এশিয়ান বাংলা, ঢাকা: চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংলাপের আহ্বান জানালে কোনো শর্ত ছাড়াই সাড়া দিতে প্রস্তুত বিএনপি। তবে এ আহ্বান কোনো সভা-সমাবেশে বক্তব্যের মাধ্যমে নয়, সেটি হতে হবে আনুষ্ঠানিকভাবে।
সোমবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মুলতবি সভায় সর্বসম্মতভাবে এমন মত পোষণ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এর আগে গত শনিবার ছয় ঘণ্টা বৈঠক শেষে সেটি মুলতবি করা হয়।
সূত্র জানায়, বৈঠকে কোনো কোনো নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে বহুবার সংলাপের আহ্বান জানালেও এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল কোনো সাড়া দেয়নি। এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে আর আহ্বান না জানানোর জন্যও মত দেন তারা।
এছাড়া বৈঠকে আগামী দিনের আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে মতামত দেন নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির নেতারা। আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত না হলেও পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামার বিষয়ে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। পাঁচ দফা হল- দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ম্যাজিস্ট্রেসি’ ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা সব সময়ই সংলাপের পক্ষে। কারণ বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। সংলাপের মাধ্যমেই সবকিছু সমাধান করা সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি। সংলাপের প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে এলে আমরা অবশ্যই সাড়া দেব।
তিনি বলেন, সংলাপের মাধ্যমে সমাধান না হলে দাবি আদায়ে বিএনপির আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই।
সর্বশেষ ২০ জুলাই রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে পাঁচ শর্তের কথা জানান। এ সময় তিনি দাবি আদায়ে আন্দোলনের বিকল্প নেই বলেও জানান। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানেও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ওই পাঁচ দফা দাবির কথা উল্লেখ করেছেন।
সূত্র জানায়, সোমবারের বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনার পর জাতীয় ঐক্যের খসড়ায় মতৈক্যে পৌঁছেছে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। তবে তা চূড়ান্ত করতে দলের মহাসচিবকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া আন্দোলনের কর্মকৌশলের একটি খসড়া নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়। তবে দলের নির্বাহী কমিটির সভার পর আন্দোলনের খসড়া চূড়ান্ত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্বাহী কমিটির সভার তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। তবে ঈদুল আজহার পর যে কোনো দিন এ সভা হবে বলে জানা গেছে।
স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, বৈঠকের সিদ্ধান্ত সারমর্ম আকারে লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে সবুজ সংকেত পেলে পরবর্তীকালে তা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে বিএনপি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা বিএনপির : পহেলা সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, পহেলা সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকায় সমাবেশ করার। আমরা এ সমাবেশ করার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে করতে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেব।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহদফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ।
কোটা সংস্কারের বিষয়ে সরকারের সচিব পর্যায়ের কমিটি দীর্ঘসূত্রতার কৌশল নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, এখন সচিব পর্যায়ের কমিটি প্রায় সর্বপর্যায়ের কোটা তুলে দেয়ার প্রস্তাব করেছে।
কিন্তু আদালতের রায়ের কথা উল্লেখ করে কোটা সংস্কারের আরও প্রলম্বিত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অথচ কোটার বিষয়ে আদালতের কোনো রায় নেই, পর্যবেক্ষণ আছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিল চায় না, তারা কোটা সংস্কার চায়। আবারও সব কোটা বাতিল করার প্রস্তাব মানেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আবারও প্রতারণার কৌশল অবলম্বন। এটিও আরেকটি প্রহসন।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী গ্রেফতারকৃত শিক্ষার্থীদের ঈদের আগেই মুক্তির দাবিও জানান রিজভী। একই সঙ্গে গত কয়েকদিন ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্তির দাবি জানান তিনি।