এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে রাখাইন রাজ্যে সহায়ক পরিবেশ এবং প্রত্যাবাসিতদের পুনর্বাসনে ঘর ও গ্রাম তৈরির কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার সফরকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের তরফে এ তাগিদ দেয়া হয়। প্রতিনিধিদলে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকসহ প্রত্যাবাসন বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্যরা ছিলেন। প্রতিনিধিদলটি রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন এবং সেখানকার ব্যাপক ধ্বংসলীলার চিহ্ন দেখেছেন।
ঢাকায় ফিরে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এমনটাই জানিয়েছেন। এক কর্মকর্তা বলেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে ওই এলাকা ঘুরে দেখিয়েছেন মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উইন মিয়াত আয়ের। প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সীমান্তের শূন্য রেখার ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পিলারের মাঝে বসবাসরত উদ্বাস্তুদের অবস্থাও দেখানো হয়।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন- সীমান্তে থাকা ওই রোহিঙ্গাদের তাদের আসল গ্রামে দ্রুত পুনর্বাসন করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশও তাই চায়। মিয়ানমার এসব বাস্তুচ্যুতদের বাংলাদেশ থেকে রেডক্রস/ইউএনডিপি/আইএনজিও’র মাধ্যমে মানবিক সাহায্য দেয়া বন্ধ করার বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে। তারা মিয়ানমার থেকেই তাদের মানবিক সাহায্য সরবরাহের ব্যবস্থা করারও প্রস্তাব দিয়েছে।
এ নিয়ে খোদ কর্মকর্তাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। মন্ত্রীসহ দায়িত্বশীল প্রতিনিধি মিয়ানমারের এ প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। সীমান্তের ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পিলারের মাঝে নতুন করে একটি যৌথ জরিপ চালানোর প্রস্তাবেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে যারা ফিরতে চায় তাদের জন্য আবাসন তৈরির কাজ করছে। যা মন্ত্রীকে দেখানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুটি অভ্যর্থনা কেন্দ্র ও একটি ট্রানজিট শিবির এবং ভারত সরকারের সহায়তায় ১৪৮টি ঘর এবং মিয়ানমার সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে আরো ৫০টি ঘর তৈরি হয়েছে। কর্মকর্তাদের মতে, ২০০৬ সালের অক্টোবর এবং ২০১৭ সালের ২৫শে আগস্টের পর প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। চুক্তিতে নবাগত ওই রোহিঙ্গাদের সবাইকে ফেরানোর কথা হয়েছে। গত নভেম্বরে চুক্তিটি হয়েছে। এ পর্যন্ত মিয়ানমার ১৯৮টি বাড়ি তৈরি করেছে, যা তার মন্ত্রীসহ বাংলাদেশ দলকে দেখিয়েছে। এটি অত্যন্ত অপ্রতুল! তবে বাংলাদেশ দল খুশি যে, মিয়ানমার তাদের সেই অপ্রতুল প্রস্তুতির মধ্যে বাংলাদেশকে সেখানে নিয়ে যাওয়ায় কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমার সরকার রাখাইনে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী ও ধর্ম বিশ্বাসের লোকজনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বিষয়ে একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছে। তারা এ-ও দেখানোর চেষ্টা করেছে যে, রাখাইন পরিস্থিতি স্বাভাবিক! কিন্তু বাস্তবতা নিয়ে এখনো আন্তর্জাতিক ভাবেই প্রশ্ন রয়েছে। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মনের ভয় এখনো দূর হয়নি। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ভয় দূর করা এবং প্রত্যাবাসনে আশ্বস্ত করার উদ্যোগ দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল মিয়ানমারের ওই সব উদ্যোগের বাস্তবায়ন কামনা করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের পেন তোও পিয়ান গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই গ্রামে প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দার বসবাস ছিল। যাদের অধিকাংশই এখন বাংলাদেশে অস্থায়ী আশ্রয়ে রয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এবারের সফরে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচির দেখা পাননি। ঢাকা ও ইয়াংগুন মিশনের তরফে সুচির অ্যাপয়েনমেন্ট পাওয়ার চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। কিন্তু সেটি হয়নি। অবশ্য মন্ত্রী যখন নেপিডতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর কার্যালয়ের ইউনিয়ন মিনিস্টার কিয়াও থিন সুইয়ের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন তখন সুচি রাজধানীর বাইরে দেশটির মধ্যাঞ্চলে সেনাদের একটি কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন।