এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিলেও ১১৫ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। একাধিক জরিপে এসব আসনে বড় ধরনের কোনো ঝামেলার তথ্য পায়নি দলটি।
দেশব্যপী চালানো জরিপ এবং পঞ্চম, অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে আসনগুলোতে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। আন্দোলনকেই প্রধান টার্গেট করে এসব প্রার্থীর পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই সংসদীয় আসনে সংগঠন গোছানো হচ্ছে। লন্ডন ও গুলশান কার্যালয় সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ নিয়ে বিএনপি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কোনো নেতা নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নীতিনির্ধারক বলেন, যেসব আসনে বড় ধরনের কোনো ঝামেলা নেই সেখানে একক প্রার্থীর একটি তালিকা করা হয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী প্রার্থীর কাছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান টেলিফোন করে বার্তা দিচ্ছেন।
ওই নীতিনির্ধারক আরও জানান, যেসব আসনে কমপক্ষে ৩ থেকে সর্বোচ্চ ৭ জন প্রার্থী আছেন সেখানে ঝামেলা হচ্ছে। লন্ডনে চিকিৎসাধীন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় দায়িত্বশীল নেতারা এগুলো নিয়ে কাজ করছেন। তবে ২০ দলীয় জোটের শরিক ও ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীদের আসনে বিএনপি নিজ দলের কাউকে মনোনয়ন দেবে না বলেও জানান তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন ঘিরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একাধিক জরিপ চালিয়েছেন। জরিপে এগিয়ে থাকা প্রার্থী, বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের ফল এবং প্রার্থীর রাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে সবুজ সংকেতও দেয়া হচ্ছে।
মনোনয়নের নিশ্চয়তা পাওয়া প্রার্থীদের পরিকল্পনামতো সংশ্লিষ্ট সংসদীয় আসনের সংগঠন গোছানো হচ্ছে। তাদের কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতির বার্তা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে বলা হচ্ছে।
জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। এবার বেশিদিন নয়, স্বল্প সময়ের আন্দোলনেই দাবি আদায় করা হবে। পাশাপাশি নির্বাচনের জন্যও প্রস্তুতি রয়েছে। ৩০০ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অবস্থা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আছে। তিনি জরিপ চালিয়েছেন। যেখানে প্রার্থী প্রায় নিশ্চিত, বড় কোনো ঝামেলাও নেই সেখানে একজনকে আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হচ্ছে। তিনি সরাসরি ফোন করে এ নিয়ে কথা বলছেন।
সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন কারাগারে যাওয়ার আগে জানুয়ারিতে গুলশান কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিক এক বৈঠকে নির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে আলোচনা করেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।
এক পর্যায়ে সিনিয়র দু’জন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ম্যাডাম নির্বাচনে যাই বা না যাই প্রার্থী তো চূড়ান্ত করতে হবে। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন তাদের বলেন, বিএনপির কমপক্ষে দেড়শ’ আসন তো এমনিতেই ঠিক আছে। আলোচনা চলাকালীন সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি আসনের প্রয়াত এক সংসদ সদস্যের ছেলে দেখা করতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসন তাকে দেখা করার অনুমতি দেন।
পরে প্রয়াত ওই নেতার ছেলেকে দেখিয়ে খালেদা জিয়া স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বলেন, এই যে বিএনপির একজন প্রার্থী। পরে সাবেক ওই সংসদ সদস্যের ছেলেকে তার নির্বাচনী এলাকায় কাজ শুরু করতে বলেন চেয়ারপারসন।
চূড়ান্ত হওয়া তালিকায় থাকা ১১৫ আসন হচ্ছে- ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার (পঞ্চগড়-১), মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ঠাকুরগাঁও-১), লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান (দিনাজপুর-২), শামসুজ্জামান (নীলফামারী-২), আসাদুল হাবিব দুলু (লালমনিরহাট-৩), এমদাদুল হক ভরসা (রংপুর-৪), অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী (কুড়িগ্রাম-২), ফয়সাল আলিম (জয়পুরহাট-১), প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা (জয়পুরহাট-২), হারুনুর রশিদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩), নাসরিন আক্তার সিদ্দিকী (নওগাঁ-৩), ব্যারিস্টার আমিনুল হক (রাজশাহী-১), মিজানুর রহমান মিনু (রাজশাহী-২), কামরুন্নাহার শিরিন (নাটোর-১), অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু (নাটোর-২), ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (সিরাজগঞ্জ-২), আবদুল মান্নান তালুকদার (সিরাজগঞ্জ-৩), হাবিবুর রহমান হাবিব (পাবনা-৪), মাসুদ অরুন (মেহেরপুর-১), মেহেদী আহমেদ রুমি (কুষ্টিয়া-৪), শামসুজ্জামান দুদু (চুয়াডাঙ্গা-১), মাহমুদ হাসান বাবু (চুয়াডাঙ্গা-২), মশিউর রহমান (ঝিনাইদহ-২), তরিকুল ইসলাম (যশোর-৩), টিএস আইয়ুব (যশোর-৪), নিতাই রায় চৌধুরী ( মাগুরা-২), নজরুল ইসলাম মঞ্জু (খুলনা-২), রফিকুল ইসলাম বকুল (খুলনা-৩), আজিজুল বারী হেলাল (খুলনা-৪), হাবিবুল ইসলাম হাবিব (সাতক্ষীরা-১), অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন (বরগুনা-২), এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাব হোসেন চৌধুরী (পটুয়াখালী-১), এবিএম মোশাররফ হোসেন (পটুয়াখালী-৪), মেজর (অব.) এম হাফিজউদ্দিন আহমেদ (ভোলা-৩), নাজিমউদ্দিন আলম (ভোলা-৪), মজিবর রহমান সরোয়ার (বরিশাল-৫), ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর (ঝালকাঠি-১), ফকির মাহবুব আলম স্বপন (টাঙ্গাইল-১), লুৎফর রহমান আজাদ (টাঙ্গাইল-৩), লুৎফর রহমান মতিন (টাঙ্গাইল-৪), সুলতান সালাউদ্দিন টুকু (টাঙ্গাইল-২), অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী (টাঙ্গাইল-৬), মাহমুদুল হক রুবেল (শেরপুর-৩), সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ( ময়মনসিংহ-১), ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন (ময়মনসিংহ-৪), একেএম মোশাররফ হোসেন (ময়মনসিংহ-৫), আখতারুল আলম ফারুক (ময়মনসিংহ-৬), মাহবুবুর রহমান লিটন (ময়মনসিংহ-৭), শাহ নুরুল কবির শাহিন (ময়মনসিংহ-৮), ফকরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চু (ময়মনসিংহ-১১), ব্যারিস্টার কায়সার কামাল (নেত্রকোনা-১), তাহমিনা জামান (নেত্রকোনা-৪), ড. ওসমান ফারুক (কিশোরগঞ্জ-৩), অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান (কিশোরগঞ্জ-৪), শরিফুল আলম (কিশোরগঞ্জ-৬), আফরোজা খানম রিতা (মানিকগঞ্জ-৩), আমানউল্লাহ আমান (ঢাকা-২), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), সালাউদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৫), সাদেক হোসেন খোকা (ঢাকা-৬), নাসিমা আক্তার কল্পনা (ঢাকা-৭), হাবিব-উন-নবী খান সোহেল (ঢাকা-৮), মির্জা আব্বাস (ঢাকা-৯), এমএ কাইয়ুম (ঢাকা-১০), এসএ খালেক (ঢাকা-১৪), সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল (ঢাকা-১৫), ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন (ঢাকা-১৯), শাহ রিয়াজুল হান্নান (গাজীপুর-৪), একেএম ফজলুল হক মিলন (গাজীপুর-৫), খায়রুল কবীর খোকন (নরসিংদী-১), ড. আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম (রাজবাড়ী-১), শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু (ফরিদপুর-২), সেলিমুজ্জামান সেলিম (গোপালগঞ্জ-১), সিরাজুল ইসলাম সিরাজ (গোপালগঞ্জ-২), হেলেন জেরিন খান (মাদারীপুর-২), শফিকুর রহমান কিরন (শরীয়তপুর-৩), কলিমুদ্দিন আহমেদ মিলন (সুনামগঞ্জ-৫), তাহমিনা রুশদি লুনা (সিলেট-২), নাসের রহমান (মৌলভীবাজার-৩), এমএকে একরামুজ্জামান সুখন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১), আবু আসিফ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), প্রকৌশলী খালেদ মাহবুব শ্যামল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩), ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (কুমিল্লা-৩), শওকত মাহমুদ (কুমিল্লা-৫), আমিন উর রশিদ ইয়াসিন (কুমিল্লা-৬), জাকারিয়া তাহের সুমন (কুমিল্লা-৮), আবুল কালাম (কুমিল্লা-৯), আনম এহসানুল হক মিলন (চাঁদপুর-১), শেখ ফরিদউদ্দিন আহমেদ (চাঁদপুর-৩), হারুনুর রশিদ (চাঁদপুর-৪), ভিপি জয়নাল আবেদীন (ফেনী-২), আবদুল আউয়াল মিন্টু (ফেনী-৩), ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন (নোয়াখালী-১), জয়নাল আবেদীন ফারুক (নোয়াখালী-২), বরকতউল্লাহ বুলু (নোয়াখালী-৩), মো. শাহজাহান (নোয়াখালী-৪), ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ (নোয়াখালী-৫), শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী (লক্ষ্মীপুর-৩), এম মোরশেদ খান (চট্টগ্রাম-৭), ডা. শাহাদাত হোসেন (চট্টগ্রাম-৮), আবদুল্লাহ আল নোমান (চট্টগ্রাম-৯), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), জাফরুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৫), সালাহউদ্দিন আহমেদ (কক্সবাজার-১), লুৎফর রহমান কাজল (কক্সবাজার-৩), আবদুল ওয়াদুদ ভুঁইয়া (খাগড়াছড়ি), সাচিং প্র“ জেরী (বান্দরবান) ও কাজী তাপস (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫)।
এ তালিকায় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ তার পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত এই তালিকা থেকে একাধিক নাম পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে। সেক্ষেত্রে নতুন নাম যুক্ত হবে।