তমান বিজেপি সরকারের।
সোমবার সকালে এনআরসির দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত তালিকার খসড়া প্রকাশ করা হয়। আসামের মোট জনসংখ্যা ৩ কোটি ২৯ লাখ। খসড়া তালিকায় তাদের মধ্যে ২ কোটি ৮৯ লাখ ৮৩ হাজার ৬৬৮ জনকে নাগরিক বলে মেনে নেয়া হয়েছে। বাকিদের অস্তিত্ব সংকটে। যদিও এদিন এনআরসির রেজিস্ট্রার জেনারেল এই তালিকাকেই সর্বশেষ তালিকা বলে মানতে নারাজ। তার বক্তব্য যাদের নাম এই তালিকায় নেই তাদের আতঙ্কের কিছু নেই। তারা আবার নাম নথিভুক্তকরণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তালিকা প্রকাশ ঘিরে সোমবার উত্তাল হল সংসদের দুই কক্ষ। এভাবে তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়ে বাঙালিদের অসহায়তার মুখে ফেলে দেয়ার ঘটনাকে অমানবিক বলে উল্লেখ করে রাজ্যসভা ও লোকসভায় সরব হন তৃণমূল সংসদ সদস্যরা। তাদের অভিযোগ, কেন্দ্র ইচ্ছাকৃতভাবে ৪০ লাখেরও বেশি বিশেষ ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘু মানুষকে নাগরিক পঞ্জির তালিকায় রাখেনি।
পরিস্থিতি সামাল দিতে লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ‘আসামের এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় যাদের নাম ওঠেনি তাদের আশঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না। এদিকে বাদ পড়া বাঙালিরা বলছেন, আমাদের জন্মভূমি ছাড়তে বাধ্য করছে বিজেপি।
১৯৭১-এর ২৫ মার্চের আগে থেকে যারা আসাম বাস করছেন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তাদের এদিনের প্রকাশিত তালিকায় নাম, ঠিকানা ও ছবি রয়েছে। যাদের নাম উঠল না তারা নিজের এলাকার এনআরসি সেবা কেন্দ্র থেকে ফরম নিয়ে পুনরায় আবেদন করতে পারবেন। ফরম পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ জানাবে, কেন বাদ পড়েছে তার নাম। সেবা কেন্দ্রগুলোতে ৭ আগস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ফরম মিলবে। এর পরে নিজেকে প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক দাবি করে আর একটি ফরম পূরণ করতে হবে। ৩০ আগস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিলবে এই ফরম। এরপর শুনানির মাধ্যমে সব কটি মামলা মেটানো হবে।
খসড়ায় বাঙালিদের নাম বাদ পড়া নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশ্ন তুললেন, তাহলে কি ফের আসামে বাঙালি খেদাও আন্দোলন শুরু হতে চলেছে? বিজেপি শাসিত কেন্দ্র ও আসাম সরকারের চক্রান্তের অভিযোগ তুলে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপির ভোট রাজনীতির শিকার ওই সব মানুষের পাশে আছে বাংলা। মমতা এদিন কলকাতায় বলেন, ‘এটা বিচ্ছিন্নতাবাদী সিদ্ধান্ত। দেশবাসীকে রিফিউজির তকমা দেয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, এটা পরিকল্পিত গেম প্ল্যান। আমরা মানব না। ১৯৭১ সালের পর যারা এ দেশে এসেছেন, তারা তো ভারতীয়। সেটাও মানা হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ, মুর্শিদাবাদের লোককে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। বলছে বাইরের লোক।
২০১৫ সাল থেকে শুরু হয় এনআরসি বা নাগরিকদের পরিচয় সংক্রান্ত কর্মসূচি। এর প্রথম তালিকা প্রকাশিত হয় গত বছর ৩১ ডিসেম্বরে। তাতে নাম ওঠে রাজ্যের ১.৯০ কোটি বাসিন্দার।