এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভের পঞ্চম দিন বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর গাড়ি আটকে দিয়েছেন। চালকের লাইসেন্স না থাকায় মন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে যেতে বাধ্য হন। একই কারণে আটকে দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এমপি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িও। এসব ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ধানমণ্ডির ১৫ নম্বরে মন্ত্রীর গাড়ি আটকিয়ে দেয়ার ঘটনার ভিডিওটি এক মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের। এতে এক শিক্ষার্থীকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা এখন ধানমণ্ডি ১৫তে ইবনে সিনার সামনে। আমরা একটা গাড়ি ধরেছি, সেটা হচ্ছে মন্ত্রীর। গাড়ির চালকের কোনো লাইসেন্স নেই। আমরা মন্ত্রী স্যারের সঙ্গে কথা বলছি।’ এ সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা মন্ত্রীর কাছে জানতে চাই, স্যার অ্যালাউ করল ক্যান? যে চালকের লাইসেন্স নেই, তাকে কেন গাড়ি চালাতে অনুমতি দিয়েছেন তিনি। আমরা স্যারের কাছে তা জানতে চাই।’
এরপর মন্ত্রী সাদা রঙের গাড়িটি থেকে নেমে যান। এ সময় উল্লাস প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘তালি হবে, তালি হবে। শিক্ষার্থীরা চিৎকার করে বলতে থাকেন, শাবাশ… শাবাশ…।’ মন্ত্রী গাড়ি থেকে বের হয়ে হাঁটা শুরু করলে শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে স্লোগান দিয়ে উঠেন, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস।’ ভিডিওতে দেখা যায়, মন্ত্রী নিজের গাড়ি থেকে নেমে পাশে কালো রঙের আরেকটি গাড়িতে উঠে চলে যান। এ সময় নিজের গাড়িটি সেখানে ফেলে রেখে যান।
চালকের লাইসেন্স না থাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে বিজিবির একটি গাড়ি আটকে দেয়। একই অপরাধে বাংলামোটরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইয়ের গাড়ি আটকে দেয় শিক্ষার্থীরা। উত্তরা এলাকায় তল্লাশিকালে গাজীপুর জেলা দক্ষিণ ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তার গাড়িতে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা এবং গাঁজার সন্ধান পায় শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া গাড়ি থেকে একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়। পরে গাড়িটি উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় ডিবির ওই কর্মকর্তাসহ কয়েকজন পালিয়ে গেলেও একজনকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি আলী হোসেন খান। ওসি জানান, গাড়িতে বেশ কয়েকজন ছিল। আটকের সময় সাংবাদিক পরিচয়ে কয়েকজন পালিয়ে যায়। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। গাড়িটি ডিবি কর্মকর্তার বলে প্রাথমিকভাবে মনে হলেও কাগজপত্র যাচাই করা ছাড়া এ বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলা যাবে না।
লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় দুপুর ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবর রহমানের গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। শিক্ষার্থীরা যখন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবর রহমানের গাড়ি আটকে দেয়, তখন মুখ্য সচিব গাড়িতে ছিলেন না। শিক্ষার্থীরা গাড়ি আটকে চালকের লাইসেন্স দেখতে চান। লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা গাড়ি ও চালককে কর্তব্যরত সার্জেন্ট জাফর ইমামের কাছে নিয়ে যান। পরে একটি মামলা করেন ওই সার্জেন্ট। জাফর ইমাম জানান, গাড়িটি ছিল প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবর রহমানের।
রাজধানীর শনিরআখড়ায় সংসদ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা। গাড়িচালক ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে না পারায় এবং ইন্স্যুরেন্স আপডেট না থাকায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এ সময় এমপির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তখন সংসদ সদস্যকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসেন কদমতলী থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মমিনুল ইসলাম রাজীব। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে একপর্যায়ে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে ওই গাড়ির বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দায়ের করলে গাড়িটি ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১টার দিকে পঙ্কজের গাড়ি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে যাচ্ছিল। ওই সময় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা তার গাড়ি থামান। এ সময় এমপি পঙ্কজ দেবনাথ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তার গাড়ির সব কাগজপত্রই সঠিকভাবে আছে বলে দাবি করেন। কিন্তু কাগজপত্র দেখাতে না পারলে পুলিশকে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করতে বলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করলে তা দেখে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে গাড়ি অবরোধ করে রাখেন। একপর্যায়ে ডেমরা জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর একেএম মঞ্জুরুল আলম গাড়ির ইন্স্যুরেন্স পলিসি ও গাড়িচালকের ড্রইভিং লাইসেন্স না থাকার বিষয়ে মামলা দায়ের করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা সংসদ সদস্যকে ঘটনাস্থল থেকে যাওয়ার সুযোগ করে দেন।