এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন না নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। বললেন, দুর্ঘটনা ঘটলেই অনেকেই আমার পদত্যাগ দাবি করেন। আমি তাদের বলবো, আপনারা যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারেন বা বলতে পারেন, হ্যাঁ, আপনি (নৌমন্ত্রী) গেলেই সব সমস্যার সমাধান হবে, আমার চলে যাওয়ার তো কোনো অসুবিধা নেই। এর আগেও শহীদ মিনার থেকে অনেকেই আমার এবং তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। কিন্তু পদত্যাগ সমস্যার সমাধান নয়। সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই ছাত্রছাত্রী নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তরফ থেকে তার পদত্যাগের দাবির বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এসব কথা বলেন।
এর আগে রোববার দুপুরে হোটেল র্যাডিসনের সামনে জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার ঘেঁষে রাস্তার বাঁ-পাশে দাঁড়ানো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একদল শিক্ষার্থীর ওপর উঠে যায় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাস। এতে দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। আহত হন আরো বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। প্রতিবাদে তখন বেশকিছু গাড়ি ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যে, মিরপুর-আব্দুল্লাহপুর রুটের জাবালে নূরের একাধিক বাস পাল্লাপাল্লি করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটায়। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, আজকে বাংলাদেশে যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে, এই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যখন প্রধানমন্ত্রী আহ্বান করলেন, আগুন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। তখন কিন্তু এই সড়ক পরিবহন শ্রমিকরাই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, গাড়ি চালু রেখে ছিলেন। এর জন্য ৯২ জন চালক-হেলপারকে জীবন দিতে হয়েছে। তাই শান্তি প্রতিষ্ঠায় সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের অবদান আছে। তিনি বলেন, মালিকদের এক হাজারের মতো গাড়ি পুড়িয়েছে, তিন হাজারের মতো গাড়ি ভাঙচুর করেছে।
তাহলে একটি দেশের প্রতি মালিক-শ্রমিকদের যদি দায়-দায়িত্বই না থাকে, তাহলে আমরা এ ঝুঁকিটা নেবো কেন? এই ঝুঁকির মধ্যে আমি কিন্তু যেখানেই গাড়ি পুড়িয়েছে সেখানেই ছুটেছি। বিভিন্ন জায়গায় ছুটে ছুটে গাড়িগুলো চালু রাখার ব্যবস্থা করেছি। মন্ত্রী বলেন, আমি গর্বের সঙ্গে বলতে চাই, শুধু এই সেক্টর নয়, ২০১৩ সালে গার্মেন্টসে জ্বালাও-পোড়াও-ভাঙচুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী আমাকেই দিয়েছিলেন। ২০১৩ সালের পরে আর কোথাও গার্মেন্টস-এ জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে? তাহলে আমি এ উদাহরণ দিতে চাই, আমি এখানে আছি বলে অনেক দুর্ঘটনা কমানোর ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করছি। ঢাকার রাস্তায় যারা মিনিবাস চালায় তারা চরম বিশৃঙ্খল, একজন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি একমত। এটা নিয়ে সিরিয়াসলি আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি যে, আমাদের করণীয় কী। আমরা কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেবো। শুধু বিআরটিএ আর সরকারকে দায়িত্ব দিলে হবে না, আমরা নিজেরাও কিছু দায়িত্ব পালন করতে চাই। সে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা কমাতে পারবো।
আগে অনেক লঞ্চডুবি হতো, শত শত মানুষ নিহত হয়েছে। আমি তো প্রমাণ করেছি, বিগত সাড়ে তিন বছরে একটাও লঞ্চ ডোবেনি। এটা যদি আমি এখানে করতে পারি, আমি আশা করি, সড়ক-পরিবহন খাতেও আমার প্রচেষ্টা দিয়ে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে পারবো। রোববারের দুর্ঘটনাটিকে খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করে নৌমন্ত্রী বলেন, আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে জাবালে নূরের চালকরা দোষী। তদন্তে এটা প্রমাণ হলে জাবালে নূরের রুট পারমিট বাতিল করা হবে। এ ঘটনায় যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে এটা ঘটেছে বলে পত্র-পত্রিকায় শুনেছি। এই অসম প্রতিযোগিতা আমরা মেনে নেবো না। আমি গতকালকেও একটা কথা বলেছি, সেটা আজকেও বলছি, যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ করতে আমরা রাজি নই। আমরা এর দায়-দায়িত্ব নেবো না। জাবালে নূর পরিবহনের মালিক মন্ত্রীর আত্মীয় বলে খবর ছড়ানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জবাবে শাজাহান খান বলেন, আমি জানি না ঠিক, আমি জোর দিয়ে বলছি না। এটা তো একটা কোম্পানি। সেখানে ১০ বা ২০ জন মালিক থাকতে পারে। সেখানে আমার কোনো আত্মীয় আছে কি-না তা জানা নেই।