এশিয়ান বাংলা, ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র ডা. লোটে শেরিং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। তিনি ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। ভুটানে গত শনিবারের প্রথম দফা ভোটে লোটে শেরিংয়ের দল দ্রুক নিয়ামরুপ তসগপা (ডিএনটি) জয়লাভ করেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) হেরে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, শেরিং তোবগের দল দ্বিতীয় দফা ভোটে ডিএনটিকে সমর্থন দেবে। এ কারণে লোটে শেরিংয়ের প্রধানমন্ত্রী হওয়া একপ্রকার নিশ্চিত। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে এসে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন লোটে শেরিং। তার সহপাঠী ডা. শফিকুল বারী তুহিন জানান, সেশনজট থাকায় লোটে শেরিং ১৯৯৮ সালে এমবিবিএস পাস করেন। পরে তিনি ঢাকায় অধ্যাপক ডা. খাদেমুল ইসলামের অধীনে জেনারেল সার্জারি বিষয়ে এফসিপিএস করেন। তিনি ২০০৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ছিলেন।
রাজনীতিতে আসার আগে ডা. লোটে শেরিং ভুটানে জেডিডব্লিউএনআরএইচ অ্যান্ড মঙ্গার রিজিওনাল রেফারেল হসপিটালে কনসালট্যান্ট সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জেডিডব্লিউএনআরএইচে ইউরোলজিস্ট কনসালট্যান্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৩ সালে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং ২০১৮ সালের শুরুতেই দলের শীর্ষ পর্যায়ে চলে আসেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ডা. লোটে শেরিংয়ের কথা শুনেছেন। তার সাফল্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ তথা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য গর্বের বিষয়।
ভুটানে দুই দফায় ভোট হয়। প্রথম দফায় ভোটাররা রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট দেয়। এতে যে দুই দল প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান পায়, তারা পার্লামেন্টের ৪৭টি আসনে প্রার্থী দেয়; তখন দ্বিতীয় দফা ভোট হয়।
এবারের প্রথম দফার ভোটে চারটি দল অংশ নেয়। প্রথম দফার মৌলিক নির্বাচনে বিস্ময়কর সাফল্য পান লোটে শেরিং। তার দল ডিএনটি ৯২ হাজার ৭২২ ভোট পেয়েছে। আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা ডিটিপি পেয়েছে ৯০ হাজার ২০০ ভোট। তৃতীয় হওয়া ক্ষমতাসীন দল পিডিপি পেয়েছে ৭৯ হাজার ৮৮৩ ভোট। ভুটানের ইতিহাসে তৃতীয় জাতীয় নির্বাচনে এবার ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় চার লাখ ৩৮ হাজার। এর মধ্যে দুই লাখ ৯১ হাজার ভোট পড়েছে, যা মোট ভোটের ৬৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আগামী ১৮ অক্টোবর দ্বিতীয় দফা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় দফায় ডা. লোটে শেরিং মুখোমুখি হবেন দ্রুক ফুয়েনসাম তসগপা (ডিপিটি) দলের নেতা ফেনসাম সগবার।
এরই মধ্যে ফল মেনে নিয়ে প্রথম দফা ভোটে এগিয়ে থাকা দুই দলকেই অভিনন্দন জানিয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে। তিনি এক টুইটারে বলেন, ‘অসাধারণ সফলতার জন্য আমি পিএনটি এবং ডিপিটি ও তাদের প্রার্থীদের অভিনন্দন জানাই।’
হিমালয়ের ছোট্ট দেশটির ওপর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র ভারত ও চীনের প্রভাব থাকায় নির্বাচনে বিষয়টি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এবারের নির্বাচনের প্রথম দফায় জয়ী দলটির নেতারা ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে চান। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দল ডিপিটি দেশের ওপর ভারতের প্রভাব কমানোর পক্ষে।
২০০৮ সালে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করে ভুটান। তাও দেশটির ‘ড্রাগন রাজারা’ তাদের একচ্ছত্র ক্ষমতা সমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর। পৃথিবীর প্রথম কার্বনমুক্ত দেশ ভুটানের জনসংখ্যা প্রায় আট লাখ। ভূখ ৩৮ হাজার ৩৬৪ বর্গকিলোমিটার। দেশটির রাষ্ট্রধর্ম বৌদ্ধ। এ ছাড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীও রয়েছে। ভারতের ওপর এখনও অতিমাত্রায় নির্ভরশীল ভুটান। দেশটিতে ভারতের সামরিক অবস্থানও রয়েছে। ভুটানের ওপর চীনের প্রভাব বাড়তে থাকায় তা নিয়ে ভারত বেশ চিন্তিত।