এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : কোরবানির ঈদ আসার আগেই এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে উঠেন। ইতিমধ্যে সিন্ডিকেট করে তারা বাড়িয়ে দিয়েছে পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ বিভিন্ন ধরনের মসলার দাম। এ কারণে ঈদের প্রায় এক মাস আগে থেকেই ভোক্তারা বাড়তি খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু এসব ব্যবসায়ীকে এ সুযোগ দিতে চায় না সরকারসংশ্লিষ্টরা। তাই পণ্যের দাম ভোক্তার নাগালে আনতে দু’দিনের মধ্যে বিশেষভাবে মাঠে নামছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বিশেষ বাজার মনিটরিং সেল। এ সময় ঈদের আগে রাজধানীসহ সারা দেশের কোরবানির পশুর হাটগুলোতে থাকবে বাড়তি নজরদারি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, অন্য বছরের মতো এবার যাতে কোনোভাবেই পণ্যের দাম না বাড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে। তাই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কোরবানির ঈদ ঘিরে বিশেষভাবে মনিটরিং সেল নামানো হবে- যাতে অসাধুভাবে কোনো ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়াতে না পারেন। এছাড়া এবার দেশে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে বিশেষ নজরদারি করা হবে। কোনোভাবে যাতে ভোক্তা প্রতারিত না হয় এ জন্য সার্বিকভাবে কাজ করা হবে। যারা অনৈতিক কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর্থিক জরিমানাসহ প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেয়া হবে।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের আগেভাগে বাজার মনিটরিংয়ের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কোরবানির ঈদ আসার আগেই মসলাসহ সব ধরনের খাদ্য পণ্যের বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হয়। এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। তবে এবার দেশে পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দাম বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। তবুও বাড়ছে। তবে পণ্য ও কোরবানির পশু হাট-বাজারে আনতে ব্যবসায়ীরা যেন চাঁদাবাজির শিকার না হন, সেদিকে সরকারকে নজরদারি বাড়াতে হবে- রাখতে হবে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা।
অধিদফতর সূত্র জানায়, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে দেশের বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযানও চালানো হয়েছে। এছাড়া দুয়েক দিনের মধ্যে রাজধানীর পাইকারি বাজারে অভিযান শুরু হবে।
এ বিষয়ে অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ইতিমধ্যে অধিদফতরের পক্ষ থেকে বাজার অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। আর ঈদের আগ পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। আর এ অভিযানে সঙ্গে থাকবে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা। এছাড়া নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি করলে বা খাবারে ভেজাল দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, যা সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।
মঙ্গলবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজারমূল্য পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এক মাস আগে দেশি পেঁয়াজের দাম দেয়া আছে ৪০-৫০ টাকা- যা মঙ্গলবারের দাম দেয়া আছে ৫০-৬০ টাকা। সে ক্ষেত্রে মাসের ব্যবধানে দাম বাড়ার চিত্র দেয়া আছে ২২ দশমিক ২২ শতাংশ। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম দেয়া আছে ৩৫-৪০ টাকা- যা এক মাস আগে ছিল ৩৫-৪০ টাকা। মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আদা বিক্রির দাম দেয়া আছে ৮০-১৪০ টাকা, যা এক মাস আগে ৭০-১২০ টাকা ছিল। সেক্ষেত্রে মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। রসুনের দাম দেয়া আছে ৭০-৯০ টাকা- যা এক মাস আগে ছিল ৬০-৮০ টাকা। মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। এছাড়া এলাচের দাম দেয়া আছে ২ হাজার ২০০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা। মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
কারওয়ান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা জাহিদুল ইসলাম বলেন, যে যেভাবে পারছে সেভাবেই মসলা বিক্রি করছে। কোরবানির ঈদ আসার আগেই ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ সব ধরনের মসলার দাম বাড়িয়ে দেয়। এসব পণ্য কিনতে এসে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ঈদের এক বা দুই সপ্তাহ আগে বাজার বিশেষভাবে মনিটরিংয়ের কিছু নাই। কারণ ব্যবসায়ীরা যে পণ্যে অতি মুনাফা করবে, তা এক মাস আগ থেকেই বাড়িয়ে দেয়। আর ঈদের আগে তোড়জোড় করে মনিটরিংয়ের ফলে দাম কমে। কিন্তু দেখা যায়, দাম কমানোর আগে ব্যবসায়ীরা যে টাকা মুনাফা করা দরকার সেটা করে নেয়। তাই সরকারের নিয়মিত খুচরা বাজার মনিটরিং করলে সাধারণ ক্রেতাদের এত বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না।
খুচরা মসলা বিক্রেতা সোহাগ বলেন, পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে তারা কিনছেন। ফলে দাম বাড়াতে হয়েছে। খুচরা বাজারে কখনোই মসলার দাম বাড়ানো হয় না। দাম বাড়ায় বা কমায় আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতারা।
কারওয়ান বাজারের উপহার স্টোরের বিক্রেতা চুন্নু মিয়া যুগান্তরকে বলেন, মসলার বাজার পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। আমদানি কম হলে বাজারে সরবরাহ কম থাকে। এতে কিছুটা দাম বেড়ে যায়। তবে কোরবানির ঈদ এলেই মসলা আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে এর দাম বাড়িয়ে দেয়। তারা দাম বাড়ালে আমাদের মতো পাইকারদেরও বাড়তি দামে কিনতে হয়- যার প্রভাব খুচরা বাজারেও এসে পড়ে।