এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : অবৈধ বাংলাদেশিদের ভারত থেকে বের করে দেয়া হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন ক্ষমতাসীন বিজেপির সর্বভারতীয় প্রধান অমিত শাহ। আসামের নাগরিক পুঞ্জিকরণ (এনআরসি) নিয়ে বিরোধীদের সুস্পষ্ট অবস্থান জানতে চান তিনি। অমিত শাহ অভিযোগ করে বলেন, ‘অবৈধ অভিবাসীদেরকে বিরোধীরা ভোটব্যাংক হিসেবে দেখছে। এজন্য তাদের নাম বাদ পড়ায় গায়ে জ্বালা ধরে গেছে।’ মঙ্গলবার আসামের এনআরসি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জির ওপর তোপ দাগেন বিজেপি প্রধান। পাল্টা মমতা বলেন, শুধু বাংলাদেশি কেন, নেপালি বা পাকিস্তানিরাও তো আসামে রয়েছেন। অথচ তাদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে না। এনআরসি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করবে বলেও হুশিয়ারি দেন তৃণমূল নেত্রী। খবর এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
আসামে এনআরসি বাস্তবায়ন নিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের মতো দলগুলোর সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘এনআরসির ম্যান্ডেট হল অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করা। ২০০৫ সালে এ প্রক্রিয়া যখন শুরু হয়েছিল তখন ক্ষমতায় ছিল ইউপিএ সরকার। কিন্তু অবৈধ বাংলাদেশিদের দেশ থেকে বের করে দেয়ার সাহস ছিল না ওই সরকারের। এখন এনআরসি বাস্তবায়ন হবে ‘ফুল স্টপ’ পর্যন্ত। কারণ তার দল জাতীয় নিরাপত্তা ও ভারতীয়দের অধিকারের পক্ষে।’ তিনি বলেন, ‘আসামের মানুষের কি কোনো মানবাধিকার নেই? ভারতীয় নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষার জন্যই এনআরসি গঠিত হয়েছে। এ নিয়ে ভারতীয় নাগরিকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। অথবা অন্য রাজ্যের যেসব নাগরিক আসামে বসবাস করছেন তাদেরও অবিচারের মুখে পড়ার কোনো ভয় নেই। এনআরসি বাস্তবায়ন হবে দৃঢ়তার সঙ্গে ও সুষ্ঠুভাবে। বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে যারা উদ্বিগ্ন সেই পক্ষের বিরুদ্ধে বিজেপির অবস্থান।’
অমিত শাহ বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিজেপি। এটাই আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার। অন্য দলগুলোরও তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত। কংগ্রেসের ওপর তোপ দেগে অমিত শাহ বলেন, আপনারা অবৈধ বাংলাদেশিদের বের করে দেয়ার সাহস দেখাতে পারেননি। কারণ, তারা আপনাদের কাছে ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের কাছে জাতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকারের গুরুত্ব ছিল না। জাতীয় স্বার্থের ওপরে গিয়ে ‘ভোটব্যাংক’ রাজনীতি করা উচিত নয় কংগ্রেসের। এখন তৃণমূলও অবৈধ বাংলাদেশিদের ভোটব্যাংক হিসেবে দেখছে।’ পাল্টা মমতা বলেন, ‘বিজেপিই ভোটব্যাংক রাজনীতি নিয়ে খেলছে। এনআরসি ইস্যু পুরো বিশ্বে প্রভাব ফেলবে। সীমান্তে সুরক্ষা নিশ্চিত করা কেন্দ্রের দায়িত্ব। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশে অবৈধ প্রবেশকারী ঢুকছে- এটা কি চেয়ে চেয়ে দেখেন সেনা সদস্যরা?’ অনুপ্রবেশকারীর নামে মানুষদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন মমতা। তিনি বলেন, এনআরসি ইস্যু ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক ধ্বংস করে দেবে।
সোমবার আসামে নাগরিক পঞ্জিকরণ সংশোধিত খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে রাজ্যটির ৪০ লাখ ৭ হাজার ৭০৭ জন বাসিন্দা ওই তালিকা থেকে বাদ পড়েন। এতে উত্তেজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিজেপি বিরোধীদের কাছে এটি একটি বিতর্কের ইস্যুতে পরিণত হয়। তালিকা থেকে দীর্ঘদিন বসবাসকারী নাগরিকদের নাম বাদ পড়ার ঘটনায় ‘গৃহযুদ্ধ ও রক্তগঙ্গা’ বয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছিলেন মমতা। তার এ মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরই আসামে ক্ষমতাসীন বিজেপি দলীয় তিন কর্মী মমতার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তৃণমূল নেত্রী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ‘ঘৃণা ও উত্তেজনা’ ছড়াচ্ছেন বলে পুলিশের কাছে দায়ের করা ওই মামলায় অভিযোগ করেছেন বিজেপির ডিব্রুগর যুব শাখার তিন কর্মী।
এদিকে, এনআরসি নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও একধাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলিপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি শরণার্থীদের জন্য ভারত কোনো ধর্মশালা নয়। ভারতে জনসংখ্যা বাড়িয়ে দিতে চাইছেন বাংলাদেশি মুসলিমরা। তারা ভারতকে কলোনি বানিয়ে ফেলেছেন। এটা বন্ধ করতে হবে।’ দিলিপ ঘোষ আরও বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় এলে আসামের মতো এনআরসি বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসীদের আমরা বের করে দেব। কঠিন সময় সামনে আসছে।’