এশিয়ান বাংলা, হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার নিজনগর গ্রামের বাড়ি থেকে শুক্রবার রাতে জবাই করা দুই শিশু ও মেঝেতে মায়ের গলায় ফাঁস দেয়া লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ ঘটনার রহস্য এখনও উদ্ঘাটিত হয়নি। তিনজনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে নাকি দুই সন্তানকে নিজ হাতে জবাই করার পর তাদের মা সিলিং ফ্যানের সঙ্গে রশি লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তা পরিষ্কার নয়। তবে ময়নাতদন্তকারী ডা. দেবাশীষ দাস বলেছেন, পরিষ্কারভাবেই বোঝা যাচ্ছে এটি হত্যাকাণ্ড। সিলিং ফ্যানে ফাঁস দেয়া মা হাদিছা বেগমের মাথায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা হয়। কিন্তু লাশটি পাওয়া গেছে ঘরের মেঝেতে।
মাধবপুরের ধর্মঘর ইউনিয়নের নিজনগর গ্রাম থেকে শুক্রবার রাতে পুলিশ ওই গ্রামের ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান মজিদের স্ত্রী হাদিছা বেগম (২৫), তার শিশুকন্যা মিম (৩) ও ৭ মাসের শিশুপুত্র মোজাহিদের লাশ উদ্ধার করে। সদর আধুনিক হাসপাতালে শনিবার সকালে ময়নাতদন্ত হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী ডা. দেবাশীষ দাস বলেছেন, হাদিছা বেগমের মাথায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। বোঝা যাচ্ছে এটি হত্যাকাণ্ড। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেতে এক-দু’দিন লাগবে।
জানা গেছে- মা, ছেলে ও মেয়ের লাশ উদ্ধারের পরপরই মজিদের পরিবারের সব সদস্য গা ঢাকা দিয়েছেন। প্রতিবেশী পুরুষরাও ভয়ে এলাকা ছেড়েছেন। হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান কুমার ত্রিপুরা শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সরেজমিন শনিবার সকালে নিজনগর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশিদের ছেলে মুজিবুর রহমান মজিদের বাড়িতে গিয়ে কোনো লোকজন পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশী খোর্শেদা বেগম যুগান্তরকে বলেন, আবদুর রশিদ তার স্ত্রী রাজিয়া বেগম ও ছোট মেয়ে কলেজছাত্রী মিতুকে নিয়ে আলাদা একটি মাটির ঘরে বসবাস করেন। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত নাতনি মিমকে ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে কিনা জানতে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে মিমের মা হাদিছার নাম ধরে কয়েকবার ডাকেন। কিন্তু ঘর থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাননি। ঘরের ভেতর দিয়ে কলাপসিবল গেটে তালা দেখতে পান। পরে পেছনের দরজা দিয়ে ঘরে গিয়ে দেখতে পান মিমের গলা বিচ্ছিন্ন মরদেহ খাটের ওপর ও হাদিছার মরদেহ মেঝেতে পড়ে রয়েছে। নাতনি ও পুত্রবধূর এ দৃশ্য দেখে রাজিয়া বেগম চিৎকার দিয়ে উঠেন। তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা গিয়ে দেখতে পান মিমের জবাই করা রক্তাক্ত দেহ ও হাদিছার মরদেহ পড়ে রয়েছে। কিন্তু সেখানে তাদের ৭ মাসের শিশুপুত্র মোজাহিদকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনা মিমের বাবা মজিদকে জানালে তিনি ধর্মঘর বাজার থেকে দ্রুত বাড়িতে আসেন।
ধর্মঘর ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল ইসলাম কামাল জানান, মাধবপুর থানা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে রাত ১১টায় তিনি একটি কক্ষ থেকে মেয়ে মিমসহ মায়ের মরদেহ উদ্ধার করেছেন। একই ঘরের পূর্ব দিকের অপর একটি তালাবদ্ধ ঘর থেকে তালা ভেঙে ৭ মাসের শিশু মোজাহিদের গলা বিচ্ছিন্ন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রায় ৪ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়নের কেনা পূর্ব পাড়ার শামিম মিয়ার মেয়ে হাদিছা আক্তারের সঙ্গে মুজিবুর রহমান মজিদের বিয়ে হয়।
হাদিছার বাবা শামিম মিয়া জানান, মেয়ের বিয়ের সময় তার সাধ্য অনুযায়ী যৌতুক দেন। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই মজিদ যৌতুকের জন্য হাদিছাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। এ নিয়ে ৭ দফা সালিশ বৈঠক হয়েছে। মেয়ের সুখ-শান্তির কথা চিন্তা করে একাধিকবার টাকা দিয়েছেন। এমনকি সর্বশেষ ঘর তৈরির জন্য ইট ও রড দেন। এরপরও তার ওপর নির্যাতন করা হতো। তাছাড়া মজিদ পরকীয়ায় আসক্ত। এ কথা হাদিছা কয়েকবার তাদের কাছে বলেছে। যৌতুক ও পরকীয়ার কারণেই হাদিছা ও তার সন্তানদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন শামিম মিয়া।
এদিকে মজিদের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, হাদিছা খুবই জেদি স্বভাবের ছিল। স্বামীর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে অভিমান করে তার ২ সন্তানকে সে খুন করে নিজে সিলিং ফ্যানে রশি লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
মাধবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী জানান, শিশু দুটির মৃত্যু নিঃসন্দেহে হত্যাকাণ্ড। হাদিছার মৃত্যুটি হত্যা না আত্মহত্যা তা এখনও স্পষ্ট নয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে তার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় শনিবার বিকাল পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে পুলিশ সুপারের নির্দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিষয়টি তদন্ত করছে।