এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আরো অনেক কিছু করা উচিত বাংলাদেশ সরকারের। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এটা অপরিহার্য। সাম্প্রতিক সময়ে এখানে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এসব সহিংসতার জন্য যারা দায়ী তাদেরকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে, যাতে ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করা যায়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ৩৯তম অধিবেশনে এভাবেই বাংলাদেশকে তুলে ধরলেন মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট। এছাড়াও তিনি বলেন, বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।
দারিদ্র্য নিরসনে সফল হয়েছে এ দেশ। মাদকবিরোধী অভিযানে হত্যা ও গ্রেপ্তারকে তিনি ‘ট্রাবলিং’ বলে আখ্যায়িত করেন। বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানে হত্যা করা হয়েছে ২২০ জনকে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েক হাজার মানুষকে। অভিযোগ আছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বিভিন্ন সুযোগকে ব্যবহার মাদক মোকাবিলার উন্নত পন্থা। এক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড বা ডেথ স্কোয়াডের দিকে দৃষ্টি দেয়া উচিত নয়। অধিক কার্যকর, মানবাধিকারের অভিযোগ সহ কীভাবে মাদকের ইস্যুটি সমাধান করা যায় সে বিষয়ে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক অফিস।
ওই অধিবেশনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের বিচারের জন্য আপাতত নতুন একটি বিচারিক ব্যবস্থা (কসি জুডিশিয়াল বডি) গড়ে তোলারও আহ্বান জানান মিশেল ব্যাচেলেট। তিনি বলেছেন, এর লক্ষ্য হবে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতন চালানো হয়েছে তার ভবিষ্যৎ বিচারের জন্য তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা। জেনেভা থেকে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ব্যাচেলেট ১লা সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধানের দায়িত্ব নেন। তারপর প্রথম মানবাধিকার পরিষদে তিনি বক্তব্য রেখেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, দৃশ্যত রাখাইন রাজ্যে এখনো হামলা ও নির্যাতন অব্যাহত আছে। তদন্তকারীরা কাচিন ও শান রাজ্যে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতন ও যৌন সহিংসতার প্রমাণ পেয়েছেন। জেনেভায় ৪৭ সদস্যের ফোরামে অধিবেশন শুরু হয়েছে তিন সপ্তাহের জন্য। সেখানে ব্যাচেলেট বলেন, এই রকম নিয়ম লঙ্ঘনের ফলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে যে দায়মুক্তি বিষয়টি জোরালোভাবে ফুটে উঠেছে।
এ সময় তিনি গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর প্রসিকিউটর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যাচেলেট। আইসিসি বলেছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে জোর করে পাঠিয়ে দেয়া একটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। এ বিষয়ে আইসিসির বিচার করার অধিকার আছে। ব্যাচেলেট বলেন, অনতিবিলম্বে এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যে, ওই দায়মুক্তির ইতি ঘটাতে হবে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভয়াবহ দুর্ভোগের দিকে তাকিয়ে।
উল্লেখ্য, গত মাসে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের নিরপেক্ষ সংস্থা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। তাতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর ইচ্ছাকৃত গণহত্যার প্রমাণ মিলেছে। এর মাধ্যমে তারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। দৃশ্যত যুদ্ধাপরাধ করেছে। ওই রিপোর্টে বর্তমান সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং সহ ৬ জন জেনারেলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।
এক বছর আগে সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে নৃশংস অভিযান শুরু করে। এর ফলে কমপক্ষে ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এরই প্রেক্ষিতে মিশেল ব্যাচেলেট মানবাধিকার পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি নিজের সমর্থন জানান। তিনি বলেন, মিয়ানমারের বিষয়ে এই পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক মেকানিজম, তথ্য সংগ্রহ, সব অভিযোগ জমা করা, সংরক্ষণ করা, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গুরুতর অভিযোগগুলোর প্রমাণ বিশ্লেষণ করার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে আমি স্বাগত জানাই। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আদালতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচারের জন্য এসব প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, আমি পরিষদের প্রতি একটি প্রস্তাব পাস করার অনুরোধ জানাই এবং তা যেন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে পাঠানো হয় অনুমোদনের জন্য, যাতে একটি মেকানিজম প্রতিষ্ঠিত করা যায়।