এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ফ্লোরিডায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ডি-এল পদ্ধতিতে ১৯ রানে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাটিং করে ৫ উইকেটে ১৮৪ রান তোলে বাংলাদেশ। লিটন করেন ৩২ বলে ৬১। ১৭.১ ওভারে বৃষ্টিবাধায় খেলা থেমে যাওয়ার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করতে পারে ৭ উইকেটে ১৩৫। মোস্তাফিজ নিয়েছেন ৩১ রানে ৩ উইকেট
‘পোলা তো নয় সে আগুনেরই গোলা’, ১৭.১ ওভারে বৃষ্টিতে খেলা থেমে গেলে ফ্লোরিডার লডারহিল স্টেডিয়ামে বেজে উঠল মমতাজের জনপ্রিয় গানটা। গ্যালারিভর্তি লাল-সবুজের সমর্থকের উপস্থিতিই হয়তো ডিস্ক জকিকে বাংলা গান বাজাতে উৎসাহিত করেছে। ডিস্ক জকি বাংলা গান বাজিয়েছেন আর লডারহিলে সাকিবরা গেয়েছেন বিজয়ের গীত। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ১৯ রানে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজও জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ।s
১৮৫ রানের বড় লক্ষ্যে খেলতে নেমে স্বচ্ছন্দে এগোতেই পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টি-টোয়েন্টিতে সব সময়ই দুর্দান্ত, এমন পরিচিতি থাকা ক্যারিবীয়দের বড় বিবর্ণ দেখা গেল ফ্লোরিডায়। টপ অর্ডারের ব্যর্থতার পর ম্যাচ একটা সময় হয়ে গেল আন্দ্রে রাসেল বনাম বাংলাদেশ। একদিকে সতীর্থরা আত্মসমর্পণ করছেন, অন্যদিকে রাসেল চালিয়ে যাচ্ছেন। মোস্তাফিজুর রহমানের ফুলটস উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে একেবারে সীমানার কাছে যখন আরিফুল হকের ক্যাচ হলেন ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলিং অলরাউন্ডার, বাংলাদেশ দলের উচ্ছ্বাস দেখে কে! ম্যাচের ফল যেন নির্ধারণ হয়ে গেছে ওই আউটেই। আসলেই তা-ই। ২১ বলে ৪৭ রান করা রাসেল ফিরতেই ঝেঁপে নামল বৃষ্টি! বৃষ্টির পর আর খেলা হয়নি। ১৭.১ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩৫ করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেমে গেল ওখানেই। ডি-এল পদ্ধতিতে জিতে গেল বাংলাদেশ। সাকিব-তামিমরা অবশ্য আবার মাঠে নামলেন, তবে আর খেলতে নয়, ‘ল্যাপ অব অনার’ দিতে। মিরাজ-মোসাদ্দেকরা বিজয় উদ্যাপন করলেন নাচতে নাচতে!
উইন্ডিজকে হারানোর শক্তি বাংলাদেশ পেয়ে যায় দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পরই। টস জিতলে ব্যাটিং আর ব্যাটিংয়ে নেমে ঝোড়ো শুরু—এই সূত্র মেনেই সিরিজনির্ধারণী টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা খেলতে নামে বাংলাদেশ। লিটন দাস দুর্দান্ত খেললে বাংলাদেশ যে উড়ন্ত শুরু পায়, সেটি গত মার্চে নিদাহাস ট্রফিতে দেখা গেছে। আজ লডারহিলে আরেকবার দেখা গেল। লিটন-তামিমের উদ্বোধনী জুটি যে অসাধারণ শুরু এনে দিয়েছে, সেটি কাজে লাগিয়ে উইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ পেয়েছে ৫ উইকেটে ১৮৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর।
দুর্দান্ত শুরুতে পাওয়ার প্লে দারুণ কাজে লাগানো বাংলাদেশের সামনে ২০০ তোলা কঠিন কিছু ছিল না। শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি। প্রথম ১০ ওভারে ৩ উইকেটে ৯৭ করা বাংলাদেশ পরের ১০ ওভারে করেছে ২ উইকেটে ৮৭। ১৬.৩ ওভারে ১৫ মিনিটের বৃষ্টি-বিরতির পর রানের গতি কিছুটা শ্লথ হলেও শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহর ২০ বলে ৩২ রানের ছোট্ট ঝড়টা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর গড়তে সহায়তা করেছে। এর আগে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ছিল ১ উইকেটে ১৭৯।
অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশ শুরুই করে বাউন্ডারি দিয়ে। স্যামুয়েল বদ্রিকে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে বাউন্ডারি মেরে লিটন জানিয়ে দেন, আজ নিজেকে একটু অন্যভাবে উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন তিনি। দ্বিতীয় ওভারে অ্যাশলি নার্সের শেষ তিন বলে ৬, ৬, ৪ মেরে রানরেট এক ঝটকায় ১২-র ওপরে নিয়ে গেলেন। উদ্বোধনী জুটির তরুণ সঙ্গীকে সাহস দিতে থাকা তামিম ইকবালও শুরু করলেন আক্রমণ। তৃতীয় ওভারে তামিম-লিটন দুজনই ঝাঁপিয়ে পড়লেন আন্দ্রে রাসেলের ওপর। ওই ওভারে উঠল ১৯। ২২ বলে ৫০ পেরিয়ে গেল বাংলাদেশ, যেটি তাদের সবচেয়ে দ্রুত।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। ছবি: এএফপি
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। ছবি: এএফপি
শুরুতেই বাংলাদেশের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করলেন কার্লোস ব্রাফেট। শুধু মুখে নয়, কাজেও সতীর্থদের জেগে ওঠার বার্তা দিলেন উইন্ডিজ অধিনায়ক। শর্ট ফাইন লেগে উইলিয়ামসের ক্যাচ বানিয়ে ১৩ বলে ২১ রান করা তামিমকে ফেরালেন ব্রাফেট। ভাঙল বাংলাদেশের ২৮ বলে ৬১ রানের উদ্বোধনী জুটি। নিজেকে হারিয়ে খোঁজা সৌম্য সরকার বাউন্ডারি দিয়ে শুরু করলেও টিকলেন মাত্র ৪ বল। কিমো পলের শিকার হয়ে আউট ৫ রান করে। তামিম-সৌম্যকে হারালেও পাওয়ার প্লে দারুণ কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশ। তুলেছে ২ উইকেটে ৭১। এর মধ্যে ৪৫ রানই লিটনের (১৭ বলে)। বাংলাদেশ দলের তরুণ ওপেনার ফিফটি ছুঁয়েছেন ২৪ বলে, সাদা বলে যেটি তাঁর প্রথম ৫০ পেরোনো। লিটন ফিরলেন কেসরিক উইলিয়ামসকে তুলে মারতে গিয়ে। তার আগে করে গেলেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ৬১ রান।
লিটন-তামিমের পর আরেকটি বড় জুটি হয়নি বাংলাদেশের। লিটন-মুশফিকের তৃতীয় উইকেটে ৩১ রানের পর মাহমুদউল্লাহ-সাকিব আল হাসানের পঞ্চম উইকেটে ৩১ বলে ৪৪ রানের জুটি আরও বড় না হওয়ার আক্ষেপ জাগিয়েছে। অসাধারণ শুরুর পর বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জিং স্কোর পাবে কি না, একটা সময় সে সংশয়ও জেগেছে। তবে মাহমুদউল্লাহ-আরিফুল হকের অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে যোগ করা ২৫ বলে ৩৮ রান বাংলাদেশ ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সর্বোচ্চ স্কোর গড়তে সহায়তা করেছে।
সেন্ট কিটসে তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথমটি হেরে যাওয়ার পর ফ্লোরিডায় দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানো। আর আজ ১৯ রানে হারিয়ে সিরিজটাই জিতে নেওয়া, ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দুর্দান্ত বাংলাদেশকেই দেখা গেল। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমেই বাজিমাত! মার্কিন মুলুকে টানা দুটি ম্যাচই জেতেনি, বিদেশের মাটিতে দ্বিতীয়বারের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।
সাকিবদের এই অসাধারণ পারফরম্যান্সে অবিরত সমর্থন জানিয়ে গেছে লডারহিলে উপস্থিত হাজারো বাংলাদেশি প্রবাসী। লডারহিলের গ্যালারি দেখে কখনোই মনে হয়নি বাংলাদেশ খেলছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ‘ঘরের মাঠে’! দর্শকদের ভালোবাসার জবাবও সাকিবরা কী দারুণভাবে দিয়েছেন। ক্যারিবীয় দ্বীপে ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর ফ্লোরিডার লডারহিলে গ্যালারিভর্তি লাল-সবুজ সমর্থকদের সাক্ষী রেখে তাঁরা জিতলেন টি-টোয়েন্টি সিরিজটাও।