এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ইরানের আহভাজ শহরে বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর এক সামরিক কুচকাওয়াজে বন্দুক হামলা চালানো হয়েছে। দুর্বৃত্তদের নির্বিচার গুলিতে কমপক্ষে ২৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৫৩ জন। নিহতদের মধ্যে বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সদস্য ও দর্শনার্থী নারী ও শিশু রয়েছেন। প্রথম প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত ‘একটি বিদেশি সরকার’ হামলায় জড়িত বলে অভিযোগ উঠলেও পরবর্তীতে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। শিগগিরই আইএসের এই হামালার কঠর জবাব দেওয়া হবে বলে জানায় তেহরান। খবর আলজাজিরার।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, শনিবার ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় খুজেস্তান প্রদেশের আহভাজ শহরে সামরিক প্যারেডের ওপর এ হামলা চালায় অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা। ইরাক যুদ্ধের (১৯৮০-৮৮) বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ওই কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়েছিল। হামলাকারীরা প্যারেড প্রাঙ্গণে ঢুকতে না পেরে দূর থেকে গুলি চালায়। হামলাকারীরা বেসামরিকদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের পর মঞ্চে থাকা সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। পাল্টা হামলা চালায় সরকারি বাহিনী। খুজেস্তানের ডেপুটি গভর্নর আলি হোসেইন হোসেইনজাদেহ জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনী দুই বন্দুকধারীকে হত্যা করেছে এবং অপর দু’জনকে গ্রেফতার করেছে।
আহভাজ তেলসমৃদ্ধ প্রদেশ খুজেস্তানের রাজধানী। অতীতে প্রদেশটির পাইপলাইন লক্ষ্য করে বেশ কিছু হামলা চালিয়েছে আরব বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। হামলার পেছনে ‘একটি বিদেশি সরকারের’ সমর্থিত ‘সন্ত্রাসীরা’ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, ওই সরকার সন্ত্রাসীদের অস্ত্র দিয়ে লালন-পালন করছে। ইরান আঞ্চলিক সন্ত্রাসের সমর্থকদের ও তাদের প্রভু যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী বলে ধরে নিয়েছে। এভাবে ইরানিদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার জন্য শিগগরিই সমুচিত জবাব দেবে তেহরান।’
দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও কর্মকর্তারা হামলার জন্য সুন্নি জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস বা আরব জাতীয়তাবাদীদের দায়ী করেছে। তেহরানভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক মোস্তফা কোশেম আলজাজিরাকে বলেছেন, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কিত আল-আহওয়াজ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা হামলাটি চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন ইরানের ইসলামিক রেভলুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রামাজান শরিফ।
কোশেম বলেন, গোষ্ঠীটি গত কয়েক বছর ধরে সক্রিয় রয়েছে। তারা তেলসমৃদ্ধ খুজেস্তানকে ইরান থেকে পৃথক করার লক্ষ্যে হামলা চালাচ্ছে। ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনও এটাই করতে চেয়েছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, গোষ্ঠীটি নিজেদেরকে আরব জাতীয়তাবাদী বলে পরিচয় দেয়। তবে আমরা জানি, মুজাহিদিন-ই-খালক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের গভীর যোগাযোগ রয়েছে। বহু ইরানি নাগরিক ও সরকারি কর্মকর্তা হত্যার কারণে গোষ্ঠীটিকে ওই অঞ্চল থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়।
সাদ্দামের পরিণতি হবে ট্রাম্পের : রুহানি
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, আমার দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়ালে সাদ্দাম হোসেনের মতো পরিণতি ভোগ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ইরান-ইরাক যুদ্ধের দিকে ইঙ্গিত করে এই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখেও মিসাইল বানানো অব্যাহত রাখবে তেহরান। খবর আলজাজিরার।
ইরান-ইরাক যুদ্ধের বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত জাতীয় প্রতিরক্ষা সপ্তাহে শনিবার তেহরানে সামরিক বাহিনীর প্যারেড ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। রুহানি বলেন, ট্রাম্পেরও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রকে সাদ্দাম হোসেনের ভাগ্য বরণ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখেও মিসাইলের মতো প্রতিরক্ষা অস্ত্র তৈরি করা বন্ধ করবে না ইরান।
ইরানি প্রেসিডেন্ট এমন এক সময় এ মন্তব্য করলেন যখন একদিন আগেই দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ ট্রাম্প প্রশাসনকে শান্তির জন্য ‘আসল হুমকি’ বলে উল্লেখ করেছেন। শুক্রবার রাতে এক টুইটার বার্তায় তিনি লিখেন, আমাদের অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি সত্যিকারের হুমকি রয়েছে। সেটি হচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দুর্বৃত্ত সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বকে অস্থিতিশীল করাকে অধিকার মনে করা।
ইরানের শীর্ষ এই কূটনীতিক আরও লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই স্বাভাবিক রাষ্ট্রের মতো আচরণ করতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর তেহরান-ওয়াশিংটন সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়। তবে ইরানের ওপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এই সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটেছে।