এশিয়ান বাংলা স্পোর্টস: সবকিছুরই একটা শুরু ও শেষ থাকে। তীরে এসে তরী ডোবার সুদীর্ঘ ইতিহাস যতই চোখ রাঙাক, নতুন ভোরের আশায় তাই বুক বাঁধাই যায়। এবার শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে যেভাবে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ, তাতে আরেকটি মানসিক বাধার দেয়াল গুঁড়িয়ে বহু আরাধ্য শিরোপা উৎসবের রঙিন ছবির প্রত্যাশাটা কোনোভাবেই বাড়াবাড়ি নয়।
অতীতে হয়নি বলে এবারও হবে না, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে অসম্ভব বলে কিছু নেই। শিরোপা নামের সোনার হরিণ শিকারের কঠিনতম চ্যালেঞ্জ নিয়ে আজ দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে রেকর্ড ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
মঞ্চটা বাংলাদেশের জন্য নতুন নয়। এশিয়া কাপের সর্বশেষ চার আসরে এটি টাইগারদের তৃতীয় ফাইনাল। অস্বস্তির ব্যাপার হল, নিজেদের আঙিনায় আগের দুটি ফাইনালে বাংলাদেশকে পুড়তে হয়েছি স্বপ্নভঙ্গের বেদনায়। ২০১২ আসরের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে দুই রানের সেই অশ্রুভেজা হার আজও পোড়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের।
চার বছর পর গত আসরের (২০১৬) ফাইনালে উঠেও মোছা যায়নি সেই কান্নার দাগ। সেবার টি ২০ সংস্করণের ফাইনালে ভারতের কাছে হারতে হয়েছিল আট উইকেটে। শুধু এশিয়া কাপ নয়, দ্বিপাক্ষিক সিরিজের বাইরে কখনও কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শিরোপা তাই অধরাই রয়ে গেছে। এ বছরই শ্রীলংকায় ত্রিদেশীয় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ভারতের কাছে হারতে হয়েছিল শেষ বলে। সবমিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগের আটটি নকআউট ম্যাচের প্রতিটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। যার চারটি ভারতের বিপক্ষে। এবার পুরনো সব হিসাব মিটিয়ে, অতীতের সব আক্ষেপ ঘুচিয়ে নতুন ইতিহাস লেখার হাতছানি মাশরাফিদের সামনে।
শক্তিতে ভারত এগিয়ে থাকলেও মানসিকভাবে দারুণ উজ্জীবিত বাংলাদেশ। অলিখিত সেমিফাইনালে রূপ নেয়া সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে ৩৭ রানে হারিয়ে মাশরাফিরা বুঝিয়ে দিয়েছেন কোনো বাধাই এখন অনতিক্রম্য নয় বাংলাদেশের জন্য। আরেকটি ইতিবাচক দিক হল, ফাইনালের আগেই এবার মুদ্রার সব পিঠ দেখে ফেলেছে বাংলাদেশ। শ্রীলংকাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে উড়ন্ত শুরুর পর আফগানিস্তান ও ভারতের কাছে টানা দুটি শোচনীয় হারে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও ধ্বংসস্তূপ থেকে ঠিকই ফিনিক্স পাখির মতো আবার ডানা মেলে বাংলাদেশ। টানা দুটি বাঁচা-মরার ম্যাচে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে হারিয়ে পা রাখে ফাইনালে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভীষণ অসহনীয় কন্ডিশনে টপঅর্ডারের ব্যাটিং ব্যর্থতা ও চোটের ছোবলও দমাতে পারেনি টাইগারদের। উদ্বোধনী ম্যাচে তামিম ইকবাল ও সুপার ফোরের শেষ ম্যাচের আগে সাকিব আল হাসানকে হারানোর প্রবল ধাক্কাও টলাতে পারেনি বাংলাদেশকে। দেশকে উৎসবের একটি উপলক্ষ এনে দিতে চোট নিয়েই আজ মরুর বুকে শিরোপা-যুদ্ধে নামবেন অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা ও দলের ব্যাটিং ভরসা মুশফিকুর রহিম।
বোলিংয়ে মোস্তাফিজুর রহমান ও ব্যাটিংয়ে মুশফিকের আগুনে ফর্ম বাড়িয়ে দিয়েছে প্রত্যাশা। তবে নড়বড়ে টপঅর্ডার জাগাচ্ছে শঙ্কা। পাঁচ ম্যাচে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটির সম্মিলিত রান ৫২। যেখানে পাঁচ ম্যাচে ওপেনিং জুটি থেকে ভারত পেয়েছে ৫১২ রান। ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ানই বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।
তীরে এসে তরী ডোবার ধারায় ছেদ টানতে আকাঙ্ক্ষা ও নিবেদনে কোনো কমতি না থাকলেও বাড়তি চাপ এড়াতে কাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে প্রত্যাশার পারদ চড়াতে চাইলেন না অধিনায়ক মাশরাফি, ‘বাংলাদেশের জন্য একটা ট্রফি দরকার।
আমার বিশ্বাস, একদিন বাংলাদেশ ঠিকই পারবে। এই জন্য বললাম কারণ, তরুণ প্রজন্মের যারা ক্রিকেটে আসছে, যারা এখন দলে আছে, যারা বয়সভিত্তিক দলে খেলছে, তারা হয়তো আরও উজ্জীবিত হবে। এই ক্ষেত্রে হয়তো বলতে পারেন, বাংলাদেশের একটা ট্রফি দরকার। সেটা এখনই বা কাল না হলেও সমস্যা নেই।’