এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ইরানে সামরিক কুচকাওয়াজে হামলা চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ‘যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট’ পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোকে দায়ী করেছে ইরান। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এ ঘটনার কড়া প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়েছেন।
রোববার তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের দোসর ‘পুতুল’ রাষ্ট্রগুলো সামরিক কুচকাওয়াজে হামলা চালিয়েছে। হামলার নেপথ্য নায়ক সম্পর্কে আরও পরিষ্কার মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ।
রোববার এক টুইটে তিনি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মাস্টার প্লানেই ইরান হামলা চালিয়েছে তার মিত্র রাষ্ট্রগুলো।
পাশাপাশি, আর্থিক সহায়তার অভিযোগে তেহরানে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
শনিবার ইরাক যুদ্ধের (১৯৮০-৮৮) বর্ষপূর্তি উপলক্ষে খুজেস্তান প্রদেশের আহভাজ শহরে ওই কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। একপর্যায়ে এলোপাতাড়ি গুলি হামলায় ২৯ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে এক শিশুসহ ইরানের অভিজাত বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর ১২ সদস্যও রয়েছে।
ইরানের সরকারবিরোধী আরব গোষ্ঠী আহভাজ ন্যাশনাল রেজিসট্যান্স ও জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) উভয়ই হামলার দায় স্বীকার করে। তবে কোনো গোষ্ঠীই তাদের দাবির সপক্ষে প্রমাণ দাখিল করেনি।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পুতুল রাষ্ট্রগুলো বহুদিন ধরে ইরানে হামলার পরিকল্পনা করে আসছে। তাদের উদ্দেশ্য ইরানে নিরাপত্তাহীনতা তৈরির চেষ্টা করা।’ বিবিসি জানিয়েছে, বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী খামেনির কমান্ডের অধীন। হামলার পেছনে আঞ্চলিক যে দেশগুলো আছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন তাদের নাম নেননি খামেনি।
প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেন, ‘ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এখন প্রক্সি নয়, সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। অতীতের মতো এবারও তারা হতাশ হবে। শত্র“রা পরাজিত হবে।’ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ হামলার জন্য ‘বিদেশি সরকারের অর্থপুষ্ট সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, এ হামলার জন্য ইরান সন্ত্রাসের আঞ্চলিক জামিনদার ও তাদের মার্কিন প্রভুদেরকে দায়ী বলে ধরে নিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইএএনএ জানিয়েছে, ইরানবিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ এনে যুক্তরাজ্য, হল্যান্ড ও ডেনমার্ক থেকে নিজেদের কূটনীতিকদের ডেকে পাঠিয়েছে তেহরান।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ রোববার এক টুইটার বার্তায় বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এ হামলার মূল হোতা। মার্কিন মাস্টার প্লানেই তাদের আঞ্চলিক মিত্ররা দুঃসাহসিক এ হামলাটি বাস্তবায়ন করেছে। জঙ্গিদের নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও অর্থ সহায়তা সবই বিদেশি রাষ্ট্র থেকে পরিশোধ করা হয়েছে।’
আহভাজে হামলার আগে থেকেই ইরানের সংখ্যালঘু আরবদের বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতায় মদদ দেয়ার জন্য আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবকে অভিযুক্ত করে আসছিল ইরান।
ইরানের সরকার ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা হামলার জন্য পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের দিকে আঙুল তুলেছে। এই দেশগুলোর সবার সঙ্গেই দীর্ঘদিন ধরে ইরানের উত্তেজনা চলছে। বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর এক মুখপাত্র দাবি করেন, হামলাকারীদের ‘প্রশিক্ষণ ও সংগঠিত করেছে উপসাগরীয় দুটি দেশ’ এবং এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সংযোগ আছে।