এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : এবার জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কোরবানির ঈদ। এ জন্য আগের চেয়ে গবাদিপশুর চাহিদা অনেক বাড়বে। গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই ভোটার তুষ্টির প্রভাব পড়বে। নির্বাচনে সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রার্থীরা প্রয়োজনের চেয়ে একাধিক গবাদিপশু কোরবানি দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত এ চাহিদায় গবাদিপশুর দামে প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে কোরবানির পশু বেচা-কেনায় হাটগুলোয় এবার বাড়তি চাপ পরিলক্ষিত হবে।
তবে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ১২ লাখের বেশি গবাদিপশুর (গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া) কোরবানির হাটে সরবরাহ থাকবে। সম্পূর্ণ দেশীয় উৎস্য থেকেই এই বাড়তি পশুর সরবরাহ করা হবে। ফলে নির্বাচনকেন্দ্রিক বাড়তি চাপ থাকলেও সেটি অভ্যন্তরীণ উৎস্য থেকে সরবরাহ দেয়া পশুর মাধ্যমেই পূরণ করা সম্ভব হবে। হাটে কোনো পশুর সংকট হবে না। দামও নাগালের বাইরে যাবে না।
এদিকে আইনত গরু আমদানির সুযোগ নেই। তা সত্ত্বেও প্রতিবছর কোরবানি উপলক্ষে ভারতসহ মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান থেকে বাংলাদেশে কমবেশি গরু আমদানি করা হয়। স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, এবারও ভারত-মিয়ানমার সীমান্তপথ দিয়ে ইতিমধ্যে অবৈধভাবে গবাদিপশু আসতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কোরবানির দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসবে, ভারত থেকে নানাভাবে বাংলাদেশে গরু আসার হারও অন্যান্য সময়ের তুলনায় বাড়বে। এসব গরু কোরবানির হাটে পাওয়া গেলে কোরবানির পশুর সরবরাহ যেমন আরও বাড়বে, তেমনি দামও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সহায়ক হবে।
ইতিমধ্যে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাট বসানোর প্রস্তুতি ও প্রচারণা শুরু হয়েছে। হাটগুলোর ইজারাদাররা দাবি করেছেন, এবার নির্বাচনী বছর হওয়ায় কোরবানি বেশি হবে। ফলে পশুর চাহিদা এবং সরবরাহ দুটিই ভালো থাকবে। আর দাম সম্পর্কে তারা বলেন, দাম কেমন হবে সেটা নির্ভর করবে অভ্যন্তরীণ উৎসের বাইরে থেকে কী পরিমাণ পশু আমদানি হচ্ছে তার ওপর। সরবরাহ অতিমাত্রার হলে দাম সহনীয় থাকবে। তবে এতে দেশীয় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খামারিরা বলছেন, এবার ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ না হলে খামারিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ছাগল-ভেড়া ৭১ লাখ। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪ লাখ ২২ হাজার। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মো. আইনুল হক বলেন, অভ্যন্তরীণ উৎস্য থেকে সরবরাহ করা গবাদিপশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। আশা করি ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আমদানির প্রয়োজন হবে না। একই অধিদফতরের পরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, জাতীয় নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে এবার ঈদুল আজহা হওয়াতে কোরবানি কিছুটা বেশি হবে। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের ধারণা, সেটা ৫ ভাগের বেশি হয় না। এবার যদি এর চেয়ে কিছুটা বেশিও হয়, তবু পশুর কোনো সংকট হবে না। আর সহকারী পরিচালক এবিএম খালেদুজ্জামান জানান, গত বছর যে পরিমাণ পশু জবাই হয়েছিল এবার তার চেয়ে ১২ লাখ বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। তাই কোরবানিতে পশুর কোনো সংকট হবে না এবং ন্যায্যমূল্যে গবাদিপশু কেনাবেচা হবে।
জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু বলেন, এবার কোরবানিতে গরুর কোনো সংকট হবে না। এ ছাড়া কাঁচা চামড়াও যাতে ন্যায্য দামে বিক্রি হয় সেটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সতর্কদৃষ্টি রাখা হবে। আশা করছি, কোরবানির বাজার পরিস্থিতি এবার স্বাভাবিক থাকবে। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, এবার কোরবানিতে পশুর চাহিদা যতই হোক না কেন, তাতে পশু সংকট তৈরি করবে না। কেননা, দেশের খামারগুলোতে পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। এ ছাড়া ভারত থেকে গরু আসছে। মিয়ানমার থেকেও কিছু গরু আসে। এ কারণে এবারের কোরবানিতে পশুর দামও সহনীয় থাকবে। তবে ভারত থেকে গরু আসার পরিমাণ এখনকার মতো থাকলে দেশের খামারিরা পশুর ন্যায্য দাম থেকেও বঞ্চিত হবেন।