এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করবেন- এমন ধারণাই বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা পোষণ করছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিদের বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফ করতে গিয়ে পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘গ্লোবাল রিডিং হলো, প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনের পর তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠন করবেন।’
স্থানীয় সময় বুধবার রাতে নিউইয়র্কস্থ হোটেল গ্রান্ড হায়াতে অনুষ্ঠিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী এদিন জাতিসংঘ সদর দফতরের দ্বিপক্ষীয় সভাকক্ষে পৃথকভাবে এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্রেস্টি কালিজুলেইদ, ইউএন হাইকমিশনার ফর রিফ্যুজিস (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্দি, ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনেরিয়েটা ফোর, মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিন শ্যার্নার বার্গেনার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি ফেডেরিকা মঘেরনিনির সঙ্গে বৈঠক করেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দিত করে বৈঠকে তারা বলেন, আমরা আবারও আপনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমাদের মাঝে পাব।’
শহীদুল হক বলেন, ‘তার (শেখ হাসিনা) সময়ে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ভূমিকা, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ঐক্য-সংহতির কথা বিবেচনা করেই বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান এবং আর্ন্তজাতিক সংস্থাগুলো এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আশাবাদ ব্যক্ত করে যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন উভয়ই একযোগে চলবে। তারা আগামীতেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে শেখ হাসিনার সঙ্গে পুনরায় দেখা হওয়ার আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন। তারা আরও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, গণতন্ত্রের পথে যে যাত্রা প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে শুরু করেছেন তা অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক হবে এবং দেশে বিদ্যমান গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।’
পররাষ্ট্র সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে বিদ্যমান রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমস্যা তুলে ধরে মিয়ানমার যাতে তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে দ্রুততার সঙ্গে ফেরত নেয় সেজন্য তাদের প্রতি চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান বাংলাদেশের হাতে নেই, বরং মিয়ানমার সরকারকেই এ সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে হবে এবং তাদের নিজস্ব অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শেখ হাসিনা আরও জানিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না রোহিঙ্গারা নিজের মাতৃভূমিতে ফেরত যাচ্ছে সেই সময়টায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য নিয়ে তাদের দেখোশোনা করবে। প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে তার সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সাক্ষাৎকালে মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্যার্নার বার্গেনার প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন, তিনি (বার্গেনার) রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানকল্পে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার দুটি দেশই সফর করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে নিজ মাতৃভূমিতে ফেরত যেতে পারে সেজন্য রাখাইন রাজ্যে একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য তিনি মিয়ানমারকে বোঝাতে সক্ষম হবেন। এ সমস্যার সমাধানে তিনি পুনরায় বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলেও জানান।
বার্গেনার বলেন, গত বছর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে মিয়ানমার বিষয়ে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব করে তার একটি ছিল মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতের অন্তর্ভুক্তি। আর ওই পদে তার নিযুক্তির মাধ্যমেই সেই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব জানান, রাষ্ট্রপ্রধান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক অগ্রগতিরও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এটা কি করে সম্ভব হল এ বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জানতে চান। তারা এ বছরে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেরে বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এটি বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৬টি ফাইল ছাড় : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্ক থেকে এ পর্যন্ত ১৬টি জরুরি ফাইল ছাড় করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিউইয়র্কে কর্মব্যস্ততা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী ডিজিটালি তার কার্যালয় চালাচ্ছেন এবং নিয়মিত ফাইল ছাড় করছেন।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক পৌঁছার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রনিক ফাইল (ই-ফাইল) ছাড় করেছেন।
রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে চাপ সৃষ্টি করুন : রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য মুসলিম উম্মার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদর দফতরে রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিষয়ে ওআইসি কন্টাক্ট গ্রুপের সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। সৌদি আরবের স্থায়ী মিশন ও ওআইসি সচিবালয় যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সভায় ওআইসির মহাসচিব ড. ইউসেফ আল ওথেইমিন বক্তৃতা করেন।
রোহিঙ্গাদের টেকসই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমারের ওপর চাপ বৃদ্ধির প্রচারণায় নেতৃত্ব দেয়ার জন্য মুসলিম উম্মার প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সরকার নৈতিক এবং মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করেছে। এ কারণে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি দীর্ঘায়িত হতে পারে না। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা এই সমস্যা শুরু থেকেই সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে আসছি। তবে তাদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি না। এ সমস্যা সমাধানে শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কোনো সুফল বয়ে আনবে না। এজন্য অন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রয়োজন। কেবল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার তার অবস্থানের পরিবর্তন করতে পারে। এ বিষয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে ওআইসি’র প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ওআইসি সদস্য দেশগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে সারা বিশ্বে মুসলমানরা কেন এভাবে নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মুসলমানরা কেন একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। যদি কোনো সমস্যা থেকেই থাকে, তবে তা দ্বিপাক্ষিক অথবা আঞ্চলিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নৃশংসতার জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ বৃদ্ধির প্রচারণার নেতৃত্ব দেয়ার জন্য মুসলিম উম্মার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, সর্বোপরি স্বল্পতম সময়ে আমাদের এ সমস্যার সমাধান করা আবশ্যক। তিনি জানান, তিনি গৃহহীন ও নিরাশ রোহিঙ্গাদের জন্য এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে সেপ্টেম্বরে পাঁচ দফা কর্মপরিকল্পনার প্রস্তাব করেছেন। তিনি বলেন, পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এখনও শুরুই হয়নি। এ বছর কিছু সুস্পষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ওআইসি সদস্য দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, জবাবদিহিতার বিষয় নিশ্চিতে ওআইসির মন্ত্রী পর্যায়ের অ্যাডহক কমিটি গঠনের জন্য আমরা সাধুবাদ জানিয়েছি। অবশ্য এখন পর্যন্ত এই প্রস্তাব কার্যকর করতে যথেষ্ট বাস্তবসম্মত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়নি।