এশিয়ান বাংলা, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ করা ভিজিএফের চাল। মঙ্গলবার সকালে জেলার সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের পাঁচটি পুকুর থেকে এ চাল পাওয়া যায়। আর এ চাল পচে পুকুরের মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এ ঘটনায় হরিপুর গ্রাম পরিদর্শন করেছেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মি ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা। ঈদের আগে একই উপজেলার দোগাছী ইউনিয়নের পৃথক তিন গুদাম থেকে ১০৪ বস্তা এবং কালীগঞ্জ থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৪৪৪ কেজি চাল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সোমবার সন্ধ্যার দিকে হরিপুর গ্রামের আজিজুল শাহার মাছের খামার থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। কোরবানির পশুর বর্জ্য পচে এ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এমনটি মনে করেন তারা। মঙ্গলবার সকালের দিকে দুর্গন্ধের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়। একপর্যায়ে লোকজন পুকুরে নেমে পড়েন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতিতে চারটি পুকুরের পানিতে ডুব দিয়ে মুঠো মুঠো চাল তুলে আনতে থাকেন গ্রামবাসী। শুধু সেখানে নয় সিরাজের বাড়ির পাশে ছোট ডোবাতেও চাল পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়।
গ্রামের বৃদ্ধ আবদুল কাদের ও কদম আলী বলেন, চাল পচা গন্ধে বাড়িতে টিকতে পারছেন না তারা। ভিজিএফের চাল পানিতে ফেলে দেয়ার কথা শুনেছেন তারা। তবে কারা এ কাজ করেছে এমন প্রশ্ন করা হলে জড়িতদের নাম বলতে রাজি হননি ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ির চম্পা। গ্রামের পুকুরগুলো থেকে পাওয়া চাল ভিজিএফের বলে দাবি করেন গ্রামবাসী।
ঈদে মহরাজপুর ইউনিয়নের ২৩৪৭ জন হতদরিদ্রর জন্য ৪৭ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, এ চালের বড় একটি অংশ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়।
হরিপুর গ্রামের চাল ব্যবসায়ী আজিজুল শাহা অজ্ঞাত স্থান থেকে মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, ভিজিএফের ৫২ বস্তা চাল কিনেছিলেন তিনি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকটাত্মীয় বিষয়খালী গ্রামের সবুজের কাছ থেকে ২৬ টাকা ৫০ পয়সা কেজি দরে এ চাল কিনেছিলেন তিনি। এ চাল বিষয়খালী বাজারের আছিয়া রাইস মিলের গুদামে রাখেন তিনি। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। ভয়ে হরিপুরে নিজ বাড়িতে চাল নিয়ে যান এবং ঈদের পরের দিন নিজের ও প্রতিবেশীদের পুকুরের পানিতে বস্তা খুলে চাল ছড়িয়ে দেন তিনি। মোবাইল ফোনে আজিজুল আরও বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চাল কিনে বিপদে পড়েছেন এবং বর্তমানে গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন তিনি।
এ চালের বিষয়ে মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খুরশিদ আলম বলেন, ঈদের দু’দিন আগে (২০ আগস্ট) চাল বিতরণ করা হয়। চেয়ারম্যান আরও বলেন, বরাদ্দ চালের একটি অংশ সরকারি দলের স্থানীয় এমপির প্রতিনিধি মফিজুল ইসলাম, পার্থ ঘোষ ও জনি আহম্মেদ বিতরণ করেছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন সরকারি দলের স্থানীয় এমপির এ তিনজন প্রতিনিধি ৭০০ জনের ভিজিএফ কার্ড তার কাছ থেকে নিয়েছেন। চাল বিতরণে অনিয়ম করা হয়েছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, হরিপুর গ্রামের আজিজুল শাহা ধান-চালের ব্যবসা করেন। তার কাছে কেউ চাল বিক্রি করলে কিছুই করার নেই তার।
সদর উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে আরা এ ইউনিয়নে চাল বিতরণ তদারকি করছেন। তার কাছে প্রশ্ন ছিল তার উপস্থিতিতে চাল বিতরণ করা হয়েছিল কিনা। উত্তরে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন তিনি ।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মি ইসলাম বলেন, ভিজিএফের বরাদ্দ করা চাল পানিতে ফেলে দেয়ার ঘটনা দুঃখজনক। খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুুর ১২টার দিকে হরিপুর গ্রাম পরিদর্শন করেছেন তিনি। চাল পানিতে ফেলে দেয়ার ফলে গ্রামের কয়েকটি পুকুর থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে বলেও জানান তিনি। প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধান চলছে। প্রাথমিকভাবে জড়িত চাল ব্যবসায়ী আজিজুল ও সবুজের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ঈদুল আজহার আগের দিন রাতে সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মিঠু জোয়ারদার, কলমনখালীর শরিফুল মোল্লা ও মো. বিপুলের গুদামে অভিযান চালিয়ে ১০৪ বস্তা ভিজিএফের চাল জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার দফতরের কার্য সহকারী জাহিদ হাসান বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা করেছেন।
কালীগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের ১৪৪৪ কেজি ভিজিএফ চাল স্থানীয় জনতা আটক করে পুলিশের কাছে দিয়েছে। ঈদের আগের দিন এ চাল নসিমনে করে কালীগঞ্জের পাইক পাড়ায় আনা হয় বলে জানান ওসি।