এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আমরাই জয়ী হব। আগামী ৫০ বছরেও আমাদের ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবে না কেউ। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) দুই দিনব্যাপী কর্মসমিতির সভার শেষদিন রোববার এ কথা বলেছেন দলের প্রধান অমিত শাহ।
শনিবার দিল্লিতে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক শুরু হয়। প্রথমদিনেই সিদ্ধান্ত হয়, আগামী বছর লোকসভা ভোটের আগে ভারতের শাসক দল বিজেপির সভাপতি পদের নির্বাচন হচ্ছে না। দলের সভাপতি অমিত শাহর নেতৃত্বেই বিজেপি আগামী লোকসভা ভোটে লড়বে। খবর এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
গোটা দেশ থেকে আসা নেতাদের পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির পতাকা ওড়ানোর ‘পণ’ করতে বললেন অমিত শাহ। শনিবার মমতা ব্যানার্জির নাম উচ্চারণ করে তাকে আক্রমণ করেন বিজেপি সভাপতি। তৃণমূল নেত্রীর বিজেপিবিরোধী জোট গঠনের উদ্যোগকে কটাক্ষ করে অমিত বলেন, ‘মমতা ফ্রন্ট করছেন।
উত্তর প্রদেশ, তেলেঙ্গানা বা গুজরাটে কি আদৌ প্রভাব ফেলতে পারবেন? ২০১৪ সালে এই প্রত্যেকটি দলের বিরুদ্ধে আমরা সরাসরি লড়েছি ও তাদের হারিয়েছি। ২০১৯ সালে আরও বেশি সংখ্যা নিয়ে আসব। আগামী ৫০ বছরের মধ্যেও বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে টলাতে পারবে না কেউ।’
গত লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি মাত্র দুটি আসন জিতেছিল। ২০১৯ সালে অমিতের লক্ষ্য ২২। কেন তিনি এতটা আত্মবিশ্বাসী, তারও সবিস্তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। দলীয় সূত্রের মতে, অমিত মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গে এখন দ্বিতীয় স্থানে চলে এসেছে বিজেপি। তারাই তৃণমূলবিরোধী হাওয়াকে নিজেদের পালে টানতে পারবে।
শনিবার রাতেও পশ্চিমবঙ্গের কৌশল নিয়ে আলাদা বৈঠক হয়। সেখানে ছিলেন রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। মুকুলকে সম্প্রতি কর্মসমিতিতে শামিল করেছেন অমিত। সভাপতির নির্দেশ মাফিক বাংলায় কীভাবে এগোনো দরকার, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির বৈঠকে এ রণকৌশল চূড়ান্ত করা হবে। তার আগে অমিতকে রাজ্যের পরিস্থিতি সবিস্তার জানাবেন বাংলার প্রতিনিধিরা।
দিলীপ বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রকল্পের সুফল পেয়েছে ২২ কোটি পরিবার। গোটা দেশে বিজেপির ৯ কোটি সদস্য ঘরে ঘরে গিয়ে মোদির উন্নয়ন তুলে ধরবেন।’ কিন্তু এতদিন তো অমিত ‘বিজেপির ১১ কোটি সদস্য’ বলতেন!
দিলীপের মন্তব্য, ‘১১ কোটি মানুষ ফোন করে সদস্য হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের মধ্যে ‘আসলদের’ বাছাই করে এখন ৯ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।’ কর্মসমিতির বৈঠকে বিরোধীদের তুড়ি মেরেই উড়িয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর।
তার মতে, বৈঠকের দ্বিতীয় দিন রোববার প্রকাশ বলেন, ‘বিরোধী জোট নিয়ে ভাবার কোনো দরকারই নেই। তাদের কোনো নেতা, নীতি ও রণনীতি নেই। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রয়েছে ভিশন, প্যাশন ও ইমাজিনেশন (দূরদৃষ্টি, আবেগ ও ভাবনা)। তাই মোদি সরকারের আরও একটা পূর্ণ মেয়াদ ক্ষমতায় থাকার ব্যাপারটা নিশ্চিত।’
প্রকাশ বলেন, ‘চার বছর ক্ষমতায় থাকার পরও প্রধানমন্ত্রী মোদির জনপ্রিয়তার হার ৭০ শতাংশেই রয়েছে।’ এদিকে, ফের রাম মন্দির নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন উত্তর প্রদেশের সমবায়মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা মুকুট বিহারি বর্মা।
তিনি বলেন, ‘অযোধ্যায় রাম মন্দির হবেই, কারণ সুপ্রিমকোর্ট আমাদের।’ মন্ত্রীর এ মন্তব্যের পরই শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। বিরোধীদের তোপ তো রয়েছেই, সঙ্গে মুকুট বিহারি আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে পারেন বলে মনে করছে আইনজ্ঞদের একটা বড় অংশ।
শনিবার উত্তর প্রদেশের বাহরাইচ জেলায় একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন মন্ত্রী মুকুট বিহারি। তিনি বলেন, ‘অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরি করা আমাদের শপথ। সুপ্রিমকোর্ট আমাদের। আইন ব্যবস্থা, এ দেশ এবং রাম মন্দিরও আমাদের।’ সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, উন্নয়নের প্রতিশ্র“তি দিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছিল। একই সঙ্গে অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরি করতেও বদ্ধপরিকর তাদের দল।
মুসলিম কট্টরপন্থী সংগঠন ও নেতারা মন্ত্রীর সমালোচনায় সরব হন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও মন্ত্রীর সমালোচনায় সরব হন নেটিজেনরা। তার পর অবশ্য চাপে পড়ে অন্য একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মন্ত্রী। মন্ত্রীর সাফাই, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট ‘আমাদের’ বলতে আমি বোঝাতে চেয়েছি, ‘আমাদের দেশের’। কখনওই বলতে চাইনি, শীর্ষ আদালত বিজেপি সরকারের।’’ কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে যখন রাম মন্দির মামলা বিচারাধীন, তখন মন্ত্রীর এই মন্তব্যে নতুন করে বিতর্কে ইন্ধন জুগিয়েছে।