এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ত্রুর ওপর নজরদারি চালাতে শক্তিশালী ড্রোন বাহিনী গড়ে তুলছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের চলমান দামামার মধ্যে রোবটিক অস্ত্রসজ্জায় তৈরি হচ্ছে বেইজিং। ২০২৫ সালের মধ্যে নিজস্ব প্রযুক্তিতে রোবটিক শিল্পকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে চীন সরকার। এ পরিকল্পনার নাম দেয়া হয়েছে ‘মেড ইন চায়না ২০২৫’। এ প্রকল্পের আওতায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের স্থল, আকাশ ও সমুদ্র পথে ড্রোন সেনা গড়ছে বেইজিং। এছাড়া শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিয়ে ২০২০ সালের মধ্যে মহাকাশেও আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে ড্রাগনের দেশ। রোববার সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রথম থেকেই সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে নজর দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি দেশটির সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) হাতে তুলে দিয়েছে অত্যাধুনিক রোবট ও ড্রোন বা আন আর্মড ভেহিক্যাল (ইউএভি)। সেনা, নৌ, বিমান ও রকেট ফোর্সকে শক্তিশালী করতে কৌশলগত মিসাইল ইউনিট গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছেন জিনপিং। সামরিক শক্তিশালী করতে কৌশলগত মিসাইল ইউনিট গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছেন জিনপিং। সামরিক শক্তিমত্তায় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স ও ভারতকে পেছনে ফেলে দেবে চীনের এ প্রযুক্তি।
প্রায় দেড় টন মালবাহী কার্গো বহনে সক্ষম সিভিলিয়ান ড্রোন তৈরি করছে চীন। চীনা কোম্পানি বেইহ্যাং আননেমড এয়ারক্রাফট সিস্টেম (ইউএএস) এ ড্রোন নির্মাণ করছে। আগামী বছরের মধ্যে এটি উড়তে সক্ষম হবে। মালবাহী এ ড্রোনের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৬ মিটার ও এর পাখার দৈর্ঘ্য ১১ দশকি ৯ মিটার। প্রতি ঘণ্টায় ৪০০ কিলোমিটার চলতে সক্ষম এ যান ১ থেকে দেড় টন কার্গো বহন করতে পারবে। মনুষ্যবিহীন এ যান সর্বোচ্চ ৩ হাজার কিলোমিটার উড়তে সক্ষম। এটি ৬ হাজার মিটার উপরে উড়তে পারে। ইউএএস কোম্পানির চেয়ারম্যান ইন ওয়েই বলেন, ‘আমরা এই ড্রোনের নকশা প্রস্তুত করার সময় এর উচ্চ দক্ষতা, গোয়েন্দাগিরি ও নিরাপত্তাকে বিবেচনায় আনা হয়।’
স্থল ও আকাশ পথের পাশাপাশি নৌপথেও সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে চীন। সমুদ্রতলে চলাচলে সক্ষম ড্রোন বানানোর কাজে হাত দিয়েছে দেশটি। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত তিয়ানজিন সুব্লু ওশেন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কোম্পানি এ ধরনের ড্রোন তৈরি করছে। সুব্লু কোম্পানি বলছে, আগামী বছরের মধ্যে মানুষ্যবিহীন এসব যান সমুদ্রে দাপিয়ে বেড়াবে। রণসজ্জার পাশাপাশি বেসামরিক কাজেরও এ যান ব্যবহার করা যাবে। কোম্পানিটির প্রধান কর্মকর্তা উইয়ে জিয়ানচ্যাং বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে এ ড্রোন বিক্রি করে ১০০ কোটি ইউয়ান রাজস্ব আয় করা সম্ভব। ২০২২ সালের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়াবে ১ হাজার কোটি ইউয়ানে।
চীনের সামরিক বাহিনীর হাতে পৌঁছানো শক্তিশালী রোবটিক যানগুলোর একটি তালিকা রোববার প্রকাশ করেছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
এএসএন সিরিজ : জিয়ান আইশেন টেকনোলজি গ্রুপের তৈরি এ ড্রোন মূলত চীনা সেনাবাহিনী ব্যবহার করে থাকে। মনুষ্যবিহীন উড়ন্ত এ যান অন্যান্য ইউএভি’র মতো দেখতে হলেও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে বহুদূর থেকে আঘাত হানতে সক্ষম।
বিজেডকে-০০৫ বা চ্যানবিং : চীনা নৌবাহিনীর হাতে থাকা অন্যতম অত্যাধুনিক ড্রোন এটি। ২৪০০ কিলোমিটার দূর থেকে শত্রুর উপরে নজরদারি চালাতে সক্ষম এ উড়ন্ত যান। একটানা ৪০ ঘণ্টা কোনো রিচার্জ ছাড়াই আকাশে চক্কর কাটতে সক্ষম এটি।
এএসএন-২০৯ বা সিলভার ঈগল : চীনা নৌবাহিনীর অস্ত্রাগারে থাকা আরেকটি মারণাস্ত্র এটি। ২০১১ সাল থেকে ব্যবহৃত এ যানে রয়েছে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক সিস্টেম। ২০০ কিলোমিটার দূর থেকে নজরদারি চালোতে সক্ষম যানটি।
জিজে-১ বা গংজি : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ড্রোনের সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম চীনা মানববিহীন এ উড়ুক্কু যানটি। এটির পাল্লা ৪ হাজার কিলোমিটার। দশ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম এ ড্রোন দিয়ে আকাশ থেকে মাটিতে হামলা চালানো যায়।
ডব্লিউজেড-৯ বা সোয়ারিং ড্রাগন : ভারতের সঙ্গে চলা ৭৩ দিনের ডোকলাম সমস্যার সময় এই ড্রোন ব্যবহার করে চীন। একসঙ্গে অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় ড্রোনটি। এতে রয়েছে অত্যাধুনিক ও প্রবল ক্ষমতাসম্পন্ন মেমরি সিস্টেম।
ইএ-০৩ : স্থল ও সমুদ্রে যেকোনো পরিস্থিতিতে শত্রুপক্ষের উপরে নজরদারি চালাতে সক্ষম এ ড্রোন। এর পাল্লা ৭ হাজার কিলোমিটার। এটি একাধারে ৩৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম।