এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্টে ঝুলছে ৬২ জন বাংলাদেশির নাম। বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে এসব আসামির তালিকা পাঠানো হয়েছে ইন্টারপোলের সদর দপ্তর অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়। তালিকায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের নাম। এই তালিকায় আছে শীর্ষ সস্ত্রাসী, গডফাদার ও যুদ্ধাপরাধ মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের বিস্তারিত তথ্য এবং কোন মামলার তারা আসামি তা ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে এই আসামিদের ধরতে ইন্টারপোলের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। সূত্র : মানবজমিন।
ইন্টারপোলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংস্থাটি তাদের ওয়েবসাইটে তাদের নাম ও ছবি দিয়েছে। তাদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকার ও পুলিশকে জানানো হয়েছে। এছাড়াও তারা একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাচ্ছে কী-না তা নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসামিদের ফেরতে একটি বড় বাধা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকা। পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদ্যমান নিয়ম-কানুন মেনেই বিদেশে পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে পারে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি (ন্যাশনাল সেন্টাল ব্যুরো) শাখার এআইজি মো. মহিউল ইসলাম জানান, ‘নানা অপরাধে জড়িত বা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত এমন ৬২ জনের নাম বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে ইন্টারপোলে পাঠানো হয়েছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে পুলিশকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে, তাদের ধরে বাংলাদেশের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তাদের সঙ্গে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ করে থাকি। তিনি বলেন, কিছু অপরাধীর দেশ ও স্থান চিহ্নিত করা গেছে। কিন্তু, ওই দেশের ইমিগ্রেশন আইনি জটিলতার কারণে তাদের ধরা যাচ্ছে না। তবে তাদের নজরদারিতে রেখেছে সংস্থাটি। আইনি জটিলতা কেটে গেলে তাদের দেশে ফিরিয়ে আইনে সোপর্দ করা হবে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ ইন্টারপোলের সদস্য পদ লাভ করে। আন্তর্জাতিক এ সংস্থার রেড নোটিস কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নয়। ইন্টারপোল আসামিকে গ্রেপ্তারে কোনো বাহিনী পাঠায় না বা কোনো দেশকে চাপও দিতে পারে না। তারা শুধু এ সংক্রান্ত তথ্য ১৯০টি সদস্য দেশকে বিষয়টি জানায়।
সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৯শে মার্চ বাংলাদেশ পুলিশ ঢাকার একটি হোটেলে এক সেমিনার আয়োজন করে। চিফ অব পুলিশ কনফারেন্স অব সাউথ এশিয়া অ্যান্ড নেইবারিং কান্ট্রিস অন রিজিওনাল কো-অপারেশন ইন কার্ভিং ভায়ালেন্ট এক্সট্রিমিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম শীর্ষক ওই সেমিনারে ইন্টারপোলের প্রধানসহ একাধিক কর্মকর্তা যোগ দিয়েছিলেন। সেই বৈঠকে পুলিশের আইজি আলাদা বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকে ইন্টারপোলে রেড নোটিসের তালিকায় বাংলাদেশিদের স্থান চিহ্নিতকরণ এবং তাদের গতিবিধি নির্ণয়ে সাহায্য চাওয়া হয়। ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্টে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনি এবিএম নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, খন্দকার আবদুর রশিদ, আবদুল মাজেদ, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের নাম রয়েছে।
এছাড়া তালিকায় প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, আমিনুর রসুল, হারিস আহমেদ, জাফর আহমেদ, আব্দুল জব্বার, নবী হোসাইন, জিসান, শাহাদাত হোসাইন, মোল্লা মাসুদ, ত্রিমতি সুব্রত বাইন, কালা জাহাঙ্গীর ওরফে ফেরদৌস, খন্দকার তানভীর ইসলাম জয় এর নাম রয়েছে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে এরা সবাই শীর্ষ সন্ত্রাসী। তারা অনেকেই মামলার সাজাপ্রাপ্ত। কারও বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে। ভারতে, দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কেউ কেউ অবস্থান করছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই তালিকায় যুদ্ধাপরাধ মামলায় আসামিদের নাম রয়েছে। যেমন: ফরিদপুরের মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, জাহিদ হোসেন, গোপালগঞ্জের আশরাফুজ্জামান খান, ফেনীর মইনউদ্দিন চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাসান আলী ও সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন এবং মঠবাড়িয়ার আবদুল জব্বার। সাবেক একজন এমপি এবং বিএনপির সাবেক এক নেতার নামও রয়েছে তালিকায়। তালিকায় আছে রফিকুল ইসলাম, নবী হোসাইন, তৌফিক আলম, মিন্টু, আতাউর রহমান, নাসির উদ্দিন রতন, চান মিয়া, প্রশান্ত সরদার, সুলতান সাজিদ, হারুন শেখ, মনোতোষ বসাক, আমিনুর রহমান, রাতুল আহমেদ বাবু, হাসন আলী ওরফে সৈয়দ মো. হাছন, সৈয়দ মোহাম্মদ হোসাইন ওরফে হোসেন, জাহিদ হোসেন খোকন, আহমেদ কবির ওরফে সুরত আলম, সাজ্জাদ হোসেন খান, হাসেম কিসমত, মো. ইউসুফ, মো. নাঈম খান ইকরাম, মকবুল হোসাইন, সালাহউদ্দিন মিন্টুর নাম।