এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশি কোম্পানি সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান। দেশটির শীর্ষ ৫০ ব্যবসায়ীর মধ্যে তার নাম রয়েছে ৩৪ নম্বরে। দেশটিতে এ গ্রুপটির সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৯১ কোটি মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ৮৪ টাকা হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় যা ৭ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। এই পরিমাণ টাকা চলতি অর্থবছরের বিদেশি অনুদানের দ্বিগুণ। এ ছাড়াও এ টাকা পদ্মা সেতুর ব্যয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। বিশ্বের প্রভাবশালী অর্থ বাণিজ্যের সাময়িকী ফোর্বস ম্যাগাজিন বুধবার এই জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজে প্রকাশিত পানামা পেপার্সে তার নাম ছিল। তিনি সাবেক মন্ত্রী ফারুক খানের ভাই। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আজিজ খান যুগান্তরকে বলেন, আমাদের সব বিনিয়োগ বাংলাদেশে। ফোর্বস ম্যাগাজিন এ বিনিয়োগের ভ্যালু উল্লেখ করেছে। ২০২২ সালের মধ্যে এলএনজি আমদানি ও অন্যান্য খাতে ২৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে আইনত বিদেশে টাকা নেয়ার অনুমোদন নেই। এ ব্যাপারে এখনও নীতিমালাও হয়নি। তবে কেস টু কেস ভিত্তিতে বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) অনুমোদন দিতে পারে। সেক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের একটি শিপইয়ার্ডে বিনিয়োগ আবেদন করেছে সামিট। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিডা সূত্র বলছে, ওই বিনিয়োগের অনুমোদন এখনও দেয়া হয়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশি কোনো ব্যক্তির বিদেশে বিনিয়োগ বা সম্পদ থাকলে অবশ্যই আয়কর ফাইলে উল্লেখ করতে হবে। এক্ষেত্রে সামিটের আয়কর ফাইলে বিষয়টি উল্লেখ আছে কি না, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে অন্যতম গ্রুপ সামিট। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে গ্রুপটি বাজার থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করেছে। ফোর্বসের তালিকায় প্রথম অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুরের আবাসন ব্যবসায়ী রবার্ট অ্যান্ড ফিলিপস। জানা গেছে, ৬৩ বছর বয়সী আজিজ খান এক দশকের বেশি সময় সিঙ্গাপুরে স্থায়ী বাসিন্দা। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, বন্দর, ফাইবার অপটিকস, কমিউনিকেশনস, হসপিটালিটি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, রিয়েল এস্টেট খাতে ব্যবসা রয়েছে সামিট গ্রুপের। সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল সম্প্রতি সিঙ্গাপুর স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এশিয়ায় বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের জন্য এসজিএক্স থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে চায় আজিজ খানের কোম্পানি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ফারুক খানের ভাই। ফারুক খান ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে বাংলাদেশের বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের সিঙ্গাপুর হেডকোয়র্টারে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে আছেন আজিজ খানের মেয়ে আয়েশা আজিজ খান। আজিজ, ফারুকের আরেক ভাই জাফর উমেদ খানও এ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে আছেন।
প্রথমে ট্রেডিং কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও পরে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবসায় এসে দ্রুত উন্নতি হতে থাকে সামিটের। ১৯৯৮ সালে সামিটের প্রথম বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদনে যায়। বর্তমানে সামিটের ১৭টি কেন্দ্র দেশের মোট বিদ্যুতের চাহিদার ৯ শতাংশের জোগান দিচ্ছে বলে তাদের ওয়েবসাইটের তথ্য। সামিট পাওয়ার গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) এবং জাপানের মিৎসুবিশি কর্পোরেশনের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। এর আওতায় ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, দুটি এলএনজি টার্মিনাল, একটি তেলের টার্মিনাল এবং একটি এইচএফওভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।