এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনো অসুস্থ নাগরিককে সুস্থ না হলে বিচার কাজ চালানো যায় না। এটা সম্পূর্ণ অমানবিক ও সংবিধানপরিপন্থী। অথচ বর্তমান সরকার এতটাই নিচে নেমে গেছে যে, একজন মারাত্মক অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসার কোনো সুযোগ দিচ্ছে না। অথচ চিকিৎসা পাওয়া তার সাংবিধানিক অধিকার।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। অবিলম্বে বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তর করে তাকে চিকিৎসা দেয়া তার জীবন রক্ষার জন্য অতিপ্রয়োজন। আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছি তার জীবন রক্ষার জন্য। এখন যে অবস্থায় তিনি আছেন তাতে তার জীবন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তিনি এ অবস্থায় কতদিন বেঁচে থাকতে পারবেন। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় সব দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহদফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণবিরোধী সরকার নিশ্চিত হয়েছে যে, খালেদা জিয়া মুক্ত হলে তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বিপন্ন হবে এবং আগামী নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হতে বাধ্য। এটি এখন শুধু বিএনপির কথা নয়, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাক ভট্টাচার্য সম্প্রতি তার লেখায় এ কথা বলেছেন। এজন্য খালেদা জিয়াকে রাজনীতি এবং আসন্ন নির্বাচন থেকে দূরে রেখে একতরফা নির্বাচনে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করার নীলনকশা নিয়েই এগোচ্ছে সরকার।
অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের লজ্জাজনক পরাজয় হবে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া যেন নির্বাচনে নেতৃৃত্ব দিতে না পারেন এবং জনগণ যেন তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে না পারে এজন্য সরকার নানা ষড়যন্ত্র করছে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বেআইনিভাবে সাজা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আইনবহির্ভূতভাবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনা এ মামলায় উচ্চতর আদালত জামিন দেয়ার পরও তাকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। সম্পূর্ণ মিথ্যা, সন্ত্রাসী ও নাশকতার মামলায় তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। যদিও এসব মামলায় অন্য অভিযুক্তদের সবাইকে জামিন দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার পরিবারের সদস্যরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তারা এসে যে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে আমরা উদ্বিগ্নই নই, হতবাক-বিস্মিত। এরপরও সরকার তার চিকিৎসার জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে মিথ্যা সাজানো মামলায় শাস্তি দিয়ে কারাগারে বেআইনিভাবে আটক রেখে তাকে হত্যা করার হীন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।
বৃহস্পতিবার দেখা করে আসা পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা জানিয়েছেন দেশনেত্রী অত্যন্ত অসুস্থ। তার বাম হাত ও বাম পা প্রায় অবশ হয়ে গেছে। অসহ্য ব্যথা অনুভব করছেন তিনি। দেশনেত্রী পরিবারের সদস্যদের বলেছেন, তার কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না। একই কথা তিনি বলেছেন ৫ তারিখে কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত বেআইনি আদালত কক্ষে। তিনি বলে দিয়েছেন, আমি আর এই আদালতে আসতে পারব না শারীরিক কারণে।
তিনি বলেন, আমরা কারা কর্তৃপক্ষকেও স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্তৃপক্ষ। আপনাদের দায়িত্ব সুস্পষ্টভাবে আইন ও বিধান দ্বারা পরিচালিত। এ দায় আপনাদেরও বহন করতে হবে। কারাগারের অভ্যন্তরে আদালত বসানো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তা ‘সঠিক’ নয়। দ্যাট ওয়াজ নট আন্ডার সিভিল এডমিনিস্ট্রেশন, দ্যাট ওয়াজ মার্শাল ল’ এট দ্যাট টাইম। সেটার সঙ্গে তুলনীয় নয়। সংবিধানে বলাই হচ্ছে, এ বিচারকার্য চলতে হবে, ওপেন পাবলিক ট্রায়াল হতে হবে, প্রকাশ্য হতে হবে। একটা ছোট্ট ঘরের মধ্যে তাকে (খালেদা জিয়া) ট্রায়াল করছেন। ১০ জনের বেশি উকিলই বসার ব্যবস্থা নেই সেখানে। এটা ওপেন আদালত নয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘কারাগারের অভ্যন্তরের বিচারালয় তো মুক্ত, দরজা খোলা।’ জেলাখানা কী প্রকাশ্য। এই জেলখানার চার দেয়ালের ভেতরে ও গেটের ভেতরে এই তথাকথিত আদালতটি বসানো হয়েছে। জেল গেটের ভেতরে হলে সেখানে সাধারণ মানুষ প্রবেশের সুযোগ নেই। তাহলে এটা কীভাবে উন্মুক্ত? প্রধানমন্ত্রী জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য এটা বলছেন। এটা সত্যের অপলাপ।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘শহীদ জিয়াউর রহমানের সময়ে এ রকম হয়েছে।’ আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, তখন বিচারপতি আবু সাহাদাত মো. সায়েম সরকার দেশে সামরিক আইন ঘোষণা করেছিলেন। তখন সংবিধান স্থগিত ছিল। সেই ধারাবাহিকতার পর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে নির্বাচন করে সামরিক আইন প্রত্যাহার করেছিলেন। জিয়াউর রহমানের সময়ে যে বিচার হয়েছিল সেটা ছিল রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিচার। আর বর্তমানে যে বিচার হচ্ছে সেটা রাজনৈতিক ও একটি দুর্নীতি মামলার। বলে লাভ নেই ব্যক্তিগত জিঘাংসা, প্রতিহিংসা ও আগামী নির্বাচন থেকে দেশনেত্রীকে বাইরে রাখার এটা একটা গভীর হীন ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কারাগারে আদালত বসানো হয়েছে।
কাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে বিএনপির চিঠি : আগামীকাল রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাক্ষাৎ চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার স্বাক্ষরিত চিঠিটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিবের কাছে দেয়া হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির ১০ সদস্যের একটি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দিয়েছে। স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে কারাগারে আদালত বসানোসহ খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে আলোচনা করবেন বিএনপি নেতারা। বিএনপি চেয়ারপারসনকে অবিলম্বে বিশেষায়িত হাসপাতালে বিশেষ করে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার অনুরোধ জানাবেন তারা।