এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : হজের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সৌদি আরব। প্রস্তুত আরাফাত ময়দান, মিনা, মুজদালিফা ও জামারাত। মক্কা ও মিনার পবিত্র স্থানগুলোয় হজ করতে আসা লাখ লাখ মানুষের ঢল নেমেছে।
প্রচণ্ড ভিড় ও উত্তপ্ত আবহাওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও সৌদি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন এখন পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। তাদের মতে, হজ করতে আসা লোকজন বয়স্ক ও দুর্বল হওয়ায় কেউ কেউ মারা যাচ্ছেন। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, কেউ বিপাকে পড়লে তারা যেন ৯১১ নম্বরে ফোন করেন।
তাদের কল রিসিভ করার জন্য কর্মকর্তারা ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত রয়েছেন। তাৎক্ষণিক জরুরি সেবাসহ চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এ বছর ২০ লাখ মানুষ হজ পালন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তাদের বেশিরভাগই সৌদি আরব পৌঁছে গেছেন। যদিও প্রতিদিনই এহরাম পরে দলে দলে মানুষ আকাশপথে সৌদি আরবে নামছেন।
কিছু কিছু মানুষ স্থলপথেও আসছেন। বিদেশিরা মক্কা নগরীতে গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ ঘিরে তওয়াফ করছেন। সাফা ও মারওয়া পাহাড় প্রদক্ষিণ করছেন। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও মিলাদ পড়ছেন। সবাই পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে পাপের জন্য ক্ষমা চাইছেন।
কেউ কেউ আবার কিছুটা সময় হাতে পেয়ে মদিনা মনোয়ারায় গিয়ে মসজিদে নববিতে নামাজ আদায় ও মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর রওজা শরিফে দোয়া ও মিলাদ পড়ছেন। ১৯ আগস্ট শুরু হচ্ছে হজ।
ওই দিন আরাফাতের ময়দানে হাজীরা গিয়ে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনি দেবেন। মক্কা নগরী থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত মিনা নগরীর জামারাত নামক স্থানে যেখানে হাজীরা শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন; সেখানেও যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
মুজদালিফা থেকে পাথর সংগ্রহ করবেন হাজীরা। হাজীদের কোরবানির টাকা জমা নেয়ার প্রস্তুতি সম্পাদন করেছে ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)। এ বছর কোরবানির জন্য ৪৭৫ সৌদি রিয়াল কিংবা ১২৭ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করেছে আইডিবি। এ অর্থ জমা দিয়ে কূপন সংগ্রহ করলে আইডিবির ব্যবস্থাপনায় কোরবানি দেয়া হয়।
সৌদি আরবে হজের প্রস্তুতি সম্পাদনে দেশটিতে ঈদুল আজহার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম বাদশাহ সালমান এই ছুটি ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার ছুটি শুরু হয়েছে। মক্কা নগরীর হোটেলগুলো এখন কানায় কানায় পরিপূর্ণ।
বিশেষ করে পবিত্র কাবা শরিফের আশপাশের হোটেলে কোনো ঠাঁই নেই। কেউ কেউ বাড়ি ভাড়া করে কিংবা দূরবর্তী স্থানে থেকে হজ পালন করছেন। অনেকে জীবনে একবার হজ পালনের সুযোগ পান। তাই তারা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সময় পার করছেন। আরব নিউজ, সৌদি গেজেটের মতো পত্রিকাগুলো হাজীদের মক্কা ও মদিনায় কোথায় কোথায় যাবেন, তার তালিকা দিচ্ছে।
হজের কার্যক্রমের সুবিধার জন্য রাতদিন কাজ করছে সৌদি সরকারের বিভিন্ন বিভাগ। বিমানবন্দরে অতিরিক্ত বুথ চালু করা হয়েছে। হজ কভার করতে বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। সৌদি সংস্কৃতি ও তথ্য মন্ত্রণালয় বিদেশি মিডিয়ার সাংবাদিকদের জন্য নিয়মিত ব্রিফিংয়ের আয়োজন করছে। হজ করতে আসা বিদেশিদের মধ্যে যারা পবিত্র ওমরা সম্পন্ন করেছেন; তারা কাবা শরিফে ইবাদতে মশগুল হচ্ছেন।
