এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : হঠাৎ করে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের খরচ প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোকে বিটিআরসি যে নির্দেশনা দিয়েছে তাতে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। দেশের প্রায় ১৪ কোটি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। বিটিআরসির নির্দেশনার আলোকে ১৪ আগস্ট মঙ্গলবার থেকে এই ১৪ কোটি গ্রাহক প্রায় দ্বিগুণ খরচে মোবাইল ফোনে কথা বলতে হবে। সর্বনিম্ন কলরেট ২৫ পয়সা থাকলেও নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী ১৩ আগস্ট রাত ১২টার পর থেকে ৪৫ পয়সার কম রেট রাখতে পারবে না কোনো অপারেটর। সেই সাথে যুক্ত হবে সরকার নির্ধারিত ভ্যাট। ফলে সরকারি এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রায় দ্বিগুণ খরচ বেশি করতে হচ্ছে ১৪ কোটি গ্রাহককে। এছাড়া বর্তমানে সর্বোচ্চ কলরেট ১ টাকা ৪৫ পয়সার স্থলে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২টাকা। সেক্ষেত্রেও ভ্যাট-ট্যাক্সের পরিমাণ নির্ধারিত হারে বাড়বে।
জানা গেছে, বর্তমানে গ্রামীণ ফোনের গ্রাহক সংখ্যা সাত কোটির বেশি। আর এয়ারটেল ও রবি একীভূত হওয়ার পর তাদের গ্রাহক সংখ্যা চার কোটির মতো। আর বাংলা লিংকের গ্রাহক প্রায় তিন কোটি। তবে সরকারি মালিকানাধীন টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা এক কোটিরও কম। টেলিটকের গ্রাহকদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ কল আসে নিজস্ব অপারেটর (অন-নেট) থেকে। বাকি ৯০ শতাংশ অন্য (অফ-নেট) অপারেটরের। অপরদিকে গ্রামীণ ফোনের বেলায় চিত্রটি সম্পূর্ণ উল্টো। এছাড়া বাকি তিন অপারেটরের বেলায় অন-নেট ৭০ শতাংশের মধ্যে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত টেলিটককে সুবিধা দিতেই নতুন কলরেটের ‘অবৈধ’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি। যা জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নতুন কলরেট অনুযায়ী, মোবাইল অপারেটরগুলো ৪৫ পয়সার নিচে কোনো কলরেট নির্ধারণ করতে পারবে না। এই কলরেট সর্বোচ্চ ২ টাকা পর্যন্ত হবে। এরই মধ্যে দেশের সব মোবাইল ফোন অপারেটরকে এই নির্দেশনা পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। অপারেটরগুলো এই নির্দেশনা কার্যকরের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, এখন থেকে আর মোবাইলে অফ-নেট ও অন-নেট থাকছে না। কলরেটের নতুন সীমা সর্বনিম্ন ৪৫ পয়সা। আর সর্বোচ্চ সীমা ২টাকা। তিনি জানান, ১৪ তারিখ থেকে নতুন কলরেট কার্যকরের কথা বলা হয়েছে।
নতুন এই নির্দেশনায় অফ-নেট (এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটর) ও অন-নেট (অপারেটর টু অপারেটর) সুবিধা বাতিল করা হয়। এখন সর্বনিম্ন কলরেট ২৫ পয়সার পরিবর্তে নির্দেশনা অনুযায়ী ৪৫ পয়সা হবে।
মোবাইল ফোন গ্রাহকদের জন্য কলরেট বৃদ্ধির নতুন এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সাজেদা আক্তার মনি নামে এক গ্রাহক বলেন, সরকারের নতুন এই সিদ্ধান্তের কোনো যৌক্তিকতা নেই। মোবাইল ফোন গ্রহক পর্যায় কলরেট বৃদ্ধির এই নির্দেশনায় একজন গ্রাহক হিসেবে আমিও ক্ষুব্ধ। কারণ, এখন আমি ২৫ পয়সায় কথা বলছি। সেটি ৪৫ পয়সা দিতে হবে। এটা কোনো নিয়ম হতে পারে না। সরকার মোবাইল কোম্পানিগুলোকে গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিতে বাধ্য করতে পারে না। বরং সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে কলরেট কমিয়ে আনতে অপারেটকে চাপ দেয়া। এক্ষেত্রে অফ-নেট আগে ৬০ পয়সার ক্ষেত্রে নামিয়ে ৪৫ পয়সা করলে গ্রাহকরা খুশি হতো। কিন্তু বিটিআরসির নতুন সিদ্ধান্ত গ্রাহকের পক্ষে না হয়ে মোবাইল অপারেটরদের পক্ষে বাড়তি সুবিধা দিবে।
তিনি বলেন, দর বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তে আমি একা নয়, দেশের ১৪ কোটি গ্রাহকের পকেট কাটবে। একই ধরনের মন্তব্য করেছেন আরও অনেকে।
অপর এক গ্রাহক বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান টেলিকটককে বিশেষ সুবিধা দিতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে। এই পদ্ধতি চালু হলে গ্রাহকদের কথা বলার খরচ বেড়ে যাবে। কারণ, এখন একই অপারেটরে কথা বললে যে অন-নেট সুবিধায় ২৫ বা ৩০ পয়সায় কথা বলা যেত, সেটি আর থাকবে না। মোবাইল ফোন যারা ব্যবহার করেন তাদের একটি বড় অংশই একাধিক সিম ব্যবহার করেন। এর অন্যতম কারণ ছিল অন-নেট সুবিধা নেয়া।
তবে হঠাৎ কেন এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে বিটিআরটির পক্ষ থেকে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিটিআরসির হঠকারী ও গণবিরোধী এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে গ্রহকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হবে।