এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল শনিবার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি দেখতে মংডু শহর পরিদর্শন করেছে।
পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক ও জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের কয়েকজন সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। প্রতিনিধি দলটি দুপুরে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তো থেকে মংডুর পথে যাত্রা করে। ইউএনবি।
মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উইন মিয়াট আইয়িও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন। এ বিষয়ে ইয়াঙ্গুনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী মংডু সফর করেছেন। তারা এখন সিত্তোয় ফিরে আসছেন। আমরা তাদের জন্য অপেক্ষা করছি। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল মংডু থেকে ফিরে আসার পরই তারা ইয়াঙ্গুন ফিরে যাবেন।
মিয়ানমারের নেতাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার তার চার দিনের মিয়ানমার সফর শুরু করেন। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমার এখন পর্যন্ত কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা দেখতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল দেশটি সফরে আছে।
এখন থেকে কক্সবাজারে বসবাসরত রোহিঙ্গারা তাদের প্রাথমিক প্রত্যাবাসনের জন্য নিজেরাই যাচাইকরণ ফর্ম পূরণ করবে বলে শুক্রবার সম্মত হয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। মিয়ানমার স্টেট কাউন্সিলর কার্যালয় মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের মধ্যে যাচাইকরণ ফর্ম বিতরণ করা হবে এবং তারা এগুলো পূরণ করবে। স্বাক্ষর, আঙুলের ছাপ এবং ছবি দিয়ে ফর্ম পূরণ করে রোহিঙ্গারা তা স্বেচ্ছায় ফিরিয়ে দেবে এবং মিয়ানমারের যাচাইকরণ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করবে।
রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতনে কক্সবাজারে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন উচিত বলে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। মিয়ানমার দাবি করেছে, বর্তমানে কক্সবাজারে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের আইডি কার্ডের ভাষা সংশোধন করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ।
নাপিদোতে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। এ বিষয়ে আলোচনা সহজ করার জন্য মন্ত্রীদের মাঝে একটি হটলাইন স্থাপন করা হয়েছে। বৈঠকে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর কার্যালয় মন্ত্রণালয়ের ইউনিয়নমন্ত্রী কিয়াও টিন্ট সুই। ইউনিয়নমন্ত্রী থিন সুই ও ড. উইন মিয়াট আয়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এবং উভয় দেশের প্রতিনিধিরা বৈঠকে যোগ দেন।
রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে ২০১৭ সালের নভেম্বরে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সরকারের মাঝে যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছিল তার বাস্তবায়ন নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। চুক্তি মেনে নিয়ে মিয়ানমার দুটি অভ্যর্থনা কেন্দ্র এবং একটি ট্রানজিট শিবির তৈরি করেছে। বাংলাদেশকে পাঁচটি ট্রানজিট শিবির তৈরির অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে। এসবের মধ্যে একটি সম্পন্ন হয়েছে, আরেকটির নির্মাণ চলছে এবং বাকি তিনটি তৈরি করা হবে।
উভয় পক্ষ গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, সীমান্তরক্ষী কর্মকর্তাদের মাঝে নিবিড় সহযোগিতা ও অধিক সমন্বয় করে সীমান্ত টহলের মাধ্যমে সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করার বিষয়ে একমত হয়। তারা বাংলাদেশ ও মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্তের পাশে বর্তমানে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়েও সম্মত হয়েছেন।