এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সাংবাদিক শহিদুল আলমকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। তাকে নির্যাতনের সব অভিযোগের নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে মিডিয়া কর্মীদের জন্য নিরাপদ ও উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
ওদিকে শহিদুল আলমের মুক্তি চেয়ে খোলা চিঠি দিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ স্টিগলিজসহ ১৩ বিশিষ্ট ব্যক্তি। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার পর গ্রেপ্তার করে ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলমকে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ আছে।
তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক যেসব বিশেষজ্ঞ তাদের মধ্যে রয়েছেন মাইকেল ফোর্সট, ডেভিড কাই এবং সিওঙ্গ-ফিল হোং। এর মধ্যে মাইকেল ফোর্সট হলেন স্পেশাল র্যাপোর্টিউর অন দ্য সিচুয়েশন অব হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস। ডেভিড কাই হলেন স্পেশাল র্যাপোর্টিউর অন দ্য প্রমোশন অ্যান্ড প্রটেকশন অফ দ্য রাইট টু ফ্রিডম অব অপিনিয়ন অ্যান্ড এক্সপ্রেশন। সিওঙ্গ-ফিল হোং হলেন চেয়ার-র্যাপোর্টিউর অব দ্য ওয়ার্কিং গ্রুপ অন আরবিট্রারি ডিটেনশন।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ছাত্র বিক্ষোভ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে শহিদুল আলমের সাক্ষাৎকার প্রকাশ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাকে তার ঢাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ৫ই আগস্ট। পরের দিন তাকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় তার ওপর নির্যাতনের চিহ্ন তিনি দেখিয়েছেন বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ওই বিশেষজ্ঞরা আরো বলেছেন, ‘শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার ও তার ওপর অত্যাচার চরম উদ্বেগের বিষয় (এক্সট্রিমলি ওরিং)। টিনেজার শিক্ষার্থী ও অন্যরা, যারা বাংলাদেশে অধিকতর সুশাসন, সংস্কার ও ন্যায়বিচার দাবি করছিল তাদেরকে দমনের একটি সাধারণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এটা ঘটানো হয়েছে।
এই একই দাবি করছে মিডিয়ার কর্মীরা ও নাগরিক সমাজের অন্যরাও। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি শহিদুল আলমকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে। একই সঙ্গে তাকে নির্যাতনের যেসব অভিযোগ আছে তার সবগুলোর বিষয়ে কার্যকর ও পক্ষপাতিত্বহীন তদন্ত করতে হবে। আমরা মিডিয়া কর্মীদের জন্য একটি নিরাপদ ও উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্যও আহ্বান জানাচ্ছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি।
শহিদুলের মুক্তি চেয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিজসহ ১৩ বিখ্যাত ব্যক্তির খোলা চিঠি
বাংলাদেশে আটক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের মুক্তি চেয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিজসহ বিশ্বের আরো ১৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। বৃটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানে প্রকাশিত ওই চিঠিতে শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তারের ঘটনাকে বিধিবহির্ভূত আখ্যা দেয়া হয়। বলা হয়, এটা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন। একই সঙ্গে তার গ্রেপ্তারে ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক বিধি এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সংস্কৃতিক বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিধির লঙ্ঘন হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানান।
চিঠিতে ঢাকা ট্রিবিউনের একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে তারা বলেন, উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে গত ৫ই আগস্ট শহিদুল আলমকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তিনি নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দু’দিন পরে তাকে আদালতে নেয়া হয়। এ সময় তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। তিনি উচ্চস্বরে বলেন, ‘আমি একজন আইনজীবী চেয়েও পাইনি। আমাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমার রক্তমাখা পোশাক ধুয়ে তা আবার পড়ানো হয়েছে। হুমকি দেয়া হয়েছে, তাদের কথামতো না চললে আবার আমাকে … (অসপষ্ট)।’
চিঠিতে শহিদুলকে গেপ্তারের ঘটনাকে সরকার ও এর সমর্থক বাহিনীর চলমান বেআইনি ও সহিংস কর্মকাণ্ডের নজির আখ্যা দেয়া হয়েছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর রাবার বুলেট ব্যবহারের সমালোচনাও করা হয়েছে এতে। চিঠিতে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, সকল গণতন্ত্রের জন্য মুক্ত গণমাধ্যম মৌলিক ও অপরিহার্য উপাদান। কোনোভাবেই সংবাদ মাধ্যমের অবমাননা মেনে নেয়া যায় না। শহিদুল আলমের ওপর নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানান তারা।
চিঠিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিজ ছাড়া অন্য স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ভারতের পিপলস সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের সহ-সভাপতি বিনায়ক সেন, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী সিপভাক, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জুডিথ বাটলার ও অ্যাঙ্গেলা ডেভিস উল্লেখযোগ্য।