এশিয়ান বাংলা স্পোর্টস : ইন্দোনেশিয়া। ভিন্ন দেশ। ভিন্ন সংস্কৃতি। শুধু এক জায়গায় মিল। ফুটবল জাদুকর আবদুস সামাদ। বাংলাদেশের মতো এদেশেও জনপ্রিয় তিনি। ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন ইন্দোনেশিয়ায়। মৃত্যুর ৫৪ বছর পরও তাকে ভোলেনি ইন্দোনেশিয়াবাসী। এখনও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে উপমহাদেশের ফুটবল মহানায়ককে। জাভাবাসী ঘাজা দাওয়ীর কথায়, ‘বাবা আবদুস সামাদের গল্প প্রায়ই বলতেন। তিনি বলতেন, তার দেখা সেরা ফুটবলার ছিলেন সামাদ।’
সৈয়দ আবদুস সামাদ। উপমহাদেশে যিনি ফুটবল জাদুকর সামাদ নামে পরিচিত। ছিলেন ফুটবলশিল্পী। উপমহাদেশের কিংবদন্তি ফুটবলার। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের ভুরী গ্রামে ১৮৯৫ সালের ৬ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন আবদুস সামাদ। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর সামাদ চলে আসেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেন এখানেই।
জাদুকর সামাদ ১৯১২ সালে কলকাতা মেইন টাউন ক্লাবে এবং ১৯৩৩ সালে মোহামেডানে যোগ দেন। সেসময় মোহামেডান পরপর পাঁচবার আইএফএ শিল্ড ও লিগ জেতে। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করে ফুটবল জগতে আলোড়ন তোলেন তিনি। ২৩ বছরের খেলোয়াড়ি জীবনে এমন সব বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়েছেন যে, তার নামের আগে ‘জাদুকর’ শব্দটি বসে যায়। জাদুকর সামাদের কালজয়ী ফুটবল প্রতিভা ও নেতৃত্বগুণ তৎকালীন সর্বভারতীয় ফুটবল দলকে গ্রেট ব্রিটেনের মতো বিশ্বসেরা ফুটবল দলের বিরুদ্ধে অবিস্মরণীয় জয় এনে দিয়েছিল।
তিনি খেলেছেন বার্মা (মিয়ানমার), সিলং (শ্রীলংকা), হংকং, চীন, সুমাত্রা-জাভা-বুর্নিয়ো (ইন্দোনেশিয়া), মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ব্রিটেনেও। খেলার মাঠে প্রতিনিয়ত অবিশ্বাস্য ঘটনার জন্ম দিতেন সামাদ। তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছিল একবার ইন্দোনেশিয়ায়। সর্বভারতীয় ফুটবল দলের হয়ে ইন্দোনেশিয়ার জাভায় এসেছিলেন খেলতে। খেলা চলাকালে ইন্দোনেশিয়ার বেশ ক’জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে গোলপোস্ট লক্ষ্য করে শট নেন। বল ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। একবার নয়, দু-দু’বার। এবার রেফারিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন সামাদ, ‘তোমাদের গোলপোস্টের উচ্চতা কম। আমার দুটো শটেই গোল হয়েছে।’ ফিতে দিয়ে মেপে দেখা গেল সত্যিই গোলপোস্টের উচ্চতা সাধারণ মাপের চেয়ে চার ইঞ্চি কম।
ফুটবল জাদুকর সামাদের গল্পটা বাবার কাছে শুনেছেন জাকার্তাবাসী ৪০ বছর বয়সী ঘাজা দাওয়ী। তার কথায়, ‘বাবার কাছে শুনেছি ফুটবলার সামাদের কথা। তিনি অসাধারণ ফুটবল খেলতেন। বাবা জাভায় উনার খেলা দেখেছেন। খুবই ভালো খেলতেন তিনি।’ তার মেয়ে ২০ বছর বয়সী ডেইজি বলেন, ‘শুনেছি দাদুর হাত ধরে আমার বাবা আবদুস সামাদের সেই ম্যাচটা দেখতে গিয়েছিলেন। আমার এখনও মনে পড়ে, বাবা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যে কোনো ফুটবল ম্যাচ দেখলে সামাদের কথা বলতেন। আমাদের ফুটবল নিয়ে উনার জাদুকরী সব কৌশলের কথা বলতেন।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমার দাদা ছিলেন ওই মাঠের কিউরেটর। যখন সামাদ চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসলেন, তখন মেপে দেখা গেল আসলেই চার ইঞ্চি ছোট ছিল গোলবার।’ জাদুকর সামাদ দারিদ্র্যের কশাঘাতে একপ্রকার বিনাচিকিৎসায় ১৯৬৪ সালের ২ ফেব্র“য়ারি মারা যান।