এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলার রায় ঘোষণার জন্য ১০ই অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত। পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারের পাশে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে গতকাল মামলার সবশেষ ধাপ যুক্তিতর্কের শুনানি শেষ হয়। শুনানি নিয়ে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন রায়ের জন্য এদিন ধার্য করেন। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ দলের ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। তবে, তিনিসহ দলের প্রায় ৫শ’ নেতাকর্মী আহত হন। ভয়াবহ এই ঘটনার পর থেকেই বিচারের অপেক্ষায় ছিলেন নিহতদের স্বজন ও আহতরা।
ঘটনার ১৪ বছরের বেশি সময় পর এ মামলার বিচারের রায় হতে যাচ্ছে।
গতকাল বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরুর পর আসামিপক্ষের আইনজীবী এসএম শাহজাহান আদালতে আইনি পয়েন্টে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন। এর আগে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন। এ মামলায় কারাগারে থাকা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীসহ ২৩ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হকসহ জামিনে থাকা ৮ আসামির জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালতের বিচারক। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। গত বছরের ৩০শে মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহহার আকন্দকে জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলায় মোট ৫২ আসামির নাম থাকলেও অন্য মামলায় জামায়াতের সাবেক নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল বিপুলের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় মামলার আসামি সংখ্যা এখন ৪৯ জন।
এর মধ্যে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় ৩৮ জন আসামির নাম রয়েছে। যারা হত্যা মামলারও আসামি। আসামিদের মধ্যে ৮ জন জামিনে রয়েছেন, ১৮ জন পলাতক ও ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন। আইন অনুযায়ী পলাতকদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ সম্পন্ন হয়। গতকাল রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য হওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব শেষ করে দিতে এ হামলা হয়। তিনি জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী এসএএম শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। সন্দেহের ভিত্তিতে কাউকে সাজা দেয়া যায় না। সাজা দেয়ার মতো কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণও নেই।’
২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা দুই মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০১২ সালের মার্চে দ্বিতীয় দফায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরপর সাড়ে ছয় বছর ধরে বিচারকাজ চলেছে। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামি হিসেবে রয়েছেন, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, চারদলীয় জোট সরকারের তখনকার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক ভূমি উপ-মন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব হারিছ চৌধুরী।
এই মামলায় প্রথম দফা অভিযোগপত্রে ২২ জন আসামি থাকলেও অধিকতর তদন্তে বিএনপি নেতা তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আরো ৩০ জনকে আসামি করা হয়। ২০১২ সালের ১৮ই মার্চ দ্বিতীয় দফায় অভিযোগ গঠন করেন সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক। এর আগে ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নতুন করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১১ই জুন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অভিযোগপত্রে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপ-মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি নেতা মুফতি হান্নান (অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর)সহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর মামলার অধিকতর তদন্ত শুরুর উদ্যোগ নেয়া হয়। তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ২রা জুলাই সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন। এতে বিএনপি নেতা তারেক রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ ৩০ জনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।