এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে কোনো ধরনের কোটা না রেখে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করেছে কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনায় সরকার গঠিত কমিটি। এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর মন্ত্রিসভায় তা উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেলেই আগামী মাসে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা পদ্ধতি বহাল থাকছে।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। কমিটির প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান। গতকালের বৈঠকে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন, ২০১৮’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
এদিকে কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনায় গঠিত কমিটির এ সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, শুধু সুপারিশ নয়, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। এ ব্যাপারে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। সরকারি চাকরিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি পদেও কোটা সংস্কার করতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা সরকারের কাছে মতামত দিয়ে বলেছেন, এটা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আদালতের রায় স্পর্শ করবে না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বর্তমানে সরকারি চাকরিতে বেতনের ক্ষেত্রে ২০টি গ্রেড রয়েছে। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্তরা নবম গ্রেডে বেতন পান। এই গ্রেডে নিয়োগপ্রাপ্তরা পদোন্নতি পেয়ে সপ্তম থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত উন্নীত হন। কার্যপরিধিতে না থাকায় ১৪ থেকে ২০তম গ্রেডে অর্থাৎ আগের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা নিয়ে কোনো সুপারিশ করেনি কমিটি।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।
সম্প্রতি সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞাপন দিয়েছে, তার ওপর এই সুপারিশের কোনো প্রভাব পড়বে কি-না জানতে চাইলে মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, সেখানে বলা হয়েছে, সরকার যদি কোটার বিষয়ে ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, সেক্ষেত্রে নতুনভাবে তা নির্ধারিত হবে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের কোটার বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এখন কোটা না থাকলেও তারা চলতে পারবে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ থেকে বাড়ানোর বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
এদিকে পদ্মার ভয়াল ভাঙনে আক্রান্ত নড়িয়াবাসীর পাশে না দাঁড়ানোয় সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের তিরস্কার করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রী ছাড়াও সরকারের দায়িত্বশীল সিনিয়র মন্ত্রীদের ভর্ৎসনা করেন তিনি।
দ্বিগুণ হচ্ছে এনসিটিবির সদস্য সংখ্যা :জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য সংখ্যা চার থেকে বাড়িয়ে আটজন করা হচ্ছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন, ২০১৮’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, এটা আগে ইংরেজিতে ছিল, দ্য ন্যাশনাল কারিকুলাম অ্যান্ড টেক্সটবুক বোর্ড অর্ডিন্যান্স-১৯৮৩। এটাকে বাংলায় রূপান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া অল্প কিছু পরিবর্তন হয়েছে।
তিনি বলেন, আগে ছিল টেক্সটবুক, এটাকে বাংলায় করা হয়েছে পাঠ্যপুস্তক। আগে বোর্ডের গঠন ছিল চেয়ারম্যান এবং চারজন সদস্য। এখন প্রস্তাব করা হয়েছে একজন চেয়ারম্যান এবং বিষয়ভিত্তিক আটজন সদস্য। নয় সদস্য মিলে বোর্ড গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, কোরাম পূরণের জন্য পাঁচজনের মধ্যে তিনজন উপস্থিত হলেই হতো, এখন প্রস্তাব করা হয়েছে, পাঁচজনের উপস্থিতিতে কোরাম হবে। বোর্ডের কাজে দুটি বিষয় সংযোজন করা হয়েছে, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য তাদের মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা। আরেকটি হচ্ছে- ডিজিটাল ও মিথষ্ফ্ক্রিয়া পুস্তক প্রণয়ন ও অনুমোদন। বোর্ড কার্যাবলি সম্পাদনের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক সময়ে প্রদত্ত অনুশাসন ও নির্দেশনার মাধ্যমে পরিচালনা হবে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ দ্বারা বোর্ড পরিচালিত হবে। বোর্ড প্রতি বছর ৩১ মার্চের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেবে। এ ছাড়াও ‘বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আইন, ২০১৮’ এর খসড়াও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বৈঠক শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের লোগো উন্মোচন করেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি ও মুক্তিযোদ্ধা এবিএম আব্দুস সামাদের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভায় শোক প্রকাশ করা হয় বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করবে ভারত :চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় পরিবহনের জন্য একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ জন্য ভারতের কাছ থেকে গ্যাট নীতিমালা অনুসারে শুল্ক্ক বা কর ছাড়া মাশুল ও পরিবহন খরচ আদায় করা হবে। সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলমান ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সুদীর্ঘ করার উদ্দেশ্যে’ ‘এগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফর্ম ইন্ডিয়া বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড ইন্ডিয়া’ খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরের জন্য চট্টগ্রাম ও মোংলা পোর্টে যোগাযোগের জন্য যে কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে, তার চুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখানে প্রভিশন রাখা হয়েছে নেপাল ও ভুটান ইচ্ছা প্রকাশ করলে যুক্ত হতে পারবে।
প্রস্তাবিত চুক্তিতে কয়েকটি রুটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে আগরতলা ভায়া আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া); চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে ডাউকি ভায়া তামাবিল (সিলেট); চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে সুতারকান্দি ভায়া শেওলা (সিলেট); চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে বিবিরবাজার ভায়া শ্রীমন্তপুর (কুমিল্লা)।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, চুক্তিটি পাঁচ বছরের জন্য সম্পাদিত হবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরও ৫ বছর বলবৎ থাকবে। তবে ৬ মাসের নোটিশে যে কোনো পক্ষ চুক্তিটি বাতিল করতে পারবে।