এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। যুগপদ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজপথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। এদিন রাজধানীতে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
ঢাকার বাইরে প্রতিটি বিভাগ ও জেলায় নেতাকর্মীদের একই ধরনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের এ ব্যাপারে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। প্রত্যেককে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় উপস্থিত থেকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে বলা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজপথে সক্রিয় থাকার মধ্যেই দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এ লক্ষ্যে নতুন কর্মসূচি দেয়ার চিন্তাভাবনা করছেন তারা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে দ্রুত দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারকে আলটিমেটাম দেয়া হতে পারে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা সব সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। আমাদের নেতাকর্মীরাও নির্বাচনমুখী। নির্বাচন করার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকে।
২০০৮ সালে মাত্র দুই সপ্তাহের প্রস্তুতিতে আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। তিনি বলেন, সরকার যদি সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রস্তুতি না নেয় তাহলে আন্দোলন ছাড়া আমাদের বিকল্প থাকবে না। জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় আমাদের সেই প্রস্তুতিও রয়েছে।
সূত্র জানায়, কঠোর আন্দোলন ও নির্বাচনের বিষয়ে হাইকমান্ডের বার্তা নিয়ে সেপ্টেম্বরে জেলা সফরে যাবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জেলা সফরের সিদ্ধান্ত নেয় দলটির নীতিনির্ধারকরা।
তবে এখনও জেলা সফরের তারিখ নির্ধারণ হয়নি। দলের এক নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে বলেন, সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে এই সফর শুরু হতে পারে। সর্বোচ্চ দশ দিনের মধ্যে সফর শেষ করার নির্দেশনা থাকবে।
এজন্য জেলাওয়ারি একজন করে কেন্দ্রীয় নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হবে। এ সফরে আগামী দিনের আন্দোলন ও নির্বাচন নিয়ে হাইকমান্ডের সুনির্দিষ্ট বার্তা পৌঁছে দেবেন তারা। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় তৃণমূলকে প্রস্তুতি নিতে বলা হবে।
সূত্র জানায়, অক্টোবরকে টার্গেট করে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। পহেলা সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন থেকে দলের নেতাকর্মীরা মাঠে নামবেন। এদিন সারা দেশে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি।
রাজধানীতে বিকালের জনসভায় নেতাকর্মীদের ব্যাপক সমাগম করার নির্দেশ রয়েছে হাইকমান্ডের। এজন্য ঢাকার আশপাশের জেলার নেতাদের বুধবার ফোনে জনসভায় দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে উপস্থিত থাকার কথা কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন বলেন, গাজীপুরসহ ঢাকার আশপাশের জেলার বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী জনসভায় উপস্থিত থাকবে।
সূত্র জানায়, নির্বাচন ও আন্দোলনের করণীয় চূড়ান্তে ইতিমধ্যে দলীয় নেতাদের মত নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি থেকে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
এসব বৈঠকে আন্দোলন ও নির্বাচন নিয়ে তারা সুনির্দিষ্ট মত দেন। তাদের মতের ভিত্তিতেই করণীয় চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এ দুই ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সুশীল সমাজসহ নানা শ্রেণী ও পেশাজীবীর মতামত নিচ্ছে দলটি।
বুধবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের জাতীয়তাবাদী ঘরানার শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। আগামী নির্বাচন ও আন্দোলন নিয়ে তাদের মতামত নেয়া হয়। দলীয় নেতা ও পেশাজীবীদের মতামত বিশ্লেষণ করে এ দুই ইস্যুতে কর্মপরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছে দলটি।
সূত্র জানায়, একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা করলে আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিহত করতে ভেতরে ভেতরে বেশ তৎপর বিএনপি। বিশেষ করে তৃণমূলে নিজেদের সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন তারা।
দলের প্রতিটি শাখায় ত্যাগী ও সাহসী এবং তরুণ নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষা করে আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছে দলের নীতিগত অবস্থান সময়মতো পৌঁছে দিচ্ছে দলটির নীতিনির্ধারকরা।
দলের একটি অংশের দাবি, সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্তুতি নিলেও গত কয়েকটি আন্দোলনে ব্যর্থতার বিষয়টিও ভাবাচ্ছে নীতিনির্ধারকদের। রাজপথের আন্দোলনে যারা দিকনির্দেশনা দেবেন সেই সিনিয়র নেতারা অনেকেই বয়সের ভারে ন্যুব্জ। অনেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ। সে ক্ষেত্রে এসব নেতার পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত তরুণ ও নতুন নেতৃত্বকে আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে দায়িত্ব দেয়া যায় কিনা সেই বিষয়েও ভাবছে দলের হাইকমান্ড। কারণ অতীতের মতো ভবিষ্যতের কোনো আন্দোলনে যেন ব্যর্থতার দিকে না যায় সে বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক দলের শীর্ষ নেতারা।
আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকায় দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জনসমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে কর্মসূচি পালনেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশনা পেয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রাক প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রাক-প্রস্তুতির পাশাপাশি ‘ভিশন ২০৩০’ শিরোনামে বিএনপি চেয়ারপারসন যে রূপকল্প ঘোষণা করেছিলেন, তার ভিত্তিতেই আগামী নির্বাচনের জন্য ইশতেহার তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। এরপর বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা ও দল সমর্থিত বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী এ কাজে যুক্ত হন। বিএনপির এক নেতা জানান, ইশতেহার তৈরির কাজ অনেকদূর এগিয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে কঠোর আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আন্দোলনের জন্য বিএনপি প্রস্তুত। একই সঙ্গে নির্বাচনের জন্যও বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে। নির্বাচন ও আন্দোলন- দুই প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামবে বিএনপি।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন ও আন্দোলন দুটোরই প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল যদি আবারও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচনের চেষ্টা করে তা প্রতিরোধে কঠোর আন্দোলনের জন্য আমরা প্রস্তুত। নির্বাচনের জন্য প্রতিটি আসন থেকে সম্ভাব্য তিনজন প্রার্থীর নামের তালিকাও বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে রয়েছে।
এর মধ্যে যিনি নিজ এলাকায় জনপ্রিয় তাকেই মনোনয়ন দেবে হাইকমান্ড। যদি নির্বাচন হয় সেখানে জোটগতভাবে অংশ নিলে শরিকদেরও যা ছাড় দেয়া দরকার বিএনপি তা দেবে। বর্তমান সরকারের দুঃশাসন ও অন্যায় থেকে দেশের মানুষ এখন মুক্তি চায়।
বরিশাল উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, কঠোর আন্দোলন ও জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, এজন্য তৃণমূল আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। কেন্দ্রের বার্তা পেলেই তারা রাজপথে নামবে। আর বিএনপি নির্বাচনমুখী একটি দল। নির্বাচনের জন্য প্রতিটি আসনে সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থীর তালিকা হাইকমান্ডের কাছে রয়েছে। ত্যাগী, যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতাকেই মনোনয়ন দেবে হাইকমান্ড।