এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজ্যে রাজ্যে মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। বামপন্থী লেখক, বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারের অভিযোগ, মাওবাদীদের সঙ্গে এসব লোকের যোগসাজশ রয়েছে। আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, দিল্লি, মুম্বাই, হায়দরাবাদ, ফরিদাবাদ, গোয়া, রাঁচীসহ বিভিন্ন স্থানে মঙ্গলবার পুলিশের এ অভিযান চলে। অভিযানের প্রতিবাদে বুধবার ভারতের সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হন বিশিষ্টজনেরা। রায়ে সুপ্রিমকোর্ট জানায়, বিশিষ্টজনদের পুলিশি হেফাজত নয়, গৃহবন্দি রাখা যাবে।
মাওবাদীদের সমর্থক হিসেবে পরিচিত তেলেঙ্গানার সাংবাদিক কবি ভারভারা রাওয়ের হায়দরাবাদের বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করে পুণের পুলিশ। মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন অব সিভিল লিবার্টিজের (পিইউসিএল) প্রধান সুধা ভরদ্বাজকে হরিয়ানার ফরিদাবাদের বাড়িতে গৃহবন্দি রাখা হয়েছে। প্রাবন্ধিক মানবাধিকার কর্মী গৌতম নওলাখা দিল্লি থেকে, অরুণ ফেরেরা ও ভেনন গঞ্জালভেস মহারাষ্ট্রের থানে ও মুম্বাই থেকে গ্রেফতার করা হয়। রাঁচীতে মানবাধিকারকর্মী স্ট্যান স্বামীর বাড়িতে হানা দিয়ে কাগজপত্র, ল্যাপটপ ও হার্ডড্রাইভ জব্দ করা হয়েছে। মাওবাদীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সন্দেহে গত জুনেও পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ওই সময় মাওবাদীদের একটি চিঠি পাওয়া যায়, যেখানে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা পরিকল্পনার পাশাপাশি ভারাভারার নাম ছিল বলে পুলিশের ভাষ্য। জুনে গ্রেফতার পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যেসব তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। তার ভিত্তিতেই বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি ও অভিযান চলছে বলে দাবি করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশের এ গ্রেফতার অভিযানে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন অরুন্ধতী রায়, রামচন্দ্র গুহসহ দেশটির নেতৃস্থানীয় মানবাধিকার কর্মী, লেখক, বুদ্ধিজীবীরা। বুকারজয়ী লেখক অধিকারকর্মী অরুন্ধতী রায় এই অভিযানের সমালোচনা করে বর্তমান পরিস্থিতিকে ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘জনসম্মুখে যারা মানুষ পিটিয়ে হত্যা মারছে, তাদের না ধরে আইনজীবী, কবি, লেখক আর মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, যারা দলিতদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। এ থেকেই বোঝা যায় ভারত কোন দিকে যাচ্ছে।’ প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ বলেন, মহাত্মা গান্ধী বেঁচে থাকলে তাকেও গ্রেফতার করত নরেন্দ্র মোদি সরকার। তাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হন সুশীল সমাজের নেতা-কর্মীরা।
বিদ্বজ্জনদের গ্রেফতার নিয়ে সুপ্রিমকোর্টে ধাক্কা খায় সরকার। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের বেঞ্চ নির্দেশ দেন, আটকদের পুলিশি হেফাজতে রাখা যাবে না, গৃহবন্দি করা যেতে পারে। কেন্দ্র ও মহারাষ্ট্র সরকারকে নোটিশ দিয়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছেন, কেন তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তার কারণ জানাতে হবে। আগামী বৃহস্পতিবার ফের এই মামলার শুনানি।