এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : কম সময়ে ও খরচে মানবদেহে ক্যান্সার রোগ শনাক্তের পদ্ধতি উদ্ভাবনের দাবি করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যারয়ের একদল গবেষক।
তারা বলছেন, ‘ননলিনিয়ার অপটিকস’ নামের উদ্ভাবিত এই পদ্ধতিতে রক্তের একটি পরীক্ষার মাধ্যমে মাত্র ১০ থেকে ২০ মিনিটেই ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
শাহজালালের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের গবেষকদের উদ্ভাবিত এই পদ্ধতিটি এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃতি পায়নি কিংবা কোনো জার্নালেও প্রকাশিত হয়নি। তবে গবেষকরা অল্প সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এর পেটেন্ট পাওয়ার আশা করছেন।
বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যান্সার শনাক্তের নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতি সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইয়াসমিন হক।
তিনি বলেন, তারা ক্যান্সারের রোগী এবং সুস্থ মানুষের রক্ত এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা করেছেন, যার ফলাফল শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।
ইয়াসমিন হক বলেন, তাদের উদ্ভাবিত ‘ননলিনিয়ার অপটিকস’ পদ্ধতির মাধ্যমে শরীরে ক্যান্সারের প্রাথমিক উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
এই পদ্ধতিতে ক্যান্সার শনাক্তের জন্য সংগ্রহ করা রক্তের নমুনার (সেরাম) মধ্যে উচ্চক্ষমতার লেজার রশ্মি ফেলে রক্তে কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না, তা দেখা হবে।
“রক্তে পরিবর্তনের বিষয়টি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ধরা পড়বে এবং ১০ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যাবে,” বলেন গবেষক দলের সদস্য ড. মানস কান্তি বিশ্বাস।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী বছরের মধ্যেই তারা রক্তের নমুনা পরীক্ষার একটি ডিভাইস তৈরি করতে পারবেন, যাতে বিভিন্ন কোম্পানি এটি তৈরিতে এগিয়ে আসতে পারে।
অধ্যাপক ইয়াসমিন বলেন, “গবেষণায় ব্যবহৃত সব প্রযুক্তি এবং যন্ত্র আমরাই উদ্ভাবন করেছি। এমনকি মাত্র ৫০০ টাকায় রক্তের নমুনা সংরক্ষণের পাত্রটি তৈরি করা হয়েছে, যেটি আমদানি করতে ব্যয় হতো ২৭ হাজার টাকা।”
মৌলিক পদার্থবিদ্যার গবেষণায় সাফল্য
বাংলাদেশে বর্তমানে কমখরচে ক্যান্সার শনাক্তের বেশকিছু পদ্ধতি রয়েছে, সেখানে নতুন এই পদ্ধতির সুফল কতটা মানুষ পাবে সেটা পরিষ্কার নয়।
তবে যেখানে বাংলাদেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার বিষয়টি উপেক্ষিত থাকে, সেখানে এই উদ্ভাবন বাংলাদেশে মৌলিক পদার্থবিদ্যার চর্চাকে উচ্চমাত্রায় নিয়ে গেছে বলে করেন সংবাদ সম্মেলনের বক্তারা।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বাংলাদেশে ক্যান্সার শনাক্তে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে এই উদ্ভাবন।
তবে সংবাদ সম্মেলনের দর্শকসারিতে থাকা জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হিস্টোপ্যাথলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরিদা আরজুমান মনে করেন, ক্যান্সারের প্রাথমিক অবস্থা শনাক্তে বর্তমানে যেসব পদ্ধতি রয়েছে, এটি (নতুন) সেই তালিকায় কেবল নতুন সংযোজন।
তিনি বলেন, “চূড়ান্তভাবে ক্যান্সার শনাক্তের পরীক্ষা নয় এটি, নিশ্চিত হওয়ার জন্য এর পরে আমাদের আরো পরীক্ষা করতে হবে, যেভাবে আমরা এখনও করি।”
বর্তমানে সরকারি হাসপাতালগুলোতে মাত্র ১৫০ টাকায় এফএনএসি পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এই গবেষণা প্রকল্পের সহযোগী অধ্যাপক শরিফ মো. শরফ উদ্দিন বলেন, নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি উচ্চমাত্রায় সংবেদনশীল।
শুধু ক্যান্সার শনাক্তই নয়, ননলিনিয়ার অপটিকস পদ্ধতি আরো অন্যান্য পরীক্ষায়ও ব্যবহার করা সম্ভব হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “হয়ত আমরা একদিন এই পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে ক্যান্সার শনাক্তের পাশাপাশি ক্যান্সারের সব মাত্রা নির্ণয় করতে পারব।”
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ইয়াসমিন হক বলেন, “এই উদ্ভাবনের ফলে এখন আরা বলতে পারি গবেষণার জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ এবং জ্ঞানভিত্তিক দেশ হওয়ার মতো উপাদানও আছে আমাদের।”
তাদের এই উদ্ভাবনের পেটেন্ট পেতে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষজ্ঞ এবং আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) ‘হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টে’র অর্থায়নে পরিচালিত হয় এই গবেষণা। সংবাদ সম্মেলনে ইউজিসির চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানও উপস্থিত ছিলেন।