এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : পরিকল্পনা ছিল নিজেকে ঢাকার ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড’ ডন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে। অঢেল অর্থের মালিক হয়ে দুবাই গিয়ে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করবে। আর সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করবে আন্ডারওয়ার্ল্ড।
সেই লক্ষ্যে দু’বছর আগে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করে যশোরের ঝিকরগাছার ছেলে তানভীর হাসান। কক্সবাজার থেকে নিজেই ইয়াবা সংগ্রহ করত। সড়ক পথে নিয়ে আসত ঢাকায়। ইয়াবার একটি অংশ পাচার করত ভারতে। বিনিময়ে পেত আগ্নেয়াস্ত্র।
আর এ অস্ত্র সে বিক্রি করত সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে। গত দুই বছরে ২০-২৫টি অস্ত্র বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে বিক্রি করেছে। ঢাকাসহ আশপাশের চারটি জেলায় ইয়াবা ব্যবসার নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দিয়েছে সে। এই ব্যবসা নির্বিঘ্ন করতে সে ঢাকাকে উত্তর-দক্ষিণে দু’ভাগে ভাগ করেছিল। ঢাকা উত্তরের ইয়াবা ব্যবসা মনিটরিং করত নিজে। দক্ষিণের দায়িত্বে ছিল তার একান্ত সহযোগী ইসহাক আলী তপন।
গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছেন তানভীর হাসান ও তার সহযোগী ইসহাক আলী। ১৪ জুন মোহাম্মদপুর থেকে একটি বিদেশি পিস্তল এবং এক হাজার ৪০০ পিস ইয়াবাসহ তানভীরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর থেকেই ৩০০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয় ইসহাক আলীকে।
অভিযানের নেতৃত্বে থাকা মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মেসবাহ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, এ চক্রের আরও কয়েকজনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
পুলিশ জানায়, তানভীর হাসান যশোরের ঝিকরগাছার পায়রাডাঙ্গার আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে। পাঁচ বছর ধরে ঢাকায় কসমেটিকসের ব্যবসা কর। চোরাই পথে আসা কসমেটিকস সীমান্ত এলাকা থেকে সংগ্রহ করে ঢাকায় এনে বিক্রি করত সে। সীমান্ত এলাকায় বাড়ি হওয়ার কারণে আগে থেকেই পাচারকারী চক্রের সঙ্গে তানভীরের যোগাযোগ ছিল। দুই বছর ধরে সে পুরোপুরি ইয়াবা এবং অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়।
তানভীরেকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, কলকাতার ‘দাদাভাই’ নামে এক চোরকারবারির সঙ্গে তানভীরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তানভীরের মাধ্যমে সে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইয়াবা নিয়ে যায়।
এর বিনিময়ে তানভীরকে কোনো অর্থ পরিশোধ করেন না। পাঠিয়ে দেন অত্যাধুনিক মডেলের আগ্নেয়াস্ত্র। চোরাই পথে আসা কসমেটিকসের ব্যবসা করতে গিয়েই ওই দাদাভাইয়ের সঙ্গে তানভীরের পরিচয় হয়। মূলত চোরা কারবারিদের পরামর্শেই তানভীর ইয়াবা ব্যবসার প্রতি আগ্রহী হয়।
সে নিজে কক্সবাজারের টেকনাফে গিয়ে ইয়াবা কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। আলমাস নামে টেকনাফের এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করত তানভীর। এরপর সড়ক পথে যাত্রীবাহী বাসে করে ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে আসত।
পুলিশের ভাষ্য, তানভীর জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, দুই বছর ধরে তানভীর ভারতে ইয়াবা পাচার করছে। এর বিনিময়ে অন্তত ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র চোরাকারবারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে। এরমধ্যে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে ২০টির মতো আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করেছে। একটি তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তানভীর দাবি করেছে, অপরিচিত বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে সে অস্ত্র বিক্রি করেছে। তাদের মধ্যে একটি গ্রুপকে সে চেনে। এই গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় পেদা শামীম। গ্রুপটি মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, আদাবর এবং শেরেবাংলা নগর এলাকার মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন কন্ট্রাক্ট কিলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত।
ভারতীয় আন্ডারওয়ার্ল্ড সন্ত্রাসীদের মতো দুবাই গিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করার পরিকল্পনা ছিল তানভীরের। তানভীরের সহযোগী ইসহাক আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, তানভীর সীমান্ত এলাকা থেকে কসমেটিকস সংগ্রহ করে ঢাকার চকবাজারে বিক্রি করত।
অপরদিকে ইসহাক চকবাজারে চকলেট বিক্রি করত। সেখানেই তাদের পরিচয় হয়। ইসহাকের বাড়িও ঝিকরগাছায়। তানভীর ইয়াবা ব্যবসা শুরুর কিছুদিন পর ইসহাককে বিষয়টি জানায়। ইয়াবা ব্যবসায় রাতারাতি অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া যায় এমন আশ্বাসে ইসহাকও ওই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।
পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে সজল যুগান্তরকে বলেন, তানভীরের নেতৃত্বে ইয়াবার একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। চক্রটি শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, ভারতেও ইয়াবা পাচার করছে।
তানভীরকে গ্রেফতারের পর এ চক্রের বিষয়ে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য যাচাই-বাছাই করে চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।