এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : মুখে বড় বড় কথা আর গোঁয়ার্তুমি করলেও মূলত হোয়াইট হাউস হারানোর ভয় ঢুকে গেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনে। নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক প্রচারণা র্যালিতে সেই দৃশ্যই ফুটে উঠেছে বারবার।
বক্তব্যের বেশিরভাগ সময়ই নিজের অভিশংসন আশঙ্কা নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাম্প। কিছুক্ষণ পরপরই সমর্থকদের সতর্ক করেছেন। আর সম্ভাব্য অভিশংসনের দায়ভার জনগণের ওপরই চাপানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন।
দলীয় সমর্থকদের উদ্দেশে গলা ফাটিয়ে বলেছেন, ‘আমার অভিশংসন হলে দোষ আপনাদের। কারণ আপনারা দলের প্রার্থীকে ভোট দেননি।’ মোন্তানা রাজ্যের বিলিংস শহরে রিপাবলিকান দলের সমাবেশে এ ‘ঐতিহাসিক’ বক্তব্য দেন ট্রাম্প।
মার্কিন ইতিহাসে তিনিই প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি নিজের কর্মফলের দোষও জনগণের কাঁধে ফেলছেন। অবশ্য এর যুক্তিসঙ্গত কারণটাও একেবারে উড়িয়ে দেয়ার নয়। কারণ, ট্রাম্প সরকারে বিরক্ত মার্কিনিরা আসন্ন মধ্যবর্তী নির্বাচনে যদি রিপাবলিকানদের বদলে ডেমোক্রেটদের ভোট দেয়, তাহলেই সব শেষ।
কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে রিপাবলিকান দল। আর এ মোক্ষম সুযোগেই ট্রাম্পের গদিতে দা বসাবেন ডেমোক্রেটরা। ফল, নিশ্চিত অভিশংসন। এদিকে, ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মার্কিন সংবিধানের সহায়তা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন।
ট্রাম্পের অভিশংসনের সম্ভাবনা নিয়ে আগেই রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। কয়েকদিন ধরে এ সম্ভাবনা নিয়ে বেফাঁস তথ্য প্রকাশের পর এ বিষয়ে মন্তব্য করলেন তিনি। তিন দিন আগে হোয়াইট হাউস পরিচালনা ও দেশ পরিচালনায় ট্রাম্পের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একটি বই প্রকাশ করেছেন বব উডওয়ার্ড। এর একদিন পর বেনামে নিউইয়র্ক টাইমসে একটি নিবন্ধ লিখে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়েন হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা।
নির্বাচনী র্যালিতে সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা যদি ভোট দিতে না যান, তাহলে একটি মাত্র ঘটনাই ঘটবে, অভিশংসন। আপনারা এমন দলকে ভোট দিতে যাচ্ছেন, যারা কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা ভোট না দিলে আমি যদি অভিশংসিত হই, এটা আপনাদেরই ভুল।’
বিরোধীদের টিটকারি করে ট্রাম্প বলেন, ‘তারা অভিশংসন শব্দটি ব্যবহার করতে খুব ভালোবাসে। ‘ইমপিচ ট্রাম্প’ শব্দ দুটো তাদের কাছে খুব প্রিয়।’ এ সময় একটু চিৎকার করে হুশিয়ারির সুরে ট্রাম্প বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হলে যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় বিশ্বের দেশে পরিণত হবে। কিন্তু এটা আমরা হতে দেব না। আমরা ডেমোক্রেটকেই অভিশংসিত করব, তাই নয় কি?’
ট্রাম্পের এই ভয়কাতুর বক্তব্যের দিনেই ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেন, ‘এখনই সময় সংবিধানের সংশোধনকে ব্যবহার করে ট্রাম্পকে উৎখাত করা। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারাই যদি মনে করে থাকেন ট্রাম্প তার কর্তব্য পালনের যোগ্য নয়, তাহলে এটি সম্ভব।’
বৃহস্পতিবার সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘মার্কিন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাই ট্রাম্পের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীকে কার্যকরের এখনই সুযোগ।’ সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর ৪নং ধারা অনুসারে, কোনো প্রেসিডেন্ট তার কর্তব্য পালনে অযোগ্য প্রমাণিত হলে তাকে অভিশংসনের জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা কংগ্রেসের কাছে আবেদন জানাতে পারেন। ১৯৬৭ সালে সংশোধনীটি অনুমোদন করা হয়।