সৌদি রেডক্রিসেন্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা হজ উপলক্ষে অতিরিক্ত লোকবল মোতায়েন করেছে। তাদের স্থায়ী লোকবলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্বেচ্ছাসেবীরা। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ও উদ্ধার কাজের জন্য তাদের অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে।
রেডক্রিসেন্ট তাৎক্ষণিক ও জরুরি সেবা প্রদান করে থাকে। প্রতিবছরেই হাজীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পেক্ষাপটে জেদ্দায় অবস্থিত কিং আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন টার্মিনাল অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল শুরু করেছে।
এখন অনেকে মদিনা মনোওয়ারায় গিয়ে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো ঘুরে দেখছেন। মদিনায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হল মসজিদে নববি, যেখানে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর রওজা মুবারক অবস্থিত। মসজিদে নববিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে সব পাঁচতারকা হোটেল। সেগুলো এখন লোকে পরিপূর্ণ। সৌদি সংস্কৃতি ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে আসা সাংবাদিকদের জন্য মদিনায় হোটেল আল ঈমান ইন্টারকন্টিনেন্টালে মিডিয়া সেন্টার খোলা হয়েছে। মসজিদে নববির কিনারা ঘেঁষে থাকা ওই হোটেলে অন্য সময়ে আড়াইশ’ থেকে পাঁচশ’ লোকের ডিনারের ব্যবস্থা থাকে। এই সময়ে তাদের ডিনারে এক হাজারের বেশি লোক হচ্ছে। সব হোটেলে একই চিত্র। সুবিশাল মসজিদে নববিতে আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
লোকজন মসজিদের পানে ছোটছেন। সে এক অভাবনীয় দৃশ্য! মূল মসজিদের ভেতরে জায়গা হচ্ছে না। লোকজন মসজিদের বাইরের চত্বরে নামাজ আদায় করছেন। বাইরে দিনের বেলায় তাঁবু টাঙানো থাকে। তার ওপর ফ্যান দিয়ে হালকা পানি ছিটিয়ে পরিবেশ ঠাণ্টা রাখার চেষ্টা চলে। রাতে তাঁবু খোলা হলেও ফ্যান চলতে থাকে। মসজিদের গেটগুলো রাত সাড়ে ১০টার পর বন্ধ করা হলেও ‘বাবা সালাম’ খোলা থাকে দিনরাত।
বাবা মানে হল দরজা অর্থাৎ ওই গেট দিয়ে প্রবেশ করে নবীজির রওজা মুবারকে সালাম দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। হজ মৌসুমে নবীজির রওজায় ভিড় এতটাই বেশি যে, বেশিরভাগ মানুষই রওজা মুবারকের কাছে যেতে পারেন না। তারা দূরে থেকে সালাম দেন, দরুদ ও দোয়া পড়েন। মদিনায় হাজিরা কুবা মসজিদে যান। সেখানে নামাজ আদায় করেন। মহানবী (সা.) প্রথম এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। হাজীরা কেবলাতাইন মসজিদেও যান।
মুসলমানদের প্রথম কেবলা ছিল জেরুজালেমে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ। ফলে কেবলাতাইস মসজিদে ওই দিকে মুখ করেই নামাজ আদায় করা হতো। তারপর মক্কার কাবা শরিফে কেবলা স্থানান্তরিত হলে এখন তার উল্টো দিকে মুখ করে এখন নামাজ আদায় করা হয়।
কিন্তু কেবলাতাইন মসজিদের ডিজাইনে আল আকসার স্মৃতিও রেখে দেয়া হয়েছে। ওহুদ পাহাড়সহ নবীজির স্মৃতিবিজড়িত অন্য স্থানগুলো এখন বিদেশি হাজীদের পদচারণায় গমগম করছে। তবে যারা হজের আগে মদিনায় যেতে পারবেন না, তারা হজে পরে মদিনা শরিফ যাবেন। সৌদি আরবে হজ করতে আসা বিদেশিদের মধ্যে সাধারণত অর্ধেক লোক হজের আগে মদিনায় যান। বাকিরা হজের পর সেখানে যান।