এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : নির্বাচন সামনে রেখে ‘যুক্তফ্রন্ট’ ও ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার’ সমাবেশের আগের দিন অনেকটা গোপনীয়তার মধ্যে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে সোয়া এক ঘণ্টা বৈঠক করলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিন বিএনপি নেতা।
ঢাকার মহানগর নাট্যমঞ্চে আজ বিকালে ‘যুক্তফ্রন্ট’ ও ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার’ সমাবেশেও বিএনপি নেতাদের দেখা যেতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে দলটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতার কথায়।
সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বলয়ের বাইরের দলগুলোকে নিয়ে ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গঠনের যে চেষ্টা গত কিছুদিন ধরে চলছে, তা আজ একটি আকার পেতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য আর আ স ম রবের জেএসডি মিলে গতবছরের শেষ দিকে নতুন জোট ‘যুক্ত ফ্রন্ট’ গঠনের ঘোষণা আসে।
এরপর গত অগাস্টের শেষে ড. কামাল হোসেনের গণফোরামকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা আসে যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে।
এ দিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বেশ কিছুদিন ধরে সরকারবিরোধী একটি ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গড়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
আর সেই ঐক্যের জন্য এক সময়ের বিএনপি নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী অথবা নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগ ছেড়ে আসা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব মেনে নিতে বিএনপি রাজি আছে- এমন কথাও সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই শুক্রবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বারিধারার বাসায় যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য মওদুদ আহমদ ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান ও যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন ওই বৈঠকে। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ওই বাসা থেকে বিএনপি নেতাদের গাড়ি বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।
এর মধ্যে মাহি বি চৌধুরী বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলেও বৈঠক নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
বিএনপি নেতারা আলাদা গাড়িতে এলেও বৈঠক শেষে কালো একটি মাইক্রোবাসে করে তাদের একসঙ্গে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করতে গেলে বাসভবনের নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দেন। মির্জা ফখরুল নিজের গাড়ি না এনে অন্য একটি গাড়িতে করে এই বৈঠকে যোগ দিতে আসেন।
বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফখরুলরা রাতে ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার’ আরও কয়েকজনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বলে গুঞ্জন শোনা গেলেও বিএনপির কেউ এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।
কামালের দল গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, শনিবার বিকাল ৩টায় তাদের সমাবেশ শুরু হবে। ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে যুক্তফ্রন্টের আহ্বায়ক বদরুদ্দোজা চৌধুরী তাতে প্রধন অতিথি থাকবেন।
“বিএনপিসহ কয়েকটি দলকে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও পেশাজীবীদেরও বলা হয়েছে। আশা করছি তারা সবাই আসবেন।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার’ সমাবেশে তাদের অংশ নেওয়ার বিষয়টি ‘মোটামুটি নিশ্চিত’। তবে কারা যাবেন, কি বক্তব্য নিয়ে যাবেন- সে বিষয়ে দলের পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
এর আগে জেএসডির আ স ম আব্দুর রব, গণফোরামের সু্ব্রত চৌধুরী ও মাহমুদুর রহমান মান্না বৃহস্পতিবার দুপুরে বদরুদ্দোজার বাসায় যান। সেখানে সুব্রত চৌধুরীর ফোনে কামাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন বদরুদ্দোজা।
বিকল্পধারার সভাপতি বদরুদ্দোজার প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “শনিবার জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার যে সমাবেশ আছে, তাতে আমাদের প্রেসিডেন্ট প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।”
‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার’ ৫ দফা
>> একাদশ সংসদ নির্বাচনে সকলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা এবং নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়া।
>> আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা ইসির উপর ন্যস্ত করা।
>> নির্বাচনের এক মাস আগে এবং নির্বাচনের পর ১০ দিন পর্যন্ত মোট ৪০ দিন ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন।
>> কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রছাত্রীসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আনা মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তি এবং এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার না করা।
>> নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ গণমুখী করে সংশোধন।
কামাল- বদরুদ্দোজার জোট গঠনকে বিএনপি শুরু থেকেই স্বাগত জানিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বড় রাজনৈতিক ঐক্য গড়তে বিএনপি ‘ছাড় দিতেও প্রস্তুত’ বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও শরিকরা এই জোটের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রকাশ করে আসছে সন্দেহ। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ‘জাতীয় ঐক্যের’ পাঁচ দফাকে বিএনপি-জামায়াতের অবস্থানের ‘ফটোকপি’ বলেছেন।
আর কামাল হোসেনের সঙ্গে বি চৌধুরীর ঐক্যবদ্ধ হওয়াকে ‘স্বাগত’ জানিয়েই তাদের ‘অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছা’ নিয়ে টিপ্পনী কেটেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন এই জোটকে তিনি বর্ণনা করেছেন ‘আওয়ামী লীগবিরোধীদের’ এক জায়গায় আসার চেষ্টা হিসেবে। সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।